০৯ আগস্ট ২০২৪, ১৪:৫১

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামনে ৫ চ্যালেঞ্জ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান  © টিডিসি ফটো

গণবিক্ষোভে রূপ নেওয়া ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে একটি কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করা হয়েছে। তবে দেশটির জন্য সামনের দিনগুলো সহজ হবে না। বিশ্লেষকেরা বলছেননতুন যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হবে, তাকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। গতকাল বৃহস্পতিবার নতুন যে সরকার গঠিত হয়েছে, তার নেতৃত্বে রয়েছেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী ৮৪ বছর বয়সী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অন্তর্বর্তী সরকারকে মূলত পাঁচটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। 

সেনাবাহিনী
অন্তর্বর্তী সরকার পরিচালিত হবে বেসামরিক নেতৃত্বে। তবে এই সরকারে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ কতটা থাকবে, সেটি এখনো স্পষ্ট নয়। ওয়াশিংটনভিত্তিক চিন্তন প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যানের মতে, আনুষ্ঠানিকভাবে না থাকলেও এই সরকারে সামরিক নেতৃত্বের বড় প্রভাব থাকবে।

মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, বাংলাদেশের অনেকে আশঙ্কা করছেন, যদি অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ দীর্ঘ হয়, তাহলে তাতে সরকারে নিজেদের কর্তৃত্ব পাকাপোক্ত করার সুযোগ পাবে সেনাবাহিনী। তবে এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, সেনাবাহিনী সরকারে সক্রিয় ভূমিকা ও রাজনীতির কেন্দ্রে থাকার বিষয়ে অতটা আগ্রহী নয়, যেমনটা কয়েক দশক আগেও দেখা গিয়েছিল।

আরও পড়ুন: জন্ম-বেড়ে ওঠা, শিক্ষকতা, নোবেল জয়— ড. ইউনূসের বর্ণিল জীবন

কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা আন্দোলনে চার শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর তার মিত্রদের ওপর প্রতিশোধমূলক হামলা হচ্ছে। সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ জানাচ্ছে মানবাধিকার গোষ্ঠী ও কূটনীতিকেরা।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের স্মৃতি সিংহ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম কাজ হবে জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বাকস্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের পথ তৈরি করে দেওয়া। একই সঙ্গে নতুন করে যাতে আর কোনো সহিংসতার ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে নতুন সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ।

আরও পড়ুন: ভারতকে যে চরম উভয় সঙ্কটে ফেলেছে শেখ হাসিনা

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও অধ্যাপক আলী রীয়াজের মতে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে সরকারকে সহযোগিতা করে, তাহলে পরিস্থিতি দ্রুত শান্ত হয়ে আসবে।

অর্থনীতি
২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশের গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ শতাংশের বেশি। ২০২১ সালে মাথাপিছু আয়ে ভারতকেও ছাড়িয়ে যায় বাংলাদেশ; কিন্তু এর পরও দেশটিতে অর্থনৈতিক বৈষম্য বেড়েছে। কারণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সবাই সমানভাবে পাননি। 

সাম্প্রতিক অস্থিরতা দেশটির পোশাক খাতকে বড় একটি নাড়া দিয়েছে। সহিংসতার সময় পোশাক কারখানাগুলো বন্ধ ছিল। বাংলাদেশে পোশাক কারখানা আছে সাড়ে তিন হাজার। দেশটির বার্ষিক সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি ডলারের রপ্তানির মধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশই আসে পোশাক রপ্তানি থেকে। 

আরও পড়ুন: শেখ হাসিনা যেভাবে ভারতে—পার্লামেন্টকে জানালেন জয়শঙ্কর

বিশ্বের শীর্ষ খুচরা পোশাক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক অস্থিরতার মধ্যে মার্কিন প্রতিষ্ঠান হুলা গ্লোবাল জানিয়েছে, কিছু ক্রয়াদেশ বাংলাদেশের বদলে অন্য দেশে দিয়েছে তারা।

নির্বাচন
গত জানুয়ারির যে নির্বাচনে শেখ হাসিনা পঞ্চম মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হন, সেই নির্বাচন ছিল বেশির ভাগ মানুষের কাছে অগ্রহণযোগ্য। প্রধান বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বর্জন করেছিল।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক টমাস কিনের মতে, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ যে ব্যাপক জনসমর্থন পেয়েছিল, তার একটি বড় কারণ এটি। কারণ গত ১৫ বছরে দেশটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক কোনো নির্বাচন হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফেরানোর জন্য দীর্ঘমেয়াদে কাজ শুরু করা প্রয়োজন। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশটিতে গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে।

আরও পড়ুন: কী হয়েছিল শেষ মুহূর্তে, যে পরিস্থিতিতে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা

এ প্রসঙ্গে মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ কত দিন হবে, কবে নির্বাচন হবে এবং নির্বাচনে কারা অংশ নিতে পারবেন, সেসব সম্পর্কে এখনো কিছুই জানা যাচ্ছে না।

ন্যায়বিচার:
বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন হবে, সেটি নির্ভর করছে আন্দোলন দমনে ব্যর্থ পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ওপর। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে পুলিশপ্রধান এবং একজন শীর্ষস্থানীয় সেনা কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বিক্ষোভের সময় গ্রেপ্তার ছাত্র–জনতা ছাড়াও রাজনৈতিক বন্দীদেরও ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন: শেখ হাসিনা: গণতন্ত্রের আইকন যেভাবে একনায়ক

বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইসের মতে, অন্তর্বর্তী সরকার নতুন করে কাজ শুরু করবে বলে আশা করছি এবং নতুন একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা তৈরি হবে। যেই ব্যবস্থার ওপর আস্থা থাকবে মানুষের। একই সঙ্গে সরকার জনগণকে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে।

ক্রাইসিস গ্রুপের টমাস কিন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনাগুলোর বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত ও যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার মতো দায়িত্ব নিতে হবে নতুন সরকারকে।