শিক্ষাক্রম পরিবর্তন, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও বেতনবৃদ্ধিসহ শিক্ষায় যত সংস্কার চান জনগণ

ক্যাম্পাসে রাজনীতি বন্ধ এবং নিয়মতান্ত্রিক আবাসনের আকাঙ্ক্ষা অনেকের

কোটা সংস্কার আন্দোলন
কোটা সংস্কার আন্দোলন  © সম্পাদিত

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার সংষ্কার এবং পরে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে সফল আন্দোলন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তাদের তীব্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছে। অবশ্য এর আগে ও পরে প্রাণ গেছে শতশত মানুষের। এত জীবনের বিনিময়ে এ আন্দোলনের লক্ষ্য অর্জন এবং নতুন অন্তর্বর্তী সরকার গঠণের পর এখন শিক্ষাসহ রাষ্ট্রের সবক্ষেত্রে  সংস্কারের দাবি উঠছে। 

অনেকের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতায় থাকার ১৫ বছরে বিভিন্ন খাতে সীমাহীন অনিয়ম দুর্নীতির কারণে পুরো ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এসব খাত সংস্কার করার দাবি তুলেছেন মানুষ। এরমধ্যে মানুষ সবচেয়ে বেশি সংস্কার চাইছেন শিক্ষাব্যবস্থায়। তারা বলছেন, প্রচলিত কারিকুলাম বা শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করে যুগোপযোগী করতে হবে। এ ছাড়া ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ, পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন, কোচিং বন্ধসহ নানা ক্ষেত্রে সংস্কারের দাবি উঠেছে। 

তীব্র আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পাঠকদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। চারটি অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ‘স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান কোন নিয়ম, রীতি ও চর্চা শিক্ষা, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করেন? কোনগুলোর পরিবর্তন চান?’ এর জবাবে তারা নানা ধরনের মতামত তুলে ধরেছেন।

কারিকুলাম ও পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন চান বড় একটি অংশ
পাঠকদের বড় একটি অংশ কারিকুলাম ও পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন চান। পাঠক ইউসুফ হাওলাদারের মতে, শপথ বাক্য, পুরো শিক্ষা ও পরীক্ষা পদ্ধতি, কারিকুলাম এবং এসএসসি থেকে পরীক্ষা থাকবে মূল পরীক্ষা। যে পাস করার যোগ্য তাকে উঠানো হবে। কোনও বিষয় না পড়াশোনা করালে তাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। যারা পাস করতে পারবে না, তাদের পাস করানোর কোন প্রয়োজন নেই। রেহানা পারভিনও চান কারিকুলামের পরিবর্তন।

শাহ মোহাম্মদ নোমান ও জামাল পুরোনো কারিকুলাম চালুর পক্ষে। শিক্ষাখাতে বাজেট বাড়ানোর দাবি মো. শিবলুর। ইমন জাভেদ ইসলাম লিখেছেন, যেসব পড়ে আসলেই ফল পাওয়া যায় না, তাতে কারো পড়তেও মন বসবে না। স্বৈরাচার সরকারের মতোই স্কুল-কলেজে ইচ্ছামত ফিস নেওয়া হয়। বই সংস্কার প্রয়োজন আগে এবং যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। যেগুলা আছে, বেশিরভাগ মেরুদন্ডহীন। পুরো সিস্টেম পরিবর্তন না করে আগেরমতো কন্টিনিউ করাটা ঠিক হবে না। 

মরিয়ম মিমের মত, পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাই পরিবর্তন করা হোক। দেশের যত গুণীজন আছে সবার থেকে পরামর্শ নিয়ে একটা নতুন এবং কার্যকরী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা হোক। আগের যেগুলো ভালো আছে সেগুলো থাকুক এবং প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন সংযুক্ত করা হোক। দেশে এখন অনেক গুণী এবং বুদ্ধিমান মানুষ আছে। তাদের বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে সব কিছুকেই নতুন করা উচিত। 

কানিজ ফাতেমার কথা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের পরীক্ষার খাতায় শিক্ষার্থীদের নাম, রোল নাম্বার বা স্টুডেন্ট আইডি নাম্বারের জায়গায় কোডের মাধ্যমে নাম্বারিং করতে হবে। কিছু কিছু শিক্ষকরা মার্কিংয়ের ক্ষেত্রে পছন্দের বিশেষ শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য দেয়। সাদিক আহমেদের মত, আর্ন্তজাতিক কারিকুলামের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কাজে পারদর্শী করে গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি একটা টিম গঠন করে বিদেশে পাঠাতে হবে। উন্নত দেশগুলোর শিক্ষা ব্যবস্থা দেশে চালু করতে হবে। 

শরিফুল ইসলাম অপু চান, পরীক্ষার ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করতে সকল বোর্ডে একই প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়া হোক। এতে প্রত্যেক শিক্ষার্থী সমান অধিকার পাবে এবং কোনো বোর্ডের প্রশ্নের প্রতি অন্য কোনো বোর্ড কোনো বিদ্রুপ মন্তব্য করতে পারবে না। বিশেষ করে শিক্ষা ক্ষেত্রে এতে সমতা থাকবে।

রাজনীতি ও র‌্যাগিংয়ের  বিপক্ষে মানুষ, দাবি ছাত্র সংসদের
মতামত জানানো শত শত পাঠক ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতির বিপক্ষে মতামত দিয়েছেন। মাসুম জাফরের ভাষ্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সব ধরনের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ফারজানা হকের মতে, অনলাইন ক্লাস, ইন্টারনেট ভিত্তিক পড়াশোনা, সেশনজট মুক্ত করা ও ছাত্র রাজনীতি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করতে হবে। কারিগরী শিক্ষার প্রতি নজর দিতে হবে।

আরিফুর রহমান রাব্বি ছাত্ররাজনীতি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে বলেছেন, ছাত্র সংসদগুলোর নির্বাচন দিতে হবে। শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। শিক্ষাঙ্গন সম্পূর্ণ রাজনীতিমুক্ত রাখতে হবে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় গুরুত্ব দিতে হবে। যোগ্য, মেধাবী শিক্ষকদের নিয়োগ দিতে হবে। র‌্যাগিং বন্ধ করতে হবে। গবেষণামূলক শিক্ষা প্রবর্তন করতে হবে।

শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ, নতুন শিক্ষা কারিকুলাম পরিবর্তন, ছাত্ররাজনীতি বন্ধ, বিশ্ববিদ্যালয়, মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরগুলোতে আওয়ামীপন্থীদের পদত্যাগ চান মামুন রেজা। আর শিক্ষকদের বেতন ও মর্যাদা বৃদ্ধি করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহবান জানিয়েছেন আল-আমিন। ছাত্ররাজনীতি, র‌্যাগিং ও গেস্টরুম প্রথা বাতিল চান হাসান। 

নাজিম মাহমুদ লিখেছেন, ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি ও শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ চাই। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছ নিয়োগ চাই। ভিসি হবে নির্দলীয় আর শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন চাই। ক্যাম্পাসকে সেশনজট ও মাদকমুক্ত রাখা, খাবারের দাম কমানো, চিকিৎসার সুযোগ বৃদ্ধি, হলের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ নানা দাবি জানিয়েছেন আমির হামজা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা বাতিল দাবি
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল চেয়ে সিয়ামুজ্জামান সিফাত লিখেছেন, কোটার ভেতর সবচেয়ে বাজে পোষ্য কোটা। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অনিয়মিতদেরও অনুমতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন কিছু ভর্তিচ্ছু। এমির হোসেন বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় একজন স্টুডেন্ট যেন বারবার অংশগ্রহণ করতে পারে। যেমনটা ভারতে এবং অন্যান্য দেশে হয়ে থাকে। চেষ্টাকে সব সময় প্রাধান্য দেয়া উচিত। ভর্তিতে সেকেন্ড টাইম চালুর কথা বলেছেন পলাশ হোসেন। 

আরও পড়ুন: ঢাকা মেডিকেল কলেজে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ

মাশরুর রহমান লিখেছেন, যে ৯টি বিশ্ববিদ্যালয গুচ্ছতে ঢোকেনি তাদের এক একটাতে এক এক রকম নিয়ম, এক এক রকম মানবণ্টন। কোনোটাতে শুধু এমসিকিউ কোনোটাতে এমসিকিউ ও রিটেন দুটোই আছে।প্রত্যেকটার জন্য আলাদা করে প্রিপারেশন নিতে হবে,আলাদা প্রশ্নব্যাংক পড়তে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এই চারটি হচ্ছে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়। একক ভর্তি পরীক্ষা যদি নাও হয় তাহলে আমার অনুরোধ হচ্ছে এই চারটি বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে একটি গুচ্ছ হলে ভালো হয়। আরো ভালো হয় যদি বুয়েট এবং বুটেক্সও প্রকৌশল গুচ্ছতে যুক্ত হয়ে যায়।

মাধ্যমিকের জন্য আলাদা অধিদপ্তর ও দক্ষ শিক্ষক দাবি
মিজানুর রহমান মাধ্যমিকের জন্য আলাদা অধিদপ্তরের দাবি করেছেন। মাহিদুজ্জামান সিয়াম লিখেছেন, পর্যাপ্ত ল্যাব সুবিধা না থাকা, শিক্ষকের কমতি, এক শিক্ষককে দিয়ে একাধিক কোর্সের ক্লাস করানো, প্রাক্টিক্যাল শিক্ষা না দিয়ে মুখস্ত বিদ্যা নির্ভর সিলেবাস ব্যবস্থা, বিষয়ভিত্তিক চাকরির সুযোগের অপ্রতুলতা ইত্যাদি বহু সমস্যা রয়েছে। ধর্ম বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা চান মাহাদী হাসান সাদ। 

মেহেদী হাসান তামিমের মতে, প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে দক্ষ ইংরেজি শিক্ষকের অভাব। এর ফলে দেশের ছেলেমেয়েদের ইংরেজির বেসিক দূর্বল এবং সব প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়। কোচিং ব্যবসা বন্ধ করা এবং শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি করা। বেতন বৃদ্ধি করলে শিক্ষকরা ক্লাসে আরও বেশি সময় দেবেন। 

পলাশ বলছেন, একই সিলেবাসে দুই ধরনের প্রতিষ্ঠান (সরকারি+বেসরকারি) বাংলাদেশে চলমান। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক এর সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা হোক। শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির কথা বলেছেন সম্রাট। 

এনটিআরসিএ ও কমিটি প্রথা পরিবর্তন চান অনেকে
আবু সাঈদ ইকবালের মত, এনটিআরসিএ থেকে দূর দূরান্তে নিয়োগ প্রাপ্তদের বদলি এবং বেতন কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে। তরুণ প্রজন্মের শিক্ষকদের আগ্রহ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি কমিটি প্রথা বিলুপ্ত, ইএফটি চালু ও দু’বছর পর পর বদলি করতে হবে। 

শাকিল মিয়াও একই দাবি জানান। নুরুজ্জামান রানার চাওয়া, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটি প্রথা বিলুপ্ত করা হোক। এ কমিটিকে ম্যানেজ করতে করতে শিক্ষকরা আর ক্লাস ম্যানেজ করতে পারেন না। সব শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করার দাবি মোহাম্মদ সাইফুল্লাহর। একই ধরনের দাবি করে ফারুক হোসাইন তরুণ প্রজন্মের শিক্ষকদের আগ্রহ বাড়ানোর কথা বলেছেন।

চাকরি ব্যবস্থায় সংস্কার ও বয়স ৩৫ বছর করার দাবি
আব্দুল্লাহ আল জারিফ কয়েকটি প্রস্তাব করেছেন। তার মধ্যে রয়েছে, ভিনদেশী লোকদের চাকরি থেকে বাদ দিয়ে দেশের মেধাবীদের চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে; দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন এনে এর সঙ্গে চাকরির সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষার পরিবর্তন আনতে হবে; বেসরকার চাকরির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং একটি আইনি কাঠামোতে নিয়ে আসতে হবে; নিয়োগ পরীক্ষায় পরিবর্তন এনে আবেদন ফি যৌক্তিক করাসহ চাকুরি প্রার্থীরা বারবার ঢাকায় এসে যাতে পরীক্ষা দিতে না হয় সেক্ষেত্রে নিয়োগের ক্ষেত্রে ডিসেন্ট্রালাইজেশনের ব্যবস্থা করা; নিয়োগ পরীক্ষায় একাধিক কমিশন গঠন করতে হবে এবং পিএসসিকে ঢেলে সাজানোসহ নন ক্যাডার এর জন্য আলাদা কমিশন গঠন করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পদত্যাগের হিড়িক, সমাধানের সূত্রপাত

অরিন সুলতানা লিখেছেন, শিক্ষা ব্যবস্থার পুরো পরিবর্তন করতে হবে, ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে হবে এবং চাকরির বয়স ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ বছর করতে হবে। চাকরির আবেদন ফি কমানোর দাবি জানিয়েছেন মশিউর রহমান।

শিক্ষা ও গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানো এবং দুর্নীতি বন্ধের দাবি
শিক্ষা ও গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন পাঠকদের অনেকে। মোহাম্মদ আরিফ হোসেনের মতে, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে শিক্ষার্থীদের কাজে অগ্রাধিকার দিতে হবে, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে হবে সার্বক্ষণিক, পড়াশুনায় দলভিত্তিক কোনরকম প্রশ্ন থাকা যাবে না, গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে, ঘুষ প্রথা বাতিল করতে হবে, কোথাও শিক্ষার্থী-শিক্ষক হেনস্থার শিকার হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে, শিক্ষকদের ক্ষমতা দ্বারা প্রভাবিত করা যাবে না, সর্বদা মেধার মূল্যায়ন করতে হবে ও সরকারি সেবায় শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। স্কুল ফি সহনীয় করার দাবি জসিম উদ্দিনের। 

আরো পড়ুন: আরও দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পদত্যাগ দাবি

শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি দুর্নীতি বন্ধের দাবি ফাহিম ইসলামের। সোফি আয়াহ অফিস কর্মকর্তাদেরকে অতিরিক্ত বকশিস (ঘুষ) বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। 

পাঠদান ও শিখন পদ্ধতি
প্রিন্সিপাল এমএ হান্নান তালুকদার কর্মমুখী ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবর্তন করার কথা বলেছেন। আরিফুর রহমান রাব্বি বলেছেন, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় গুরুত্ব দিতে হবে। যোগ্য, মেধাবী শিক্ষকদের নিয়োগ দিতে হবে। গবেষণামূলক শিক্ষা প্রবর্তন করতে হবে। 

মাহিদুজ্জামান সিয়ামের ভাষ্য, পর্যাপ্ত ল্যাব সুবিধা না থাকা, শিক্ষকের কমতি, এক শিক্ষককে দিয়ে একাধিক কোর্সের ক্লাস করানো, প্রাক্টিক্যাল শিক্ষা না দিয়ে মুখস্ত বিদ্যা নির্ভর সিলেবাস ব্যবস্থা, বিষয় ভিত্তিক চাকরির সুযোগের অপ্রতুলতাসহ বহু সমস্যা রয়েছে। এগুলো দূর করতে হবে। 

নুসরাত তাসনিম নিশাতের দাবি, আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে সময়োপযোগী ও কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা; কিন্ডারগার্টেন থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের সম্মানজনক বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা ও বদলির ব্যবস্থা করা; পরিপূর্ণ অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা ব্যতীত কোন বিদ্যালয় নয়; কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি স্কুলে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিষয় পড়ানো বন্ধ করা এবং পড়াশুনা আনন্দময় করা; শ্রেণী অনুযায়ী সিলেবাসের সীমারেখা নির্ধারণ করা; যুগোপযোগী প্রযুক্তি (প্রাকটিক্যালি) বিষয়ে ক্লাস নেয়া যেতে পারে।

এছাড়া হাইস্কুলে প্রজেক্টের নামে কাগজ কাটাকাটি বন্ধ; হাতে-কলমে ও প্রজেক্টরের মাধ্যমে বিজ্ঞান বিষয়ক ক্লাস নেয়া বাধ্যতামূলক করা; সপ্তাহে একদিন স্কুল এ পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি ও খেলাধুলা (নামে নয়) এবং বছরে একটি করে গাছ লাগানো ও পরিচর্যা; প্রতিযোগিতামূলক পাবলিক পরীক্ষা নেয়া এবং পাবলিক পরীক্ষার খাতা দেখার মানদণ্ড পরিবর্তন করা। শিক্ষাব্যবস্থায় সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের গুরুত্ব দেওয়া এবং কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। চারুকলা, জীবন জীবিকা বাদ দিয়ে ইলেকট্রনিকস ও ইলেকট্রিক্যাল, ওয়েল্ডিং বিষয় যুক্ত করা উচিত বলে মত রুমি বেগমের। 

শিক্ষার সংস্কারে রাবি শিক্ষার্থী আমির হামজার বিভিন্ন প্রস্তাবনা  

নিয়মতান্ত্রিক ও মানসম্মত আবাসন সুবিধা
বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মতান্ত্রিক ও মানসম্মত আবাসন সুবিধার কথা বলেছেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের খাবারের মান বাড়ানোর কথা বলেছেন মো. শিবলু। লোকমান হোসাইন লোকমান বলেছেন, ছাত্র-ছাত্রীরা সংগঠনের নামে পরিচিত হয়ে, এ বলে আমার দলে এসো, ও বলে আমার দলে এসো। হোস্টেলের ছাত্রদের নিয়ে বাহিরে মিছিল করে, চাঁদাবাজি করে, সরকারি লোকজন জোর করে মিছিল করায়। কোনও রাজনীতি দরকার নেই। মুক্ত ক্যাম্পাস হলে ভালো হয়। 

চাহিদা অনুযায়ী সিটের ব্যবস্থা এবং সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের কথা বলেছেন আশরাফুল ইসলাম সাকিব। হলে ম্যানার শেখানোর রীতি (গেস্টরুম) বন্ধের দাবি তাবাস্সুম আফরিনের।

আরো পড়ুন: নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ ঘোষণা

শিক্ষার সংস্কারে আরও যত মত
সব বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ১-২ মাসের একটি বাধ্যতামূলক মিলিটারি ট্রেনিং দেওয়ার আহবান জানিয়ে করিম রোবায়েত বলেছেন, তাদের সেল্ফ ডিফেন্স, মার্শাল আর্ট, ক্রেভ মাগা শেখান। কীভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হয় শেখান। এগুলো দরকার। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আরমান হোসেনের মত, সেশনজট মুক্ত করতে হবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, নিয়মিত ক্লাস নিতে হবে। থিসিস, গবেষণার প্রতি জোর দিতে হবে।

সাইফুল ইসলাম খালিদ মনে করেন, অনার্স পর্যায়ের বড় কলেজগুলোর স্বায়ত্তশাসন হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রুপান্তর ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পর্যায়ের সকল অনার্স প্রোগ্রাম বাতিল হওয়া, বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত সকল অনার্স প্রোগ্রাম বাতিল হওয়া উচিত। চার বছরে অনার্স শেষ করার কথাও বলেছেন অনেকে। ডিগ্রির শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধের দাবিও উঠেছে। 

শিক্ষাবিদরা যা বলছেন
বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য কোনও পর্যায়ে রাজনীতি না রাখার পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি থাকলেও তা নিয়োগ বা অন্য কোনও ক্ষেত্রে প্রভাবিত করতে পারবে না। কলূষিত রাজনীতি যেন না হয়। তবে রাজনীতি ছিল বলেই ছাত্ররা জেগে উঠেছে। যদিও কোনও সংগঠন নয়, তারা নিজেরাই রাজনীতি সচেতন থেকে এই আন্দোলন সফল করেছে। 

এতদিন শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে দেওয়ায় মেধার বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়েছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম বলেন, দেশের পুরো কোর্স-কারিকুলাম বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে ঢেলে সাজাতে হবে। পরীক্ষা ছাড়া মূল্যায়ন বন্ধ করতে হবে। পরীক্ষা ছাড়া জাজমেন্ট বা মূল্যায়ন করা যাবে না। এ সময় সব পর্যায়ের শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যপক ড. মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম বলেন, এখন আমাদের বিশ্বের উপযোগী কারিকুলাম দরকার। বৈশ্বিক বা স্থানীয় শ্রমবাজারের উপযোগী হতে হবে। এ জন্য কারিকুলাম পরিবর্তন না পরিমার্জন দরকার। এক্সপেরিমেন্টগুলো হতে হবে বিজ্ঞানসম্মত। কর্মমুখী শিক্ষা ও বিজ্ঞানসম্মত হতে হবে। হঠাৎ বদলালে হবে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ছাত্রদের ওপরে ছেড়ে দেওয়া উচিৎ মত দিয়ে তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে গুনগত রাজনীতি থাকতে পারে। এখনকার রাজনীতি আমার পছন্দ নয়। শিক্ষার্থীদের অধিকার ও পছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে রাজনীতি থাকতে পারে। 

এদিকে শিক্ষকদের দক্ষতা ও মানোন্নয়নে জবাবদিহিতা নেই বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী। তিনি বলেন, তাদের নির্দিষ্ট সময় পর পর মূল্যায়ন দরকার। জবাবদিহিতা থাকলে দক্ষতা বাড়বে। নিয়োগে বিশেষ যোগ্যতা থাকতে হবে। শ্রীলঙ্কার মতো এক বছর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মূল্যায়ন করে চূড়ান্ত নিয়োগ দেওয়া যায়। বিশেষ দক্ষদের এ পেশায় আনার পাশাপাশি বেতন-ভাতাও বাড়াতে হবে। 

ক্যাম্পাসে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি থাকা উচিৎ নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা দলীয় রাজনীতি করবে, এটা ঠিক নয়। তবে তাদের রাজনীতি সচেতন হতে হবে। শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও একই কথা। এ বিষয়টি সব পক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে, প্রয়োজনে আইন করতে হবে। 

পাবলিক পরীক্ষা নিয়ে তিনি বলেন, মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন দরকার। লিখিত পরীক্ষা পুরোপুরি উঠিয়ে মূল্যায়ন সম্ভব নয়। কিছু থাকতে হবে। শিক্ষার্থীদের দক্ষতার মূল্যায়ন দরকার। এক্ষেত্রে একটি ধারাবাহিকতা থাকা দরকার। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন চান, নতুন শিক্ষাক্রম এখনই বন্ধ হোক। তিনি বলেন, এটি বন্ধ করে আমাদের পুরোনোটিতে ফিরে যেতে হবে। এরপর ঠিক করতে হবে, আমরা কোনদিকে যাব। নতুন শিক্ষাক্রম তাৎক্ষনিক বন্ধের বিকল্প নেই। কারণ এটি শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের একটি কারিকুলাম। 

ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতিও এখনই বন্ধের পক্ষে এ শিক্ষক। তিনি বলেন, দলীয় রাজনীতি ক্যাম্পাসে বন্ধ করতে হবে। শিক্ষার্থীরা কোনও দলের অন্ধ ভক্ত হতে পারবে না। ওরা হবে উদারমনা। শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও একই কথা। শিক্ষার্থীদের সঠিক পথে রাখতে হবে তাদের। এখনই ক্যাম্পাসে রাজনীতি বন্ধ করতে না পারলে কবে করা যাবে, তার ঠিক নেই। এখনই রাজনীতি বন্ধ করার সুবর্ণ সুযোগ। 


সর্বশেষ সংবাদ