চমেক হাসপাতালে ‘হামলা’, পুলিশের ওয়াকিটকি ও মোবাইল লুট
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে হামলা চালিয়ে পুলিশের ওয়াকিটকি ও মোবাইল লুট করেছেন অজ্ঞাতরা। শনিবার (৩ আগস্ট) এ হামলার সময় দুই নম্বর গেট-বহদ্দারহাট মোড়ে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হওয়া চিকিৎসাধীন ৮ জন ওয়ার্ড থেকে পালিয়ে গেছেন বলে জানা যায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চমেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার মো. তসলিম উদ্দিন বলেন, চলমান আন্দোলন-সহিংসতার ঘটনায় আজ সন্ধ্যা থেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে ৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। কিন্তু রাত সাড়ে ৮টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে হামলা চালায়। এসময় চিকিৎসাধীন গুলিবিদ্ধরা হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের বিশেষ শাখার উপকমিশনার ডা. মন্জুর মোর্শেদ বলেন, চমেক হাসপাতালে বিক্ষোভকারীরা হামলা চালিয়ে পুলিশের একজন কনস্টেবলকে তুলে নিয়ে যায়। পুলিশের ওয়াকিটকি এবং মোবাইল লটু করে।
আরও পড়ুন: আনুষ্ঠানিকভাবে এক দফা দাবি ঘোষণা
পরে অবশ্য ওই কনস্টেবলকে ছেড়ে দেওয়া হয়, মোবাইল ও ওয়াকিটকিও উদ্ধার হয়েছে—বলেন তিনি।
এর আগে, শনিবার সন্ধ্যা থেকে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের বাসাবাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বাসায়, সাতটার দিকে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসায় হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর দুই নম্বর গেট থেকে বহদ্দারহাট মোড় পর্য়ন্ত গুলাগুলির ঘটনা ঘটে।
রাত ৮টা থেকে শুরু হয় বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ডা. শাহাদাৎ হোসেন, মীর নাছির উদ্দিন চৌধুরী ও এরশাদ উল্লাহার বাসায় ভাঙচুর, গুলি ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা।
আরও পড়ুন: গণজোয়ারে উত্তাল শহীদ মিনার, তিল ধারণের ঠাঁই নেই
বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, সন্ধ্যা থেকে আওয়ামী লীগ-বিএনপির বিভিন্ন নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে হামলা হয়েছে। ঘটনাস্থলে প্রশাসন কাজ করছে।
এর আগে শনিবার বিকেলে জাতীয় শহীদ মিনার থেকে ছাত্র-জনতার গণমিছিল থেকে এক দফা ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবি—প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিসভার পদত্যাগ।
এরপর এক দফা নিয়ে একটি ভিডিও বার্তা প্রদান করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, শহীদ মিনারে ছাত্র-জনতার যে গণ বিস্ফোরণে মানুষ এক দফার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: সেনাবাহিনী জনগণের পাশে আছে ও থাকবে: সেনাপ্রধান
যতদিন পর্যন্ত আমাদের এই এক দফা বাস্তবায়ন না হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত আপনারা যেসব জরুরি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো পালন করবেন। বিজয় নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে—যুক্ত করেন হাসনাত আব্দুল্লাহ।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে দেশে এখন পর্যন্ত ২১৬ জনেরও বেশি আন্দোলনকারী এবং শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের দাবি—এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজারের মতো শিক্ষার্থী এবং আন্দোলনকারী ও সাধারণ মানুষ আহত হয়েছে।
পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সদস্য ও সরকার সমর্থক ছাত্রলীগ এবং তাদের দলীয় নেতাকর্মীদের হামলায় এসব আহত ও নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলেও দাবি আন্দোলনকারীদের।
আরও পড়ুন: রাতভর গুজবে সয়লাব ফেসবুক
এর আগে সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথার বাতিল চেয়ে আন্দোলনে নামে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এরপর আন্দোলন তীব্র হতে থাকলে মাঠে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকার সমর্থকরা। এতে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং সহিংসতার ঘটনা ঘটে।
পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সদস্যরা শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি এবং শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। এরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে মামলা হয়। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে।