হিট অ্যালার্টের মধ্যেই খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, উদ্বেগ বাড়ছে অভিভাবকের

তীব্র গরমের মধ্যেই রোববার থেকে খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
তীব্র গরমের মধ্যেই রোববার থেকে খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান  © সম্পাদিত

সারাদেশে চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। এ কারণে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এরইমধ্যে আগামীকাল রোববার (২১ এপ্রিল) থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান শুরু হচ্ছে। এরইমধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বৃদ্ধির দাবি উঠেছে। প্রতিবেশী এলাকা ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশে এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি দুই মন্ত্রণালয়।

গরমের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশু শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন অভিভাবকরা। এ অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি আরও সাত দিন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে অভিভাবক ঐক্য ফোরাম। তবে ছুটি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্ভাবনা কম বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে শনিবার (২০ এপ্রিল) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ জাফর আলী (মাধ্যমিক উইং) দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ছুটি নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে তীব্র গরমে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ আছে। তিনি বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। আবারও এ নিয়ে কথা বলবেন।

যদিও তীব্র গরমের কারণে দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অ্যাসেম্বলি বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। আজ শনিবার (২০ এপ্রিল) এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশজুড়ে বহমান তাপদাহের ওপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় তীক্ষ্ণ নজর রাখছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অ্যাসেম্বলি পরবর্তী নির্দেশনা দেয়া না পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

এর আগে সকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের বলেন, ছুটির বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। সিদ্ধান্ত আসার সম্ভাবনাও কম। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তুহিনও একই কথা জানান। তাঁর ভাষ্য, এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হলে তা জানিয়ে দেওয়া হবে।

TDC School Stu (1)

এদিকে তীব্র গরমের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পাঠদান শুরু হতে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা। ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রের অভিভাবক বলেন, তাঁর ছোট ভাইয়ের জন্মগত কিছু শারীরিক সমস্যা আছে। তীব্র গরমে স্কুলে গেলে সে অসুস্থ হয়ে পড়বে কি-না, তা নিয়ে উদ্বেগে আছেন তিনি।

কয়েকদিন ধরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলায়। সেখানকার একজন অভিভাবক ফোনে বলেন, তাঁর দুই সন্তান স্কুলে পড়ে। রোববার থেকে স্কুল খুলছে। গরম বেশি থাকলে তাদের স্কুলে নাও পাঠাতে পারেন তিনি।

অধ্যাপক সালেহ হাসান নকিব বলেন, ‘আমি রাজশাহীর মানুষ। এখানকার আবহাওয়া ভালোই বুঝি। আগামী ১০-১৫ দিন আমরা একটা ইউনিক সিচুয়েশন পার করব। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সম্ভবত একটি দিনও ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামবে না। ফিল টেম্পারেচার ৪৫ ডিগ্রির আসেপাশে থাকবে। এ তাপমাত্রায় স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়া এক রকম অসম্ভব। বিশেষ করে আমাদের ইমারতগুলো যেভাবে তৈরি।’

আরো পড়ুন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি বৃদ্ধির দাবি, দুই মন্ত্রণালয় থেকে যা জানা গেল

তিনি বলেন, এ অবস্থায় সব স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখা উচিত। এটা একেবারেই কমনসেন্স। দুয়েক সপ্তাহ ক্লাস বন্ধ থাকার তুলনায় মানুষের সুস্থতা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। রাস্তাঘাটে খেটে খাওয়া মানুষগুলোর কথা ভাবতেই আতংকিত হয়ে যাচ্ছি। অন্তত আগামী কিছুদিন এদের যতদূর পারা যায়, সাহায্য করা উচিত।’

এর আগে শুক্রবার অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মো. জিয়াউল কবির দুলু সাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ছুটি বৃদ্ধির দাবি জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশে হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। মানুষজনকে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হতে নিষেধ করছে প্রশাসন। এর মধ্যে স্কুল কলেজ খুললে অনেক শিশু অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে বলে মত সংগঠনটির। এ পরিস্থিতিতে সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা সাত দিনের জন্য শ্রেণি শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছে তারা।

এদিকে তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে প্রতিবেশী দেশ ভারতের পশ্চিমঙ্গের স্কুলে গরমের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী সোমবার (২২ এপ্রিল) থেকে ছুটি ঘোষণা করেছে শিক্ষা দফতর। এর আগে আগে ৬ মে থেকে গরমের ছুটি দেওয়ার কথা ছিল। তবে সে ছুটি দুই সপ্তাহ এগিয়ে আনা হলো।


সর্বশেষ সংবাদ