জিম্মি নাবিক রোকনের বাড়িতে নেই ঈদ আনন্দ, থামছে না কান্না

ঈদুল ফিতরের দিনেও সোমালীয় জলদস্যুদের কাছে জিম্মি নাবিক নেত্রকোণায় রোকনের বাড়িতে নেই ঈদ আনন্দ—জ্বলেনি চুলা। মায়ের চোখে মুখে অপেক্ষা। মা-বাবা সারাদিন নামাজ পড়ছেন আর দোয়া করছেন ছেলেকে ফিরে পাওয়ার জন্য।

ঈদের দিন দুপুরবেলা রোকনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় রুকনের মা ঘরের এক কোণে শুয়ে তবজি পড়ছেন আর ছেলের জন্য দোয়া করছেন। ছেলে যেন তার কোলে ফিরে আসে। বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন গণমাধ্যম কর্মীদের দেখে।

সাগরে ডাকাতি হওয়া জাহাজের নাবিক থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রুকনের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোণায় মায়ের আহাজারি আজও থামেনি।

আজ না কাল করে করে পুরো রমজান পার হলেও খোঁজ নেই স্বজনের। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় পরিবার সবার মাঝে নাবিককে ফিরে পাওয়ার আকুতি বিরাজ করছে।

এমন হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে নেত্রকোনা জেলার সদর উপজেলার ঠাকুরাকোনা ইউনিয়নের বাঘরোয়া গ্রামে। তিন ছেলের মাঝে ছোট ছেলে রোকন।

রোকনের মা লুৎফুর নাহার জানান, জাহাজ মালিকদের পক্ষ থেকে শুধু শান্তনাই দিয়ে যাচ্ছে। কয়েকদিন আগেও জাহাজ মালিকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, যে ঈদের আগে রোকন বাড়ি ফিরবে সেই আশায় বুক বেঁধেছিলেন তিনি। আল্লাহর কাছে আঁচল পেতে ছেলে ভিক্ষা চাইছেন তিনি। কথা বলতে গেলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মিরাজ আলীর স্ত্রী লুৎফুর নাহার। কানতে কানতে এখন চোখের জলও শুকিয়ে গেছে। 

এদিকে রোকনের বাবা মিরাজ আলী বলেন, যেখানে আমার ছেলে নেই সেখানে কিসের ঈদ আর কিসের আনন্দ। আমার ছেলে ছাড়া পুরোপুরি পরিবারটা শূন্য লাগছে। আমার পরিবারের সবাই এখন ছন্নছাড়া হয়ে গেছে। একদিকে চিন্তায় আমার সন্তান সম্ভবা পুত্রবধূ অসুস্থ হয়ে গেছে। অন্যদিকে রোকনের মা ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া না করায় শরীর দুর্বল হয়ে পড়েছে।

এদিকে রুকনের স্ত্রী তানিয়া তানি বাবার বাড়ি টাঙ্গাইলের মধুপুর গ্রামে সন্তান সম্ভবা। তারও যেন একই অবস্থা জানালেন স্বজনরা।

জানা গেছে, নেত্রকোণার সদর উপজেলার ঠাকুরাকোনা ইউনিয়নের বাঘরোয়া গ্রামের কৃষক মিরাজ আলী ও লুৎফুর নাহারের ৫ সন্তানের মধ্যে ৪ নম্বর হলেন মো. রোকন উদ্দিন।

তারা তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে তৃতীয় ছেলে রুকন। বাবা মা বড় ভাই কাজ করে রুকনকে পড়াশোনা করিয়েছিলেন। নিজে পড়াশোনা না করায় ছোট ভাইকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে কৃষি কাজ করেছেন তারা। পড়াশোনার টাকা জোগাড় করতে করেছেন ধার দেনা। 

ভাইয়ের চাকরি হওয়ায় সকলের আশা ছিলো একদিন চুকে যাবে সব সমস্যা। কিন্তু এমনটি হবে জানা ছিলো না কারোরই। সকলের বড় ভাই কৃষক সাইদুল ইসলাম বলেন, মালিক পক্ষ গতকাল ফোন দিলেও আজ ঈদের দিন নেননি কোন খোঁজ। সেইসাথে দেননি ভাইয়েরও কোন খোঁজ। তাদের কথাই বিশ্বাস করে বসে আছি অন্ধের মতো। কোথায় আছে কেমন আছে আমাদের জানার সুযোগ নেই। তাদের ভরসায় বসে আছি।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ভালো শিক্ষার্থী হওয়ায় রোকন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার পাশ করেন ২০১৩ সনে। পরে ২০১৫ সনে চাকুরিতে যোগদান করেন। গেল বছর চৈত্র মাসে মধুপুরে এক স্কুল শিক্ষিকার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এরপর গত ২০২৩ সনের নভেম্বর মাসে বর্তমান শিপ কোম্পানিতে যোগদান করেন। প্রথম রোজার দিন মায়ের সাথে কথা বলেন রোকন। পরবর্তীতে জিম্মি হওয়া জাহাজের আর খবর পাচ্ছেন না তারা। 

উল্লেখ্য বাংলাদেশ সময় কিছুদিন আগে ভারত মহাসাগরে সোমালীয় জলদস্যদের কবলে পড়ে কবির স্টিল রোলিং মিলসের (কেএসআরএম) মালিকানাধীন বাংলাদেশি জাহাজ এমডি আব্দুল্লাহ। এ জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন মোঃ রোকন উদ্দিন।


সর্বশেষ সংবাদ