প্রযুক্তির ছোঁয়ায় আর্কাইভে ঈদ কার্ড

  © প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশের মুসলমানরা সবচেয়ে বড় উৎসব হিসেবে বিবেচনা করেন ঈদ-উল ফিতরকে এবং এক কথায় সবার কাছে পরিচিত ঈদ হিসেবে। এই উৎসবে একসময় শুভেচ্ছা জানানোর জন্য বড় মাধ্যম ছিল ‘ঈদ কার্ড’। তখন মানুষ উৎসব অনুষ্ঠানের দিনগুলোতে বর্ণিল সব কার্ডে লিখে শুভেচ্ছা জানানো হতো। সেই লেখা আর শুভেচ্ছায় থাকত আবেগ ও ভালোবাসা।

ঈদ কার্ডের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানানো হতো প্রিয়জনদের। অনেকে রাত জেগে বন্ধুর জন্যে হাতে বানানো হতো সেই রঙিন কার্ড। আজ থেকে প্রায় ১০-১৫ বছর আগেও বেশ জনপ্রিয় ছিল ঈদ কার্ড বিনিময়ের বিষয়টি।

কিন্তু এখন সেই কার্ডে শুভেচ্ছা জানানো শুধুই ইতিহাস। নতুন প্রজন্ম জানে না কীভাবে ঈদ কার্ডে শুভেচ্ছা বিনিময়ের কথা। প্রযুক্তির দাপটে হারিয়ে গেছে সেই ঐতিহ্য। আর ঈদ কার্ড চলে গেছে স্মৃতির আর্কাইভে।

ডিজিটাল দুনিয়ায় ঈদ কার্ডের বিবর্তনে এসেছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। এখন ঈদ শুভেচ্ছা বা অন্যসব শুভেচ্ছা জানানো হয়, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, টুইটার, ই-মেইল, ফেসবুক, ই-কার্ড, এসএমএস আর এমএমএসে। এতসব ডিজিটলি মাধ্যমের ভিড়ে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে ঈদ কার্ডে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সংস্কৃতি।

তথ্যমতে, ২০১৫-১৬ সালের দিকেও ছাপা কার্ড বিতরণের হিরিক থাকলেও এখন প্রযুক্তির যুগে এসে ছাপা কার্ড বিতরণে আগ্রহ হারিয়েছে মানুষ। এখন ডিজিটাল মাধ্যমে কার্ড বানিয়ে ই-মেইল কিংবা ফেসবুকে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন মানুষ। ফলে ঈদ কার্ডের মাধ্যমে দাওয়াত দেওয়ার যে কালচার সেটি হারিয়ে যাচ্ছে। 

শৈশবে বন্ধু-বান্ধবকে একটা ঈদ কার্ড দেওয়ার পেছনে অনেক গল্প থাকত। কার্ড কেনার জন্য বাসা থেকে আলাদা টাকা নেওয়া হতো। বিভিন্নভাবে জমানো টাকা দিয়েই কেনা হতো কার্ড। কেনার পর বন্ধুবান্ধব কাউকেই দেখানো হতো না। যার উদ্দেশ্যে কেনা তাকে যদি আগেই বলে দেওয়া হয় তাহলে তো মজাটাই থাকে না! কত সব বিচিত্র অনুভূতি জমে থাকত একেকটি ঈদ কার্ডতে ঘিরে। 

বর্তমান তারুণ্যর অধিকাংশই ভার্চুয়াল শুভেচ্ছা বিনিময়ে ঈদের আনন্দে মেতে উঠছে। ঈদের পূর্বক্ষণে একসময়  ঈদ কার্ড বিনিময় হলেও বর্তমানে ইন্টারনেট থেকে ঈদের শুভেচ্ছা কার্ড ডাউনলোড করে খুব সহজেই বন্ধু,প্রিয়জন, আত্নীয়– পরিজনকে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সুযোগ এসেছে। আর তাতেই ঈদ কার্ড এর ইতিহাস ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন ঈদ কার্ড বিক্রি হয় না বললেই চলে। অফিসিয়ালি প্রতিষ্ঠানগুলো যে শুভেচ্ছা জানাতো সেই কার্ডগুলো খুব সীমিত আকারে ছাপায়। আগে যেমন বিশাল পরিসরে ছাপাতো সেটা আর নেই। এখন একশো’ কিংবা ৫০টা কার্ড নিয়ে যেখানে না দিলেই নয় সেখানে হয়তো দিচ্ছে। ঈদ কেন্দ্রিক সেই ব্যবসা এখন আর নেই।

তারা জানান, বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি এসে আমাদের অনেক কিছুই বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আমাদের বিয়ের কার্ডও কমে যাচ্ছে। একজন শুভেচ্ছা বিনিময় করতে হলে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করলে দেখা যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষের কাছে চলে যাচ্ছে। তাই আমরা এখন ৫ হাজার ঈদ কার্ড ছাপালে দেখা যায় একশো কার্ডও বিক্রি হয় না। আগে আমরা বাসায় কার্ড দিয়ে আসতাম, স্কুল-কলেজে কার্ড দিতো। কিন্তু এখন বাসায় বসেই ডিজিটাল মাধ্যমে কার্ড পাঠাচ্ছে।

রাজধানীর কাটাবনের মিল্লাত মিডিয়া অ্যান্ড প্রিন্টার্সের ম্যানেজার আহমেদ বাবু বলেন, একসময় ঈদ কার্ড প্রচলন ছিল, আমাদের কাছে ঈদ কার্ড বানানোর অর্ডার আসত। এখন ঈদ কার্ডের কোনো চাহিদা নাই। সর্বশেষ কখন ঈদ কার্ড করেছি মনেও পড়ছে না।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিনহাজ আবেদিন বলেন, দিন দিন আমরা অনেককিছু হারিয়ে ফেলেছি, যা আগে আমাদের জীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। যেমন আপনি এখন চাইলেও হারিকেন, রেডিও পাবেন না। কিন্তু একসময় এগুলো ছাড়া জীবন কল্পনাও করা যেত না। একইভাবে ঈদ কার্ডও আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে গেছে।


সর্বশেষ সংবাদ