শাবান মাসে যে বিশেষ দরুদ পড়তে পারেন

  © সংগৃহীত

শাবান মাস বিশেষ ফজিলত ও মর্যাদাপূর্ণ। এ মাস একদিকে যেমন মুসলিম স্বাতন্ত্র্য ও ইসলামি ঐক্যের মাস, অন্যদিকে তেমনি কাবাকেন্দ্রিক মুসলিম জাতীয়তা ও ভ্রাতৃত্ববোধে উজ্জীবিত হওয়ার মাস। শাবান মাসের পূর্ণ নাম হলো ‘আশ শাবানুল মুআজজম’, যার অর্থ-মহান শাবান মাস। 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসে সবচেয়ে বেশি নফল ইবাদত, নফল রোজা পালন ও নফল নামাজ ইত্যাদি আদায় করতেন। রজব মাসে ইবাদতের মাধ্যমে মনের ভূমি কর্ষণ করা, শাবান মাসে আরও বেশি ইবাদতের মাধ্যমে মনের জমিতে বীজ বপন করা, রমজান মাসে সর্বাধিক ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে সফলতার ফসল তোলা।

শাবান মাসে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য অনেকে একটি বিশেষ দরুদ পড়ে থাকেন। এটি দরুদে শাবান নামে পরিচিত এবং রাসূল (সা.) এর আহলে বাইত ইমাম জয়নুল আবেদিন বিন হুসাইন বিন আলী (আ.) এই দরুদের রচয়িতা। তা হচ্ছে-

اَللّـهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّد وَآلِ مُحَمَّد، شَجَرَةِ النُّبُوَّةِ، وَمَوْضِعِ الرِّسالَةِ، وَمُخْتَلَفِ الْمَلائِکَةِ، وَمَعْدِنِ الْعِلْمِ، وَاَهْلِ بَیْتِ الْوَحْىِ، اَللّهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّد وَآلِ مُحَمَّد، اَلْفُلْکِ الْجارِیَةِ فِى اللُّجَجِ الْغامِرَةِ، یَأْمَنُ مَنْ رَکِبَها، وَیَغْرَقُ مَنْ تَرَکَهَا، اَلْمُتَقَدِّمُ لَهُمْ مارِقٌ، وَالْمُتَاَخِّرُ عَنْهُمْ زاهِقٌ، وَاللاّزِمُ لَهُمْ لاحِقٌ، اَللّـهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّد وَآلِ مُحَمَّد، اَلْکَهْفِ الْحَصینِ، وَغِیاثِ الْمُضْطَرِّ الْمُسْتَکینِ، وَمَلْجَأِ الْهارِبینَ، وَعِصْمَةِ الْمُعْتَصِمینَ،

অনুবাদ : হে আল্লাহ, আপনার দরুদ ও শান্তি বর্ষিত হোক মুহাম্মদ ও তার বংশের ওপর যারা নবুওতের বৃক্ষস্বরূপ, যারা ফেরেশতাগণের আসা-যাওয়ার কেন্দ্র, যারা জ্ঞান ও প্রজ্ঞার খনি এবং যারা আল্লাহর প্রত্যাদেশপ্রাপ্ত মহা পুরুষগণের পবিত্র বংশ। হে আল্লাহ আপনার দরুদ বা শান্তি বর্ষিত হোক মুহাম্মদ ও তার বংশের ওপর যারা মারেফাত বা আধ্যাত্মিক জ্ঞান সাগরের জাহাজস্বরূপ। আর যারা ঐ জাহাজে আরোহণ করবে, তারা ভ্রান্তিতে নিমজ্জিত হওয়া থেকে রক্ষা পাবে, আর যারাই এই জাহাজে আরোহণ করবে না তারা ধ্বংসের সাগরে নিমজ্জিত হবে। যে কেউ তাদের অর্থাৎ আহলে বাইতের চেয়ে আগ বাড়িয়ে চলার চেষ্টা করবে সে ধর্ম থেকে বের হয়ে যাবে, আর যে কেউ তাদের থেকে পিছনে থাকবে তার প্রচেষ্টা পণ্ডশ্রমে পরিণত হবে, আর যে কেউ মহানবীর (সা.) আহলে বাইতের আদর্শের পথে থাকবে সে তাদের সাথে মিলিত হবে। হে আল্লাহ আপনার দরুদ বা শান্তি বর্ষিত হোক মুহাম্মদ ও তার বংশের ওপর, যারা নিরাপত্তার সুদৃঢ় দুর্গ বা বেষ্টনী, অসহায় দু:স্থ ও আশ্রয়প্রার্থী লোকদের ফরিয়াদে সাড়া দানকারী এবং যারা চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষায় আগ্রহী ব্যক্তিদের প্রহরী।

اَللّهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّد وَآلِ مُحَمَّد، صَلاةً کَثیرَةً تَکُونُ لَهُمْ رِضاً، وَلِحَقِّ مُحَمَّد وَآلِ مُحَمَّد اَدآءً وَقَضآءً، بِحَوْل مِنْکَ وَقُوَّة یا رَبَّ الْعالَمینَ.

অনুবাদ : হে আল্লাহ, আপনার দরুদ ও শান্তি বর্ষিত হোক মুহাম্মদ (সা.) ও তার পবিত্র বংশের ওপর এবং তাদের ওপর এত বেশি দরুদ বর্ষিত হোক যাতে তারা যেন সন্তুষ্ট হন ও আমাদের ওপর তাদের যে হক বা অধিকার রয়েছে তা যেন এতে আদায় হয়। হে জগতসমূহের প্রতিপালক প্রভু, সমস্ত শক্তির মালিক শুধু আপনি।

اَللّهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّد وَآلِ مُحَمَّد، اَلطَّیِّبینَ الاْبْرارِ الاْخْیارِ، اَلَّذینَ اَوْجَبْتَ حُقُوقَهُمْ، وَفَرَضْتَ طاعَتَهُمْ وَوِلایَتَهُمْ، اَللّـهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّد وَآلِ مُحَمَّد، وَاعْمُرْ قَلْبى بِطاعَتِکَ، وَلا تُخْزِنى بِمَعْصِیَتِکَ، وَارْزُقْنى مُواساةَ مَنْ قَتَّرْتَ عَلَیْهِ مِنْ رِزْقِکَ، بِما وَسَّعْتَ عَلَىَّ مِنْ فَضْلِکَ، وَنَشَرْتَ عَلَىَّ مِنْ عَدْلِکَ،

অনুবাদ : হে আল্লাহ, আপনার দরুদ বা শান্তি বর্ষিত হোক মুহাম্মদ ও তার বংশের ওপর। যারা পবিত্র, সৎকর্মশীল এবং আল্লাহ মনোনীত বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মানব। আল্লাহ তাদের অধিকার রক্ষা করাকে আমাদের ওপর ওয়াজিব করে দিয়েছেন তেমনি তাদের প্রতি আনুগত্যের এবং তাদেরকে ভালবাসার নির্দেশ দিয়েছেন যা অবশ্যই পালনীয় বা ফরজ।

হে আল্লাহ, আপনার দরুদ ও শান্তি বর্ষিত হোক মুহাম্মদ ও তার বংশের ওপর, আমাদের অন্তরকে তাদের আনুগত্যে আলোকিত এবং ভরপুর করুন। আমাদেরকে বিদ্রোহী তথা খোদাদ্রোহী হিসেবে কলঙ্কিত করবেন না। আর আমাদের রিজিক এতটা বাড়িয়ে দিন যতটা আপনি আমাদের অনুগ্রহ করেছেন। যাতে দরিদ্ররাও এর থেকে তাদের অংশ নিতে পারে ও এরফলে আমরা আপনার ন্যায় বিচারকে তুলে ধরতে পারি।

وَاَحْیَیْتَنى تَحْتَ ظِلِّکَ، وَهذا شَهْرُ نَبِیِّکَ سَیِّدِ رُسُلِکَ، شَعْبانُ الَّذى حَفَفْتَهُ مِنْکَ بِالرَّحْمَةِ وَالرِّضْوانِ، اَلَّذى کانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَیْهِ وَالِه وَسَلَّمَ، یَدْاَبُ فى صِیامِهِ وَقِیامِهِ، فى لَیالیهِ وَاَیّامِهِ، بُخُوعاً لَکَ فى اِکْرامِهِ وَاِعْظامِهِ اِلى مَحَلِّ حِمامِهِ، اَللّـهُمَّ فَاَعِنّا عَلَى الاْسْتِنانِ بِسُنَّتِهِ فیهِ، وَنَیْلِ الشَّفاعَةِ لَدَیْهِ، اَللّـهُمَّ وَاجْعَلْهُ لى شَفیعاً مُشَفَّعاً، وَطَریقاً اِلَیْکَ مَهْیَعاً، وَاجْعَلْنى لَهُ مُتَّبِعاً، حَتّى اَلْقاکَ یَوْمَ الْقِیمَةِ عَنّى راضِیاً، وَ عَنْ ذُنُوبى غاضِیاً، قَدْ اَوْجَبْتَ لى مِنْکَ الرَّحْمَةَ وَالرِّضْوانَ، وَاَنْـزَلْتَنى دارَ الْقَـرارِ، وَ مَحَـلَّ الاْخْیـارِ.

অনুবাদ : হে আল্লাহ, আমাদেরকে আপনার ন্যায়বিচারের ছায়ায় বা আশ্রয়ে জীবিত রাখুন এবং এই মাস নবীগণের নেতা তথা আপনার রাসূল হযরত মোহাম্মদ (সা.)র মাস, যে মাসকে আপনি রহমত ও সন্তুষ্টিতে ভরপুর করেছেন। রাসূল (স.)র ওপর ও তার বংশের ওপর আপনার দরুদ বা শান্তি বর্ষিত হোক। যিনি এই মাসে অনেক ইবাদত সাধনা করেছেন নামাজ পড়ে ও রোজা রেখে দিনে এবং রাতে। এই মাসে তিনি অর্থাৎ রাসূল (স.) বিনম্র হয়ে আপনার দরবারে উপস্থিত হয়েছেন এবং এ কারণেই তিনি এই শাবান মাসকে মাসটির শেষ দিন পর্যন্ত ভালবেসেছেন ও শ্রদ্ধা করেছেন। হে আল্লাহ, আপনিও আমাদেরকে তার সুন্নাত বা আদর্শের অনুসারী হতে সাহায্য করুন এবং আমাদের জন্য তার শাফায়াত নসীব করুন।

হে আল্লাহ, মহানবী (স.) কে আমাদের জন্য এমন শাফায়াতকারী করুন যার শাফায়াত বা সুপারিশ কবুল করা হবে। আমাদের জন্যে সঠিক পথ প্রশস্ত করে দিন যে পথ আপনার দিকে গেছে। আমাদেরকে মহানবী (সা.) র অনুসারী করুন যাতে বিচার দিবসে আপনি আমাদের গোনাহগুলো লক্ষ্য না করেন, বরং হে আল্লাহ, আমাদের জন্যে আপনার দয়া অবধারিত করুন, আমাদেরকে চিরস্থায়ী বেহেশত যা সৎকর্মশীলদের আবাসস্থল, তাতে আবাস দান করুন। 

রমজান মাসের প্রস্তুতি হিসেবে শাবান মাসের তারিখের হিসাব রাখা বিশেষ জরুরি একটি সুন্নত আমল। হাদিস শরিফে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমরা রমজানের জন্য শাবানের চাঁদের হিসাব রাখো।’ (সিলসিলাতুস সহিহাহ, আলবানি, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ১০৩)

চাঁদের ২৯ ও ৩০ তারিখ নতুন চাঁদ দেখার চেষ্টা করা সুন্নত, চাঁদ দেখে দোয়া পড়াও সুন্নত, চান্দ্রমাসের তারিখের হিসাব রাখা ফরজে কিফায়া। কারণ, ইসলামি বিধিবিধান চাঁদের তারিখের সঙ্গে সম্পর্কিত। (আল ফিকহুল ইসলামি)


সর্বশেষ সংবাদ