জানা গেল সংসার ভাঙার প্রধান কারণ, যে বিভাগে বিচ্ছেদের হার বেশি

  © প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলেছে, দাম্পত্য ভাঙনে প্রধানভাবে দায়ী পরকীয়া। এটির কারণে সারাদেশে ২৩ শতাংশ তালাক ও দাম্পত্য বিচ্ছিন্ন হয়, যা ঢাকায় ২৮ শতাংশের বেশি। পরকীয়া প্রায় মহামারি রূপ নেওয়ায় দ্বিগুণ হয়েছে তালাকের ঘটনা। দেশে সবচেয়ে বেশি দাম্পত্যে ভাঙন হচ্ছে ধনীদের মধ্যে। জরিপে দেশে বহুগামিতার মতো ঘটনাও বেড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিবিএসের স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-২০২২-এর চূড়ান্ত প্রতিবেদন গত বৃহস্পতিবার সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। স্যাম্পল ভাইটাল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম (এসভিআরএস) বিবিএসের মৌলিক জরিপগুলোর অন্যতম। এতে জনমিতির ১৩৮টি সূচকের তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। এ ছাড়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ২৭ সূচক এবং পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার ১৭টি সূচকের তথ্য-উপাত্ত যুক্ত করা হয়েছে। সারাদেশের ২ হাজার ১২টি নমুনা এলাকার প্রায় ১৩ লাখ মানুষের কাছ থেকে জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। জরিপে উঠে আসা এসব তথ্যকে উদ্বেগজনক মনে করে বিবিএস। 

বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় সরকারি নীতিনির্ধারক, গবেষক, উন্নয়ন সহযোগীসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। কী কারণে দাম্পত্য বিচ্ছেদের ঘটনা বেড়েছে, তারও জবাব বোঝার চেষ্টা করেছে বিবিএস। প্রতিবেদনে বলা হয়, মোটাদাগে নারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বৃদ্ধির সঙ্গে দাম্পত্য বিচ্ছেদ বা তালাকের সম্পর্ক রয়েছে। নারীর শিক্ষার স্তর যত ওপরে, দাম্পত্য বিচ্ছিন্ন হওয়ার হারও তত বেশি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে বিয়ে কার্যত সর্বজনীন বিষয়। এটিকে সামাজিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ ব্যবস্থায়ও কিছুটা বৈচিত্র্য এসেছে। বিয়ের মাধ্যমে যৌনজীবন সাধারণ এককগামী। তবে এবারের জরিপে সীমিত মাত্রায় বহুগামিতা লক্ষ্য করা গেছে।

বিবিএসের প্রতিবেদনে তালাক ও দাম্পত্য বিচ্ছিন্ন হওয়ার পেছনে ১৫টি কারণ উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে পরকীয়ার দায় সবচেয়ে বেশি– ২২ দশমিক ৬ শতাংশ। দ্বিতীয় কারণ দাম্পত্য জীবন চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অক্ষমতা। ব্যয় বহনে অস্বীকৃতি, পারিবারিক চাপের মতো ঘটনাও রয়েছে। পরকীয়ায় সংসার ভাঙার প্রবণতা অঞ্চলভিত্তিক বিভাজনে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি রাজধানীসহ ঢাকা বিভাগে– ২৮ দশমিক ৩ শতাংশ। দ্বিতীয় রংপুর বিভাগে ২৬; সবচেয়ে কম ময়মনসিংহে ১২ দশমিক ৬ শতাংশ।

প্রতিবেদনে দাম্পত্য বিচ্ছেদ অংশে বলা হয়, ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে তালাকের ঘটনা দ্বিগুণ হয়েছে। ২০২১ সালে যেখানে বিচ্ছেদের ঘটনা শূন্য দশমিক ১৫ ছিল, ২০২২ তা হয়েছে শূন্য দশমিক ২৯। এ হার শহরের তুলনায় গ্রামে দ্বিগুণ। অবশ্য এ সময়ে বিয়ের হারও বেড়েছে। ১৭ বছর ব্যবধানে বিয়ের হার বেড়েছে প্রায় ২৯ শতাংশ। ১২ থেকে এ হার ১৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

এ ছাড়া বিচ্ছেদের ঝুঁকি বেড়েছে ৫০ শতাংশ। গরিবের তুলনায় ধনী পরিবারে দাম্পত্য বিচ্ছেদের ঘটনা প্রায় দ্বিগুণ। মধ্যবিত্তদের মধ্যে বিচ্ছেদের ঘটনা সবচেয়ে কম। জরিপে দেখা যায়, প্রতি হাজারে যেখানে দরিদ্র ১ দশমিক ৩ ও হতদরিদ্রদের মধ্যে বিচ্ছেদের হার ১ দশমিক ৮, সেখানে সবচেয়ে ধনী পরিবারে এটি ২ দশমিক ৮।


সর্বশেষ সংবাদ