শিক্ষক থেকে পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ মির্জা ফখরুলের জন্মদিন কাটছে কারাগারে
৭৭ বছর পেরিয়ে ৭৮-এ পা রাখলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ১৯৪৮ সালের এই দিনে (২৬ জানুয়ারি) ঠাকুরগাঁওয়ে জন্মগ্রহণ করেন বরেণ্য এই রাজনীতিবিদ। তার ৭৭তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে ও দেখা করতে এদিন কারাগারে গিয়েছেন স্ত্রী রাহাত আরা বেগম, মেয়ে শাফারু মির্জা সুমি এবং বোন।
ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি করে আসা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন শাখার সভাপতি এবং এসএম হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করে শিক্ষকতায় যোগ দিয়েছিলেন ফখরুল। ঢাকা কলেজে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন তিনি। এরপর ১৯৮৬ সালে সরকারি চাকরি ছেড়ে পুরোদমে রাজনীতিতে নামেন তিনি। ১৯৮৮ সালে ঠাকুরগাঁও পৌরসভা নির্বাচনে জিতে হন চেয়ারম্যান।
ছাত্রজীবনের বাম রাজনীতি থেকে মির্জা ফখরুলের জাতীয় রাজনীতিতে হাতেখড়ি আবদুল হামিদ খান ভাসানীর দল ন্যাপে। সেখান থেকেই তার বিএনপিতে যোগদান। ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে তৎকালীন উপ-প্রধানমন্ত্রী এস এ বারীর একান্ত সচিবও ছিলেন ফখরুল।
আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয় ভিসিদের কোনো যোগ্যতা নেই: মির্জা ফখরুল
১৯৯২ সালে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি, পরে দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব পদে উঠে আসেন তিনি। ২০১১ সাল থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এবং ২০১৬ সালে ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে মহাসচিব নির্বাচিত হন।
বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বে আসার আগে তিনি জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের প্রথম সহ-সভাপতি এবং পরে সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন দীর্ঘদিন। ঠাকুরগাঁও-১ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নে দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ফখরুল। ২০০১-২০০৬ মেয়াদের বিএনপি সরকারে তাকে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া।
২০১৮ সালে একাদশ নির্বাচনে বগুড়া-৬ আসন থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে তিনি শপথ না নেওয়ায় ওই আসনে উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপির জিএম সিরাজ সংসদে যান।
দুই মেয়ে নিয়েই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও রাহাত আরা বেগমের সংসার। বড় মেয়ে মির্জা শামারুহ অস্ট্রেলিয়ায় স্বামী-সন্তান নিয়ে আছেন। সিডনির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট ডক্টরাল ফেলোশিপ নিয়ে এখন ক্যানবেরার ফেডারেল মেডিকেল কাউন্সিলের সিনিয়র সায়েন্টিস্ট হিসেবে কাজ করছেন।
আরও পড়ুন: মির্জা ফখরুলের মুক্তি চাইলেন ৬০ অধ্যাপক
ছোট মেয়ে মির্জা সাফারুহ ধানমণ্ডির সানি ডেল স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী। বর্তমানে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ পুলিশ পণ্ড করে দেওয়ার পরের দিন গুলশানের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় দলটির মহাসচিবকে। প্রধান বিচারপতির বাসভবন ভাঙচুরের ঘটনার মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গত ২৮ অক্টোবর পল্টন ও রমনা থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মোট ১১টি মামলা করে। এসব মামলার ৯টির এজাহারে মির্জা ফখরুলের নাম রয়েছে।
পল্টন ও রমনা থানার পৃথক ৯টি মামলায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিন হয়েছে মহানগর মুখ্য হাকিম আদালতে। তার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এখনো আরো একটি মামলায় তাঁর জামিন বাকি আছে। বর্তমান সরকারের আমলে অতীতেও কয়েক দফা গ্রেপ্তার হয়ে বন্দিত্বের জীবন কাটাতে হয়েছে এই প্রবীণ রাজনীতিককে।