আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) 

মসজিদে নববী
মসজিদে নববী  © ফাইল ছবি

আজ বৃহস্পতিবার (১২ রবিউল আউয়াল) পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের এই দিনে মানব জাতির পথ প্রদর্শক, বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারি রহমাতুল্লি­ল আলামিন সর্বশ্রেষ্ঠ ও আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) জন্ম গ্রহণ করেন।

আইয়ামে জাহেলিয়াত থেকে মানুষকে মুক্তির দিশা দিতে ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে (হিজরি মাসের ১২ রবিউল আউয়াল) সুবহে সাদিকের সময় মক্কা নগরীর বিখ্যাত কুরাইশ বংশে মা আমিনার কোল আলো করে বিশ্বনবী জন্মগ্রহণ করেন। আবার একই দিনে ৬৩ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন।

মহানবীর আগমনের আগে গোটা আরব ছিল চরম অন্ধকারে নিমজ্জিত। গোটা আরবে উচ্ছৃঙ্খলতা, পাপাচার, দুরাচার, ব্যাভিচার, মিথ্যা, হত্যা, লুন্ঠন, মদ্যপান, জুয়ায় ভরপুর ছিল। অন্যায়-অপরাধ, দ্বন্ধ-সংঘাত, সন্ত্রাস-নৈরাজ্য, নৈরাশ্য আর হাহাকার বিরাজ করছিল। ঠিক এমন সময় মানবতার মুক্তির দিশারী সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব ও সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সারা জাহানের হেদায়েতের জন্য আবির্ভূত হলেন। তিনি এসেছিলেন তাওহিদের মহান বাণী নিয়ে। রাসুল (সা.) হলেন বিশ্ব মানবতার জন্য আল্লাহর এক অনন্য রহমত স্বরুপ প্রেরিত। 
আল্লাহর প্রতি প্রবল আনুগত্যে প্রায়ই তিনি হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন। সেখানেই মাত্র ৪০ বছর বয়সে তিনি নবুয়ত লাভ করেন। এরপর পরম করুণাময় আল্লাহর নির্দেশে দীর্ঘ ২৩ বছর কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও সীমাহীন ত্যাগের মাধ্যমে শান্তির ধর্ম ইসলাম তথা পবিত্র কোরআনের বাণী প্রচার করেন। আল্লাহর প্রতি অসীম ও অতুলনীয় আনুগত্য এবং ভালোবাসার পাশাপাশি মহৎ মানবিক চারিত্রিক গুণাবলির জন্য তিনি সর্বকালে সর্বজনের কাছে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হিসেবে অভিষিক্ত। বিশ্বজগতের রহমত হিসেবে মহান আল্লাহ তাআলা রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)–কে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছিলেন। এ কারণে তাঁকে ‘রহমাতুল্লিল আলামিন’ বলা হয়।

ইসলামের প্রাথমিক দিনে মুহাম্মাদের জন্মকে একটি পবিত্র দিন হিসাবে সাধারণত ব্যক্তিগতভাবে পালন করা হতো এবং পরবর্তীতে এই উদযাপন মু্ক্তভাবে পালন করেন ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা। সারা পৃথিবীর মুসলিমদের কাছে দিনটি অত্যন্ত পবিত্র ও মহিমান্বিত। মুসলিম উম্মাহ দিনটি ঈদে মিলাদুন্নবী হিসেবে উদ্‌যাপন করে থাকে।

এদিকে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা মহানবী (সা.)-এর জীবনাদর্শ অনুসরণ করে ভ্রাতৃত্ববোধ ও মানবকল্যাণে ব্রতী হওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও সরকারি ছুটি রয়েছে।

দিনটি উদযাপন উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন ইসলামি সংগঠন ও সংস্থা নানা কর্মসূচি নিয়েছে।  ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে যথাযথ মর্যাদায় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের জন্য সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এ সব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মহানবী (সা.)-এর জীবনের ওপর আলোচনা, শোভাযাত্রা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল।
 
গতকাল বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বাদ মাগরিব বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এ অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন। এর আগে বাদ আসর তিনি বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ চত্বরে মাসব্যাপী ইসলামী বইমেলার উদ্বোধন করেন।
 
ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিসৌধে পবিত্র কোরআনখানি, দোয়া মাহফিল, ১৫ দিনব্যাপী ওয়াজ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, বাংলাদেশ বেতারের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় সেমিনার, ইসলামী সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, আরবি খুতবা লিখন প্রতিযোগিতা, ক্বিরাত মাহফিল, হামদ-নাত, স্বরচিত কবিতা পাঠের মাহফিল, ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্কুলে নৈতিকতা ও চরিত্র গঠন বিষয়ক সেমিনার, বিশেষ স্মরণিকা ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ।

এ ছাড়াও পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ১৪৪৪ হিজরি উদযাপন উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সব বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, ৫০টি ইসলামিক মিশন ও ৭টি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন উপলক্ষে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদন, বৃদ্ধ নিবাস, মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্রে উন্নত খাবার পরিবেশনেরও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) উপলক্ষ্যে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ চত্বরে ইসলামি বইমেলা শুরু হয়েছে। গতকাল বুধবার বাদ আসর মাসব্যাপী বইমেলার উদ্বোধন করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। এরপর বাদ মাগরিব ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত পক্ষকালব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ