বাংলাদেশের চেয়ে স্বচ্ছ নির্বাচন কোথায় হয়—প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা   © ফাইল ফটো

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত সব নির্বাচনই অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আমলে এ পর্যন্ত যতগুলো নির্বাচন হয়েছে- উপনির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন, প্রতিটি নির্বাচন স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। বাংলদেশে এর থেকে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন কবে হয়েছে ? বা পৃথিবীর কোনো দেশে হয়ে থাকে?

বৃহস্পতিবার রাতে চলতি একাদশ জাতীয় সংসদের ২৪তম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সংসদে সরকারি দল ও বিরোধী দলের আসনগুলো দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অক্টোবর মাসে আরেকটা অধিবেশন বসবে। সেটাই হবে এই সংসদের শেষ অধিবেশন। পরে নির্বাচন হবে। নির্বাচনে যদি জনগণ ভোট দেয় আবার এদিকে আসবো। না দিলে ওদিকে যাবো। কোনো অসুবিধা নেই। জনগনের ওপর আমরা সব ছেড়ে দিচ্ছি, জনগণ যেটা করবে।’

বর্তমান সরকারের আমলে সবগুলো নির্বাচন স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ দাবি করে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এর চেয়ে ভালো নির্বাচন এদেশে কবে হয়েছে? কোন দেশে হয়েছে? অনেক দেশের নির্বাচন তো এখনো বিরোধী দল মেনে নেয়নি। দেশ যখন সুষ্ঠুভাবে এগুচ্ছে তখন নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন কেন?’

আগামী নির্বাচনে দেশবাসীসহ সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। কেউ জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে। গণতান্ত্রিক ধারাটা যেন ব্যাহত করতে না পারে। কোন চক্রান্তের কাছে বাংলাদেশের জনগণ আর মাথানত করবে না। সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে যখন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এই অগ্রযাত্রাটা যেন অব্যাহত থাকে। বিশ্বব্যাপী বাঙালী যে মর্যাদা পেয়েছে সেই মর্যাদা অব্যাহত রেখেই আমরা এগিয়ে যাব। আবার দেখা হবে।’

তিনি বলেন, ‘অনেক দেশে নির্বাচন তো এখনো তাদের বিরোধী দল মানেনি। এরকম তো ঘটনা আছে। তারপরও আমাদের নির্বাচন নিয়ে অনেক সবক শুনতে হচ্ছে। আজকে যখন সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন আমরা করছি তখনই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করা। এর অর্থটা কী? আজ দেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তখন নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন কেন?’

অতীত গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আওয়ামী লীগের ভূমিকার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্য আওয়ামী লীগ রাজপথে ছিল। রক্ত দিয়েছে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। সেই শহীদের তালিকা দেখলে আওয়ামী লীগের নাম পাওয়া যাবে। সংগ্রামের মধ্যদিয়ে মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে। এটাই সব থেকে বড় কথা।’

নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশে নানা সমালোচনার জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‌‘আজকে দেখি নির্বাচন নিয়ে, নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিয়ে সবাই সোচ্চার। যে সমস্ত দেশ আমাদের দেশের নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে আর অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলছে তাদের কাছে আমার প্রশ্ন? ৭৫ এর পর থেকে বার বার যে নির্বাচনগুলো হয়েছিল সেই সময় তাদের এই চেতনাটা কোথায় ছিল? জানি না তাদের এই বিবেক কী নাড়া দেয়নি?’

সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের নানা ফিরিস্তি তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ পরপর তিনবার সরকারে এসেছে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ‍উন্নতি হচ্ছে। আজকের বাংলাদেশ, বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে যে কাজ করে যাচ্ছি তার সুফল তো দেশের তৃণমুলের জনগণ পাচ্ছে। তিনি যে ওয়াদা দেন সেটা রক্ষা করেন।’

বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী দেশের পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘তখন জনগণের কোনো অধিকার বলে কিছু ছিল না। তাদের ভোটের অধিকার ছিল না। বেঁচে থাকাই ছিলো কষ্টকর। নির্বাচনের পর ৪৮ ঘণ্টা ভোটের ফল বন্ধ রেখে মনমত ফলাফল প্রকাশ করতে দেখা গেছে।’

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনে জনগণ আমাদের ভোট দেয়। তখনও নির্বাচন ঠেকাতে এই বিএনপি-জামাত মিলে অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করে। এরপর ২০১৮ সালে নির্বাচনে তারা আসলেও নমিনেশন বাণিজ্য করে তিনশ সিটে সাতশ প্রার্থীকে নমিনেশন দেয়। এক সময় তারা নির্বাচন থেকে নিজেদেরকে প্রত্যাহার করে।’


সর্বশেষ সংবাদ