বাজেটে বাড়তে পারে যেসব পণ্যের দাম
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৩, ০৪:৩৪ PM , আপডেট: ০১ জুন ২০২৩, ০৪:৪৪ PM
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট মন্ত্রীসভা অনুমোদন দিয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনের মন্ত্রীসভা কক্ষে দুপুরে অনুষ্ঠিত বিশেষ বৈঠকে মন্ত্রীসভা নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়।
রাজস্ব বোর্ড বহির্ভূত কর থেকে আসবে ২০ হাজার কোটি টাকা ও কর ছাড়া আয় ধরা হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে চার লাখ ৩৬ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা। এই লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে আগামী বাজেটে ব্যাপকভাবে শুল্ক-করের হেরফের হতে পারে। এই অভিঘাতে যেমন বাড়তে পারে অনেক পণ্যের দাম, তেমনি কমতেও পারে অনেক পণ্যের মূল্য। অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে, সেসবের মধ্যে রয়েছে
মোবাইল ফোন: মোবাইল ফোন উৎপাদনে ভ্যাট আরোপ হতে পারে দুই শতাংশ। বসতে পারে সংযোজনের ক্ষেত্রেও ভ্যাট। এরফলে বাড়তে পারে মোবাইল ফোনের দাম।
এলপিজি সিলিন্ডার: স্থানীয় এলপিজি সিলিন্ডারের মূল কাঁচামাল আমদানির ওপর শুল্ক বাড়ার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হতে পারে। সিলিন্ডার উৎপাদনকারীদের বর্তমানের ভ্যাট হার পাঁচ শতাংশ থেকে বেড়ে সাড়ে সাত শতাংশ হতে পারে।
সিগারেট: সিগারেটের ওপর সম্পূরক শুল্কও কিছুটা বাড়তে পারে। ফলে সব ধরনের সিগারেটের দাম বাড়ানো হতে পারে।
কোমল পানীয়: কার্বনেটেড পানীয় শিল্পের (বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রি) ওপর বর্তমানের টার্নওভার করের হার শূন্য দশমিক ৬০ শতাংশ, যা নতুন বাজেটে পাঁচ শতাংশ হতে পারে।
টিস্যু: কিচেন টাওয়াল, টয়লেট টিস্যু, ন্যাপকিন টিস্যু, ফেসিয়াল টিস্যু/পকেট টিস্যু ও পেপার টাওয়াল উৎপাদনেও ভ্যাটের হার বাড়ানো হতে পারে।
ফল: ডলার সাশ্রয়ে এবং শুল্ক ফাঁকি রোধে কাজুবাদাম, খেজুরের মতো খাদ্যসামগ্রীর আমদানি শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। তাজা ও শুকনা খেজুর আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্কের পাশাপাশি ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ফল ও বাদামের আমদানি শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে বিধায় ফল ও বাদামের দাম বাড়তে পারে।
কাজুবাদাম: দেশে বাদাম চাষকে উৎসাহিত করতে কাজুবাদাম আমদানিতে শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৩ শতাংশ করা হচ্ছে।
ওভেন: শুল্ক ফাঁকি রোধে বাজেটে সব ধরনের ওভেন আমদানির শুল্ক ৩০ শতাংশ বাড়ানো হতে পারে।
বাসমতি চাল: বিরিয়ানি-তেহারির প্রধান উপকরণ বাসমতি চাল আমদানিতে ভ্যাট বসানো হতে পারে।
চশমা: চশমার ফ্রেম ও সানগ্লাস আমদানিতে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হতে পারে। এছাড়া উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট পাঁচ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে সাত শতাংশ করা হতে পারে।
কলম: বর্তমানে কলম উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি রয়েছে। আগামী বাজেটে এ খাতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হতে পারে।
প্লাস্টিক সামগ্রী: প্লাস্টিকের তৈরি সব ধরনের টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যার, গৃহস্থালি সামগ্রী উৎপাদনে ভ্যাট পাঁচ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাত দশমিক ৫০ শতাংশ করা হতে পারে।
শিল্পকারখানার যন্ত্রাংশ: বর্তমানে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের আওতায় বিনিয়োগকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে এক শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ হতে পারে।
নির্মাণসামগ্রী: নির্মাণসামগ্রীর উপকরণ আমদানিতে শুল্ক বাড়তে পারে। বাড়ি নির্মাণের প্রধান উপকরণ সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার আমদানিতে বর্তমানে টনপ্রতি ৫০০ টাকা শুল্ক আছে, এটি বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হতে পারে।
টাইলস: বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত বিদেশি টাইলস আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করা হতে পারে।
পিকআপ ভ্যান: শিল্পে যানবাহন আমদানিতে পিকআপ ভ্যানের ওপর শুল্কছাড় উঠিয়ে দেওয়া হতে পারে।
অ্যালুমিনিয়াম সামগ্রী: অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি গৃহস্থালিসামগ্রী ও তৈজসপত্রের ভ্যাট হার বাড়ানো হতে পারে।
ইজারামূল্য : জমির নামজারি ফি, হাটবাজারের ইজারামূল্য, চিড়িয়াখানার প্রবেশমূল্য বাড়তে পারে।
বিমান টিকিট: ভ্রমণ অথবা চিকিৎসার জন্য বিদেশ গমনে বিমান টিকিটের ওপর ভ্রমণ কর বাড়ানো হতে পারে।
ভ্রমণ কর: আকাশপথে দেশের এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যেতে ২০০ টাকা ভ্রমণ কর আরোপ হতে পারে। এছাড়া, স্থলপথে বিদেশ গমনে ৫০০ টাকা ও নৌপথে ৮০০ টাকা কর বহাল রয়েছে, যা বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করা হতে পারে। আকাশপথে সার্কভুক্ত দেশ ভ্রমণে এক হাজার ২০০ টাকা কর আছে, যা বাড়িয়ে দুই হাজার টাকা করা হতে পারে।
সাইকেল: সাইকেলের যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হতে পারে।
সিরিশ কাগজ: সিরিশ কাগজ আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হতে পারে।
আঠা বা গ্লু: ভাঙা জিনিস জোড়া দেওয়ার আঠা বা গ্লু সংরক্ষণমূলক শুল্ক বাড়ানো হতে পারে।
গাড়ি: আগামী অর্থবছরের বাজেটে দামি গাড়ির ওপর নতুন করে আরোপ হতে পারে। ফলে বাজেটে দামি গাড়ি আরও দামি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০০১ সিসি থেকে ৩০০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ি আমদানিতে এখন ২০০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বসে। যেটা বাড়িয়ে ২৫০ শতাংশ এবং ৩০০১ থেকে ৪০০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ৩৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করে ৫০০ শতাংশ করা হতে পারে।