কেন বাড়ছে শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে আত্মহননের প্রবণতা?

শায়খ আহমাদুল্লাহ
শায়খ আহমাদুল্লাহ  © ফাইল ছবি

বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। বিভিন্ন সময় গবেষণায় এসব তথ্য উঠে আসে। অর্থনৈতিক সংকট, পারিবারিক জটিলতা, সম্পর্কের অবনতি, পড়াশোনার চাপসহ নানামুখী কারণে বিষণ্নতায় ভোগা তরুণদের আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে বলে এতে উঠে আসে।

গত দুইদিনে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুই শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনার পর ফের আলোচনায় এসেছে এ বিষয়টি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

কী কারণে এই প্রবণতা বাড়ছে তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন জনপ্রিয় মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ। আজ বৃহস্পতিবার নিজের ভেরিফায়েড পেজের এক স্ট্যাটাসে এই ব্যাখ্যা দেন তিনি। নিচে তার সেই স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

অভাবসৃষ্ট হতাশা, ব্যর্থতা ও গ্লানির ভার বইতে না পেরে একটা সময় মানুষ আত্মহত্যা করত। এখন শিক্ষিত সচ্ছল তরুণদের মধ্যে আত্মহননের প্রবণতা বাড়ছে। এর কারণ কী?

এর অন্যতম প্রধান কারণ— বস্তুবাদী শিক্ষাব্যবস্থার প্রভাব। বস্তুবাদী শিক্ষাব্যবস্থায় সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস, পরকালমুখিতা এবং আধ্যাত্মবাদের কোনো অংশগ্রহণ নেই।

তাকদির নয়; এখানে শেখানো হয় শুধুই বস্তুর প্রতি নির্ভরতা। আর বস্তুবাদিতার মাধ্যমে সব সময় সাফল্য আসবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। 

ফলে একজন বস্তু-নির্ভর তরুণ যখন কোনো কাজে ব্যর্থ হয়, চূড়ান্তভাবে সে হতাশ হয়ে পড়ে। এই হতাশা তাকে ধাবিত করে আত্মহননের পথে।

বিপরীতে একজন বিশ্বাসী, পরকালমুখী, তাকদিরে ভরসাকারী মানুষ যখন ব্যর্থ হয়, তার একটা সান্ত্বনার জায়গা থাকে। সে নিজেকে প্রবোধ দিতে পারে— আমি চেষ্টা করেছি কিন্তু ভাগ্যে নেই বলে হয়নি। আল্লাহ নিশ্চয় আমার এ চেষ্টার ভিন্ন কোনো প্রতিদান দেবেন।

আমরা যতই শিক্ষিত হই, ঈর্ষণীয় ক্যারিয়ার গড়ি, জগৎজোড়া খ্যাতি লাভ করি, তবু দিনশেষে সুখ-দুঃখের কথা বলে হৃদয়কে ভারমুক্ত করার একটি গোপন জায়গা আমাদের দরকার। সবার দরকার।

সেই জায়গাটির নাম রবের দরবার। যে দরবার থেকে কেউ কখনো হতাশ হয় না। পাওয়া না-পাওয়ার নালিশ ঠুকে যেখান থেকে আমরা নির্ভার, প্রশান্ত হতে পারি।

আমাদের সামগ্রিক শিক্ষায় যতদিন না বস্তুবাদিতার জায়গায় স্রষ্টার প্রতি নির্ভরতার অনুশীলন শুরু হবে, ততদিন শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে আত্মহননের ঘটনা ঘটতেই থাকবে।


সর্বশেষ সংবাদ