দুই চুলার গ্যাসের দাম ৫১২ টাকা বাড়াতে চায় তিতাস
দেশের বৃহত্তম গ্যাস বিতরণ প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড এবার গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে এক চুলার বিল ৩৮৯ টাকা বেড়ে হবে ১ হাজার ৩৭৯ টাকা এবং দুই চুলার বিল ৫১২ টাকা বেড়ে হবে ১ হাজার ৫৯২ টাকা। গত ২ মে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে দাম বাড়ানোর এ প্রস্তাব পাঠিয়েছে তিতাস।
গত জুনে আবাসিক গ্রাহকদের গ্যাসের দাম বাড়ায় জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসি। এ সময় প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে মিটার ছাড়া গ্রাহকদের জন্য মাসে গ্যাস ব্যবহারের পরিমাণ কমিয়ে দুই চুলায় ৬০ ঘনমিটার ও এক চুলায় ৫৫ ঘনমিটার ধরা হয়। এতে দুই চুলার মাসিক বিল ১ হাজার ৮০ টাকা ও এক চুলার বিল ৯৯০ টাকা ঘোষণা করা হয়েছিল। কমিশনের এ ঘোষণার ১০ মাস পর এতে আপত্তি জানিয়েছে তিতাস।
তিতাসের প্রস্তাবে বলা হয়, কমবেশি ২৫ লাখ গ্রাহকের বিপরীতে কোনো সমীক্ষা বা তথ্য বিশ্লেষণ না করেই ঘনমিটারের পরিমাণ নির্ধারণ করেছে বিইআরসি। এতে কারিগরি ক্ষতি বেড়েছে এবং তিতাস আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
বিইআরসি বলছে, তিতাসের অভিযোগ সঠিক নয়। গত বছর গ্যাসের দাম নিয়ে শুনানির সময় তিতাসের ৩ লাখ ২০ হাজার ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির ৫০ হাজার প্রিপেইড মিটার গ্রাহকের গ্যাস বিল বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, প্রতিমাসে দুই চুলার গ্রাহকরা গড়ে ৪৫ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার করেন। কিন্তু মিটার ছাড়া গ্রাহকদের জন্য তা কিছুটা বাড়িয়ে ৬০ ঘনমিটার নির্ধারণ করা হয়েছিল। এ সময় বলা হয়েছিল, ভবিষ্যতে ঘনমিটারের পরিমাণ আরও কমানো হবে।
তিতাস বলছে, গ্রাহকরা রান্নার পাশাপাশি গ্যাস ব্যবহার করে পানি ফুটায়। অনেক বাসায় সাবলেট ভাড়াটিয়া থাকে। এতে কমিশন নির্ধারিত গ্যাসের চেয়ে বেশি পরিমাণে গ্যাস ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তারা এক যুগ আগের একটি সমীক্ষার উদ্ধৃতি দিয়েছে।
তাদের দাবি, ২০০০-২০০১ অর্থবছরে রাজধানীর গুলশান, বনানী এলাকায় প্রায় ১০০ আবাসিক গ্রাহকের বাসায় স্থাপিত মিটারের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গ্যাসের মাসিক ব্যবহারের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৮৭ দশমিক শূন্য ৫ ঘনমিটার এবং ১১২ দশমিক ৪২ ঘনমিটার। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভর্তুকি প্রত্যাহার এবং রাজস্ব ঘাটতি কমানোর লক্ষ্যে চার শ্রেণির ব্যবহারকারীর জন্য গ্যাসের দাম ১৭৯% পর্যন্ত বৃদ্ধি করে সরকার।
আরও পড়ুন: বন্ধ হয়ে গেছে আট হাজার প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
সে সময় আবাসিক, সিএনজি, সার এবং চা বাগানের ব্যবহারকারীদের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়নি। তিতাসের চিঠিতে পোস্টেজ মিটার ব্যবহারকারী গ্রাহকদের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে গত অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত বিলের হিসাব দেখানো হয়েছে। এতে দেখা যায়, দুই চুলার মিটারযুক্ত আবাসিক গ্রাহকরা প্রতিমাসে গড়ে ৯৭ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার করেন।
মার্চে এমন গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ৫৩ হাজার ৭৪৪। বর্তমানে ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগে তিতাসের ২৮ লাখ ৫৭ হাজার আবাসিক গ্রাহক রয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৫ লাখ ২৫ হাজার মিটারবিহীন ও ৩ লাখ ৩২ হাজার প্রিপেইড মিটারের গ্রাহক।
বিইআরসির সাবেক সদস্য (গ্যাস) মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, যাচাই-বাছাই করেই দুই চুলায় ৬০ ঘনমিটার নির্ধারণ করা হয়েছিল। যদিও এটি আরও কমানো চিন্তা ছিল কমিশনের। তিতাসকে সতর্ক করে বেশি কমানো হয়নি। অবৈধ সংযোগ দিয়ে একটি গোষ্ঠী দিনদুপুরে ডাকাতি করছে আর কারিগরি ক্ষতির দায় চাপাচ্ছে মিটার ছাড়া গ্রাহকদের ওপর।