ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস, মানুষের জীবন ত্যাগের ইতিহাস

ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস, মানুষের জীবন ত্যাগের ইতিহাস
ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস, মানুষের জীবন ত্যাগের ইতিহাস  © সংগৃহীত

চিরায়ত বন্ধন আর বিশ্বাসের সম্পর্কের নামই ভালোবাসা। আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘বিশ্ব ভালবাসা দিবস’। বছরজুড়ে ভালোবাসা চললেও দিনটি যেন একটু বেশি করেই ভালোবাসার। ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা, না ভালোবাসা থেকে ভালোলাগা এ নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও ভালোবাসার গভীরতম উপলব্ধি নিয়ে কোন বিতর্ক নেই। যদিও বলা হয় ভালোবাসার জন্য নির্দিষ্ট কোনও দিন বা তারিখ নেই। সপ্তাহের সাত দিন এবং বছরের ৩৬৫ দিনই ভালোবাসার দিন। 

তরুণ-তরুণীরা এদিন ভালোবাসার রঙে হৃদয়কে রাঙিয়ে তোলেন। নিজের ভালোবাসার মানুষকে প্রপোজ করা, বিভিন্ন উপহারের পাশাপাশি লাল গোলাপ দেওয়া, তাকে নিয়ে ঘুরতে বের হওয়াসহ নানা কর্মকাণ্ডে মেতে ওঠেন তরুণ-তরুণীরা। পুরুষরা লাল পাঞ্জাবি আর নারীরা লাল-সাদা শাড়ি বা অন্য পোশাক পরে বেরিয়ে পড়েন দিনটিকে বিশেষভাবে উদযাপনের জন্য। মনের যতো না বলা কথা, সব যেন ছড়িয়ে পড়ে ভালোবাসার সুরে।

তবে প্রতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারিই কেন ভালোবাসা দিবস উদযাপন করা হয় এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে অনেকের। প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, ভালোবাসার জন্য এই দিনে মানুষের জীবন ত্যাগের ইতিহাস। ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলেই জানা যায়, সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগের গাঁথা।

২০১৪ সালে সৌদি আরবের পুলিশ ভ্যালেন্টাইন ডে পালনের দায়ে সে দেশে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে। আর ইরান, পাকিস্তান, মালয়েশিয়ায় ভ্যালেন্টাইন ডে উদযাপন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। কেবল মুসলিম দেশ নয়, ভারত সরকারও তাদের নিজস্ব সভ্যতা, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক মনে করায় দিবসটি পালনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেয়।

প্যাগান ধর্মের লোকজন খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে পূর্বপুরুষদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত ফেব্রুয়ালিয়া পূজা পালন করতেন। এই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠানের নামানুসারে পরবর্তীতে ইংরেজি মাসের নামকরণ করা হয় ফেব্রুয়ারি। তখন ফেব্রুয়ারি মাসের ১৩ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত এই পূজা হতো। পূজার উদ্দেশ্য ছিল দেবতার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে পুণ্যতা, উর্বরতা ও সমৃদ্ধি লাভ করা। অনুষ্ঠানের মাঝের দিনটি ছিল খুবই আকর্ষণীয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি দেবীরাণী জুনোর সম্মানে পবিত্রতার জন্য কুকুর আর উর্বরতার জন্য ছাগল উৎসর্গ করা হতো।উৎসর্গীকৃত কুকুর ও ছাগলের রক্তে রঞ্জিত হয়ে যুবকেরা চামড়ার তৈরি সামান্য পোশাক পরতো।তারপর চামড়ার বেত দিয়ে দেবীর নামে তরুণীদের শরীরে আঘাত করতো।

আরও পড়ুন: শুধু প্রেমের সপ্তাহে নয়, ভালোবাসা হোক সারা জীবনের

সে সময়ের মানুষ বিশ্বাস করতো, এই আঘাতের কারণে দেবী ওই তরুণীদের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেবেন।দিনটির আরও একটি বিশেষত্ব হলো, এ দিনেই পরবর্তী এক বছর আনন্দ দেওয়ার জন্য দেবীর ইচ্ছায় লটারির মাধ্যমে তরুণরা তাদের তরুণী সঙ্গীকে বেছে নিতেন। প্রথানুযায়ী বড় একটি বাক্সে তরুণীদের নাম লিখে রাখা হতো। সেখান থেকে তরুণরা একেকটি নাম তুলে পরবর্তী বছর লটারি হওয়া পর্যন্ত নির্বাচিত যুগল একসঙ্গে থাকার সুযোগ পেতেন। 

ইতিহাস মতে, রক্তপিপাষু রোমান সম্রাট ক্লডিয়াসের দরকার এক বিশাল সৈন্যবাহিনীর। কিন্তু কেউ তার সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে রাজি নয়। সম্রাট লক্ষ্য করলেন যে, অবিবাহিত যুবকরা যুদ্ধের কঠিন মুহূর্তে অত্যধিক ধৈর্যশীল হয়। ফলে তিনি যুবকদের বিবাহ কিংবা যুগলবন্দি হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। যাতে তারা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে অনীহা প্রকাশ না করে। তার এ ঘোষণায় দেশের যুবক-যুবতীরা ক্ষেপে যায়। যুবক সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামের এক ধর্মযাজকও সম্রাটের এ নিষেধাজ্ঞা কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি।

প্রথমে তিনি সেন্ট মারিয়াসকে ভালোবেসে বিয়ের মাধ্যমে রাজার আজ্ঞাকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং তার গির্জায় গোপনে বিয়ে পড়ানোর কাজও চালাতে থাকেন। একটি রুমে বর-বধূ বসিয়ে মোমবাতির স্বল্প আলোয় ভ্যালেন্টাইন ফিস ফিস করে বিয়ের মন্ত্র পড়াতেন। কিন্তু এ বিষয়টি একসময়ে সম্রাট ক্লডিয়াসের কানে গেলে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। ২৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি সৈন্যরা ভ্যালেন্টাইনকে হাত-পা বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে সম্রাটের সামনে হাজির করলে তিনি তাকে হত্যার আদেশ দেন। ওই দিনের শোকগাঁথায় আজকের এই ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’।


সর্বশেষ সংবাদ