স্কুলছাত্রীরাই বেশি যৌন হয়রানির শিকার
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২২, ০৯:২৬ AM , আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২২, ০৯:২৬ AM
দেশে করোনা মহামারীকালীন সময়েও ৮১০ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ২০২১ সালের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ২২৫টি দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ১৯২ টি ধর্ষণের চেষ্টা হয়েছে একই সময়ে। একইসাথে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণীতে পড়া মেয়ে শিশুরা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। চালকদের দ্বারা ৫ শতাংশ কন্যা শিশু ও ৩ শতাংশ নারী সবচেয়ে বেশি ধর্ষণ ও দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। আর শিক্ষক কর্তৃক উত্যক্তকরন ও যৌন হয়রানি এবং ধর্ষণের চেষ্টার শিকার ১৭ শতাংশ কন্যা শিশু ও ১৩ শতাংশ নারী।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বুধবার (১৬ নভেম্বর) ‘বাংলাদেশে নারী ও কন্যা নির্যাতন চিত্র ২০২১: ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা, যৌন হয়রানি ও যৌতুক’ শীর্ষক সমীক্ষার তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরার সময় এসব তথ্য জানায়। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় সংগঠনটির সুফিয়া কামাল ভবন মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব তথ্য তুলে ধরেন।
মহিলা পরিষদ আরও জানায়, উত্যক্তকরন ও যৌন হয়রানি ৯৬ টি ও যৌতুক ১১৪ টি ঘটনা ঘটেছে পুরো বছরে। নারীদের তুলনায় কন্যারা বেশি ধর্ষণের শিকার হয়েছে। যথাক্রমে ১৮, ১১ ও ৩১ শতাংশ ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা ও দলবদ্ধ ধর্ষণে শিকার হয়েছে ১৪-১৮ বছরের কন্যারা। ১০-১৩ বছরের শিশুরা ২২ শতাংশ ক্ষেত্রে উত্যক্তকরন ও যৌন হয়রানির শিকার।
যৌতুকের ক্ষেত্রে ১৮-২২ বছরের নারীরা সাধারণত বেশি নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। এই হার ২২ শতাংশ। কন্যাদের মধ্যে ৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বেশি। ধর্ষণের ক্ষেত্রে এই হার ৪৫শতাংশ, দলবদ্ধ ধর্ষণের ক্ষেত্রে ৫২শতাংশ এবং উত্ত্যক্তের ক্ষেত্রে ৬৭ শতাংশ বলে জানানো হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে।
জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, গৃহিণীরা কর্মজীবী নারীদের তুলনায় বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। যৌতুকের জন্য ৮৩ শতাংশ, ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, উত্যক্তকরন, ধর্ষণের চেষ্টায় যথাক্রমে ৩৬ শতাংশ, ৩৭ শতাংশ, ১৭ শতাংশ এবং ৪৬ শতাংশ গৃহিণী নির্যাতনের শিকার হন। ১৮ বছরের কম বয়স্কদের কন্যা এবং ১৮ বছরের বেশি বয়স্কদের নারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এই গবেষণায়।
আরও পড়ুন: ছাত্রী আন্দোলনে উত্তাল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
সমীক্ষার তথ্য বলছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিচিত মানুষ, বিশেষ করে নিকট আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয় শিশুরা। এসময় বলা হয়, তরুণদের সম্পৃক্ততা বেশি ধর্ষণের ক্ষেত্রে। অভিযুক্তদের মধ্যে ২৬ শতাংশের বয়স ১১-৩০ বছর। দলবদ্ধ ধর্ষণের ক্ষেত্রে ২৬ শতাংশের বয়স ১৬-৩০ বছর এবং উত্ত্যক্তের ঘটনায় ৮৫ শতাংশের বয়স ১৬-৩০ বছর বলে জানানো হয়েছে।
নারীরা নিজ গৃহে সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ এবং ঝুঁকির মধ্যে থাকে। নারী ও কন্যার প্রতি নারীর প্রতি অধস্তন মনোভাব ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি সহিংসতার মূল কারণ।
দেশের ১২টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে যৌতুক, উত্যক্তকরন ও যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ এবং ধর্ষণের চেষ্টা নারী ও কন্যা নির্যাতনের এই পাঁচটি ক্ষেত্র বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদরে প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার উপপরিষদ এই সমীক্ষা করে। সমীক্ষার তথ্য উপস্থাপন করেন গবেষণা কর্মকর্তা আফরুজা আরমান। সঞ্চালনা করেন প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার সম্পাদক রীনা আহমেদ।
সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম ও অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম, সম্পাদকমন্ডলী, সাংবাদিক এবং সংগঠনের কর্মকর্তারা।