আনন্দ স্কুলের ৩৭ শতাংশ শিক্ষার্থীই ঝরে পড়ছে

শিক্ষার্থী
শিক্ষার্থী  © প্রতিকী ছবি

২০০৫ সাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের রস্ক (রিচিং আউট অব স্কুল) প্রকল্পের আওতায় শুরু হয় শিক্ষার ব্যবস্থা। তবে রিচিং আউট অব স্কুল (রস্ক) প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত আনন্দ স্কুলের শিক্ষার্থী বৃদ্ধি পাওয়ার চেয়ে ঝড়ে পড়ার হার বেশি। 

‘বাংলাদেশে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষার কার্যকারিতা: রস্ক প্রকল্প থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে হতে জানা যায় রস্ক প্রকল্পে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার ৩৭ শতাংশ। এছাড়া স্কুল থেকে প্রশিক্ষণ নেয়ার পরও তার প্রশিক্ষণ বিষয়ে কোন কাজ কাজ করছেন না বলেও প্রতিবেদনে উঠে আসে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, পঞ্চম শ্রেণিতেই ঝরে পড়ে ৫৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। এছাড়া চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে ঝড়ে পড়ার হার ২৯ শতাংশ। আর আনন্দ স্কুল পাস ও এর বাইরের ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী ২৫ হাজার জনকে ২৭টি ক্যাটাগরিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সবচেয়ে বেশি—প্রায় ২২ শতাংশ সেলাইয়ে প্রশিক্ষণ নেয়। কিন্তু ৬৮ শতাংশ স্বনিয়োজিত কাজে যুক্ত।

২০০৫ সালে উপজেলা পর্যায়ে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত রস্কের প্রথম বাস্তবায়ন শুরু হয়। ২০১৪ সালে দ্বিতীয় পর্যায়ে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সী ৭ লাখ ২০ হাজার শিক্ষাবঞ্চিত শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে রস্ক-২ বাস্তবায়ন শুরু হয়। 

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, রস্ক-২ প্রকল্পে ২০১৭ সালে ১০টি সিটি করপোরেশনে ৫০ হাজার শিশুকে নিয়ে কার্যক্রম শুরু হয়। এছাড়া এ প্রকল্পের আওতায় ২০১৯ সালে গ্রামের আনন্দ স্কুলের মাধ্যমে ৫১টি জেলার ১৪৮ উপজেলার ৬ লাখ ৯০ হাজার শিক্ষার্থীর প্রাথমিক শিক্ষা শেষ হয়। শহরের ৩৪৬টি আনন্দ স্কুলের মাধ্যমে ৪৭ হাজার শিশুর প্রাথমিক শেষ হয় ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। 

পড়াশোনা চলাকালীন শিক্ষার্থীদের প্রতি মাসে ৩০০ টাকা করে দেয়া হত। তার পরেও শিক্ষার্থীরা কেন ঝড়ে পড়ছে এ বিষয়ে একটি জরিপ করে বিআইডিএস। বিআইডিএসের প্রতিবেদনে জানা যায়, ঝরে পড়ার ক্ষেত্রে আর্থিক বিষয় হচ্ছে অন্যতম। এছাড়া শ্রমজীবী অভিভাবকদের মানসিকতাও সমান দায়ী। পড়ালেখা করে সন্তান আয় করবে, সে জন্য তারা অপেক্ষা করতে চান না।

আরও পড়ুন: গুচ্ছে চূড়ান্ত আবেদন প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার, বেশি ‘এ’ ইউনিটে।

এছাড়া বিআইডিএসের প্রতিবেদনে উঠে আসে প্রাথমিক শেষ করার পর শিক্ষার্থীদের জন্য কোন দিকনির্দেশনা না থাকার কারণেও শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ছে।

বিআইডিএসের প্রতিবেদন অনুসারে, আনন্দ স্কুলের শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শেষ করার হার ৭২ শতাংশ হলেও নিম্নমাধ্যমিক পর্যায়ে পড়ছে মাত্র ৫৩ শতাংশ আর মাধ্যমিক পর্যায়ে ৩২ শতাংশের বেশি পড়ছে। এছাড়া উচ্চমাধ্যমিক বা তার ওপরের পর্যায়ে পড়তে পারছে মাত্র ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থী।

পঞ্চম শ্রেণি পাস করেই ঝড়ে যাওয়া দুই ভাই মো. রায়হান (১৬) ও আবদুল হামিদ (১৫)। তাদের মা লায়লা জানান, স্বামীর আয়ে সংসার চলে না। তাই ছেলেদের কাজে দিয়েছেন। কিশোর দুই ভাই মাসে ১১ হাজার টাকা আয় করে।

অপরদিকে রস্ক-২ প্রকল্পের আওতায় ২০১৭ সাল থেকে ৯০টি উপজেলায় প্রশিক্ষণ যুক্ত করা হয়। পূর্ব কারিগরি প্রশিক্ষণ (পিভিটি) নামে আনন্দ স্কুল পাস ও এর বাইরের ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী ২৫ হাজার জনকে ২৭টি ক্যাটাগরিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। 

কিন্তু প্রশিক্ষণের পর প্রায় ৫৪ শতাংশ বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হলেও ৬৮ শতাংশ স্বনিয়োজিত কাজে যুক্ত। প্রশিক্ষণ সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম না থাকায় তারা অন্য কাজে ঝুঁকছেন।

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নে তিন মাসের প্রশিক্ষণ নিয়েও কাজে না লাগা মো. ইব্রাহিম জানান, বাড়িতে কম্পিউটার না থাকায় চর্চা নেই। প্রশিক্ষণ নেয়া নয়াপাড়ার উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্রী আফসানা আক্তার ও আমিনা আক্তার কম্পিউটারে প্রশিক্ষণ নিলেও এখন কম্পিউটারের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।

এ প্রসঙ্গে বিআইডিএসের জ্যেষ্ঠ গবেষক এবং জরিপে নেতৃত্ব দেওয়া এস এম জুলফিকার আলী বলেন, অনেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে সে কাজ করছেন না। ভবিষ্যতে এমন প্রকল্প নেওয়ার সময় সতর্ক থাকতে হবে। প্রশিক্ষণের বিষয় এমনভাবে বাছাই করতে হবে, যেন প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রশিক্ষণার্থীরা কাজে লাগাতে পারেন। 


সর্বশেষ সংবাদ