আর নয় দুর্ঘটনা, সড়ক হোক স্বস্তির

জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসে নিজেদের মতামত জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসে নিজেদের মতামত জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা  © টিডিসি ফটো

চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের উচ্চারিত করুণ স্বর প্রতিধ্বনিত হয় দেশের প্রতিটি জনপদে। শিক্ষার্থীদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে গড়ে তোলা প্রতিবাদ এখনও চলে হরদম, মায়ের বুক ফেটে বেরিয়ে যাওয়া শিশু জানে না কি তার অপরাধ তবুও থামে না সড়কে মৃত্যর মিছিল। জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসে বিষয়গুলো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ভাবনা তুলে ধরেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের তানভীর আহম্মেদ।

সারা বছরই সড়ক হোক নিরাপদ 

প্রতি বছর ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস আসলে সড়কে জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একটি বহুমুখী আন্দোলন। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সচেতনতা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন সভা-সেমিনারেরও আয়োজন করে। কিন্তু দিন যেতে না যেতেই পরিস্থিতি আগের অবস্থায় ফিরে আসে। ফলে বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও আমাদের সড়ক-মহাসড়ক নিরাপদ নয়। সড়ক নিরাপত্তা ফাউন্ডেশন বা বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সড়কে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। মৃত্যুর এই অগ্রযাত্রা ঠেকাতে প্রয়োজন বাড়তি সচেতনতা। বৃহত্তর স্বার্থে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে। নিরাপদ সড়ক আইনের যথাযথ বাস্তবায়নে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। আশা করা যায়, জনসাধারণের দাবি শুধু একদিনে নয়, বছরের প্রতিটি দিনই হবে। সচেতনতা অব্যাহত থাকলে সড়ক নিরাপদ হবে, জানমালের নিরাপত্তা হবে।

শিহাব উদ্দিন
শিক্ষার্থী, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, ৪র্থ বর্ষ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় 

নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়ন করতে হবে

বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত ও দুশ্চিন্তার বিষয় সড়ক দুর্ঘটনা। অনাকাঙ্খিত এ ঘটনায় হারিয়ে যাচ্ছে হাজারো মানুষ, ধূলিসাৎ হচ্ছে হাজারো স্বপ্ন। প্রায় প্রতিদিনই সংবাদপত্রে ছাপা হয় সড়ক দুর্ঘটনার হৃদয় বিদারক দুঃসংবাদ। আজকাল শহরের ব্যস্ততম রাস্তায় পায়ে হেঁটে বা যানবাহনে চলাফেরা রীতিমত বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, সঠিক সময়ে কেউ ঘরে না ফিরলে মনে ভয় চাপে সড়কে কোন দুর্ঘটনা হলো নাতো। নানাবিধ কারণে ঘটছে এমন দুর্ঘটনা। তবে, বেপরোয়া গাড়ি চালানো এর প্রধান কারণ। দেশে অদক্ষ চালকের সংখ্যা অনেক বেশি, এরাই দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটায়। তাছাড়াও মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো, ওভারটেকিং, গতি প্রতিযোগিতা, ফিটনেস বিহীন গাড়ী উল্লেখযোগ্য কারণ। আছে জনসাধারণের অসাবধানতা, অসেচতনতা। সরকারের অবহেলা, উদাসীনতাও এর জন্য দায়ী। সরকারের প্রতিটি সংস্থা ও প্রশাসনের কঠোর নজরদারী এক্ষেত্রে একমাত্র এর থেকে রেহাই দিতে পারে। পাশাপাশি জনগণকেও সচেতন হতে হবে। আমাদের একটু সচেতনতা আমাদের সুন্দর জীবনটাকে বাঁচিয়ে রাখার কারণ হতে পারে। এজন্যই পরিবার, বিদ্যালয়,টেলিভিশনে ট্রাফিক নিয়ম-কানুন প্রচার আর প্রদর্শন করতে হবে বেশি করে। পরিশেষে এটাই বলতে চাই দুর্ঘটনা কারো কাম্য নয়। আমরা সবাই পরিষ্কার, নিরাপদ সড়ক চাই। এটা আমাদের দাবি এটা বাস্তবায়ন করতে হবে। 

মালিহা আসলাম অপ্সরা
শিক্ষার্থী, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ, এইচএসসি, ২য় বর্ষ
সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ

সর্বক্ষেত্রে সচেতনতা জরুরি

কর্মব্যস্ত এই দুনিয়াতে যাতায়াত অবশ্যম্ভাবী ঘটনা। বাংলাদেশে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম সড়কপথ। আর এই পথেই প্রতিনিয়ত ঘটছে নানারকম দুর্ঘটনা। এটি এখন নিরাপদ জীবনযাপনের সার্বক্ষণিক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার ফলে নির্বিচারে প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। সড়কে এমন দুর্ঘটনা নানা কারণে ঘটে থাকে তার মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলাে অপ্রশস্ত রাস্তা, অতিরিক্ত যানবাহন, ট্রাফিক ব্যবস্থার ত্রুটি, ভাঙা রাস্তা, গাড়ির ত্রুটিপূর্ণ ইঞ্জিন এবং চালকের অমনোযোগিতা, দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালকের অভাব, অতিরিক্ত যাত্রী ওঠানাে, অসাবধানে রাস্তা পারাপার, অনিয়ন্ত্রিত ওভারটেকিং ইত্যাদি। দুর্ঘটনা যেভাবেই ঘটুক না কেন এর ফলাফল অত্যন্ত ভয়ংকর। মানব সম্পদের বিনাশ এই সড়ক দুর্ঘটনার সবচেয়ে বড় ক্ষতি। সড়কে এমন মরণ ছােবল থেকে মুক্তির উপায় বের করা অত্যন্ত জরুরি। এসব দুর্ঘটনা এড়াতে প্রয়ােজন ট্রাফিক আইনের আধুনিকীকরণ, আইন প্রয়ােগে আন্তরিক হওয়া, রাস্তা সংস্কার করা, চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া ইত্যাদি। এজন্য সকলকে উদ্বুদ্ধ হতে হবে এবং প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে পথচারীগণ সচেতন হলে তবেই সড়ক হবে নিরাপদ, নিশ্চিত হবে নাগরিক জীবন।

‘‘কখনো বাড়িতে না ফেরার চেয়ে দেরিতে ফেরা ভালো’’।

‘‘জীবনের মূল্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি’’।

মোঃ তানজিলুল আলম (তামিম) 
শিক্ষার্থী, ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সাইন্সেস অনুষদ, ৩য় বর্ষ
গণ বিশ্ববিদ্যালয় 

সমন্বিত উদ্যোগই পারে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করতে

সড়ক দুর্ঘটনা এখন একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। খবরের কাগজে কিংবা টেলিভিশনের পর্দায় চোখ মেললেই মিলে এমন দুর্ঘটনার খবর। মর্মান্তিক এই ঘটনাগুলো কেড়ে নিচ্ছে কারো না কারো স্বপ্ন, কোন না কোন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ব্যক্তিজীবনে তো বটেই পারিবারিক ও সামাজিক, অর্থনৈতিক জীবনেও এটি একটি অভিশাপ। কতো নামকরা তারকা, গুণী ব্যক্তিত্ব, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, দক্ষ ও চৌকস লোকের জীবন গ্রাস করে এই সড়ক যে ক্ষতি করেছে তা অপূরণীয়। অথচ, মরণফাঁদ নিয়ে নেই যেন কারো মাথা ব্যথা। অসংখ্য, লাইসেন্স ও ফিটনেস বিহীন গাড়ি চলাচল করে রাস্তায়। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালায় অদক্ষ চালকরা। এগুলোর হয়না কোন মনিটরিং। অনেক চালক মাদকাসক্ত হয়ে গাড়ি চালায়, দীর্ঘ যাত্রায় ঘুমিয়ে পড়ে কেউ কেউ। এদিকে, ফুটপাত বেদখলের কারণে রাস্তা হয়ে যায় সরু, পথচারীরা ও ঠিকভাবে ব্যবহার করে না  ফুটওভার ব্রিজ। ফলাফল প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। এটি প্রতিরোধে জনগণকে যেমন সচেতন হতে হবে তেমন চালকদেরও। প্রশাসনের কঠোর নজরদারী, রাষ্ট্রীয় নিয়মনীতি-ব্যবস্থা সর্বোচ্চ জোরদার করা প্রয়োজন। সঠিক ব্যবস্থায় একমাত্র দক্ষ চালকদের লাইসেন্স প্রদান করা,  ট্রাফিক আইন মেনে চলা এবং ফুটপাত দখলমুক্ত করা, ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার নিশ্চিত করা, জনগনকে সচেতন করে তোলার মাধ্যমে অনেকাংশে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। সেই উদ্যোগেই আমাদের সচেষ্ট হতে হবে।

মোছাঃ আঁখি খাতুন 
শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, ৩য় বর্ষ 
রাজশাহী কলেজ


সর্বশেষ সংবাদ