যে কারণে বিশ্বসেরার কাতারে নেই দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২২, ১১:৪৮ AM , আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২২, ১২:০৭ PM
যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী টাইমস হায়ার এডুকেশন (টিএইচই) প্রকাশিত র্যাঙ্কিংয়ে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের মাত্র পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া আরও ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় তালিকায় থাকলেও র্যাঙ্কিংয়ে স্থান পায়নি। এ দুই ভাগের কোথাও বাংলাদেশের ১৪৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামই আসেনি। এ জন্য তথ্যগত ঘাটতিকে বড় কারণ বলছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া অধিকাংশ সূচকে পিছিয়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
দেশের বিশ্ববিদ্যালগুলোর মধ্যে শীর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। সাত বছর পর র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির। তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে বেসরকারি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি এবং তৃতীয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। বুধবার (১২ অক্টোবর) এ তালিকা প্রকাশ করে টাইমস হায়ার এডকেশন। বিশ্বের ১০৪টি দেশের এক হাজার ৭৯৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল্যায়নের ভিত্তিতে এ র্যাঙ্কিং করা হয়েছে।
কয়েকটি মানদণ্ডে এ র্যাঙ্কিং করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষাদান (টিচিং), গবেষণা (রিসার্চ), গবেষণা-উদ্ধৃতি (সাইটেশন), আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি (ইন্টারন্যাশনাল আউটলুক) এবং ইন্ডাস্ট্রি ইনকামের (শিল্পের সঙ্গে জ্ঞানের বিনিময়) ওপর ভিত্তি করে তালিকাটি করা হয়েছে। তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৬০১-৮০০-এর মধ্যে। ২০১৯, ২০২০ ও ২০২১ সালে এক হাজারে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। ২০২২ সালে ঢাবির অবস্থান ৮০১-১০০০-এর মধ্যে।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় পর্যাপ্ত বরাদ্দের অভাব ও বাজেটের স্বল্পতা রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক এবং দায়িত্বশীলদের দুর্নীতি রয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সততা, মূল্যবোধের অভাব আছে। দক্ষতার ঘাটতিতে চাকরির বাজারে সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। রাজনীতির প্রভাবও কম নয়। শিক্ষার চেয়ে রাজনীতি চর্চায় মনোযোগী শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। এসব উচ্চশিক্ষার দৈন্যদশার মূল কারণ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেছেন, গবেষণাকেন্দ্রিক বিষয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে গুণগত উচ্চশিক্ষা নিশ্চিতের লক্ষ্যে। তারই প্রতিফলন ঘটেছে র্যাঙ্কিংয়ে। এবার সাইটেশনসহ কয়েকটি সূচকে ঢাবি ভালো করেছে। সামনের দিনে বিশ্ববিদ্যালয় আরো ভালো করবে।
আরো পড়ুন: সাত বছর পর বিশ্বসেরা র্যাংকিংয়ে এগোল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
তালিকায় বেসরকারি নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ৬০১ থেকে ৮০০ এর মধ্যে। বাকৃবি রয়েছে ১২০১ থেকে ১৫০০ এর মধ্যে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থানও এর মধ্যে। তালিকায় ছয় বছর ধরে এক নম্বরে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। এরপরে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। চতুর্থ ম্যাসাচুসেট ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ে সেরা ৫০ দূরের কথা একশটির মধ্যেও নেই। চাকরির বাজারে সুনাম, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত, শিক্ষকপ্রতি গবেষণা-উদ্ধৃতি, প্রাতিষ্ঠানিক সুনাম, আন্তর্জাতিক শিক্ষক অনুপাত ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী অনুপাত- র্যাংকিংয়ে আসতে হলে এ সূচকগুলোই দেখা হয়। গড়পড়তায় লেখাপড়ার চেয়ে এ দিকগুলোয় বেশি নজর দেওয়া উচিত।
অধ্যাপক তাহমিনা খানম বলেন, গবেষণার সঠিক তথ্য-উপাত্ত অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটেও পাওয়া যায় না। এখানে গবেষণার বদলে মুখস্থনির্ভর ও চাকরিকেন্দ্রিক পড়ালেখা চলে। শিক্ষার্থীদের হাতে দেওয়া হচ্ছে পাঠ্যবই, লেকচার শিট, মুখস্থনির্ভর পরীক্ষা, নামমাত্র রিসার্চ পেপার। শিক্ষকরা ঠিকভাবে দেখেনও না। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় তালিকায় শীর্ষে আছে, এগুলো মূলত গবেষণানির্ভর। বাজেটের বেশির ভাগই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় ব্যয় হয়।
আরো পড়ুন: টাইমস হায়ার র্যাঙ্কিংয়ে সেরা ঢাবি, দ্বিতীয় নর্থ সাউথ
টাইমস হায়ার এডুকেশনের র্যাঙ্কিং নির্ধারণে সূচকগুলো বিশদ ব্যাখ্যাও রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, শিক্ষাদান সূচকটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক মান, অর্থাৎ র্যাঙ্কিংয়ে নির্ধারণের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হয়। দ্বিতীয় সূচক গবেষণায় দেখা হয় সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাকর্মের খ্যাতি-জরিপ, গবেষণা থেকে আয় এবং গবেষণার সংখ্যা ও মান।
গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি সূচক হচ্ছে গবেষণা-উদ্ধৃতি। এ ক্ষেত্রে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত কাজ বিশ্বব্যাপী গবেষকদের কতসংখ্যকবার উদ্ধৃত হয়। আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি সূচকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী-কর্মী অনুপাতের সঙ্গে দেখা হয় আন্তর্জাতিক যুক্ততাও।
ইন্ডাস্ট্রি ইনকামে আবিষ্কার, উদ্ভাবন ও পরামর্শের মাধ্যমে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পকে সহযোগিতার সক্ষমতা দেখা হয়। অর্থাৎ ব্যবসায়ীরা গবেষণায় অর্থ ঢালতে কতটা উৎসাহী এবং বাণিজ্যিক বাজারে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বিশ্ববিদ্যালয় কতটুকু সক্ষম, সেটিই এ সূচকের মূল কথা।