‘হিরো আলমের অজ্ঞতা কোনো ক্রাইম নয়’
যখন বাংলাদেশে ছিলাম, আমার বাড়িতে গোয়েন্দা পুলিশের লোক আসতো, জানতে চাইতো আমি ''লজ্জা'' বইটি কেন লিখেছি। একঘণ্টা- দু' ঘণ্টা থাকতো, আর নানা প্রশ্ন করে যেত। আমি সোজা উত্তর দিতাম, 'আমি যা দেখেছি, যা শুনেছি, যা পড়েছি, যা উপলব্ধি করেছি, তার ভিত্তিতেই লিখেছি লজ্জা'।
এরপর এল ''ফেরা'' বইটি কেন লিখেছি জানতে। বলেছি, 'ফেরা একটি উপন্যাস, আমার কি উপন্যাস লেখার অধিকার নেই?' ওদের কথায় মনে হতো আমার সেই অধিকার নেই। আমাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে একের পর এক প্রশ্ন করে যেত। প্রতিটি অদ্ভুতুড়ে প্রশ্নের উত্তর আমি শান্ত কণ্ঠে দিয়েছি, এবং কঠিন কণ্ঠে এও জানিয়ে দিয়েছি, 'তোমরা যতই বাড়ি বয়ে এসে আমাকে ভয় দেখাও, থ্রেট করো, আমার যা ইচ্ছে করে লিখতে, আমি তা-ই লিখে যাবো।'
আমাকে ডিবির লোকেরা নব্বইয়ের দশকের শুরুতে যে কারণে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেছিল, এবং থ্রেট করেছিল, তা হলো, আমি সচেতনতা ছড়াচ্ছিলাম সমাজে, সাম্প্রদায়িকতা আর অরাজকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছিলাম। আজও সচেতন মানুষের বাকস্বাধীনতাকে সরকার অপরাধ হিসেবে দেখে। তাই পুলিশকে লেলিয়ে দেয় সচেতনতা বন্ধ করতে।
আরও পড়ুন: টিকেট না পেয়ে সিঁড়িতে বসে ‘হাওয়া’ দেখলেন নায়িকা!
বাংলাদেশের হিরো আলম একটা অজ্ঞ, অশিক্ষিত, গুণহীন, ভাঁড় জাতীয় কুৎসিত লোক। সে বাংলা শব্দের উচ্চারণ জানে না, সে বাংলায় কথা বলে। সে গান জানে না, গান গায়। সে নাচতে জানে না, নাচে। সে রাজনীতি জানে না, রাজনীতি করে। সে জানেও না যে সে জানে না এসব। এই ভাঁড়টাকে পুলিশ ডেকে নিয়ে তার ভাঁড়ামো বন্ধ করতে বলেছে। বলেছে যা তুই জানিস না, তা তুই করবি না। মূর্খটা ভয় পেয়ে নাকে খত দিয়ে এসেছে, আর এসব ছাইপাঁশ করবে না।
প্রশ্ন হলো, পুলিশের কাজ কি মানুষকে বলা যা তুই পারিস না তা তুই করবি না? সাহিত্য সংস্কৃতির বিশুদ্ধতা বজায় রাখার ভার পুলিশকে কে দিয়েছে? যে কারও গান যে কেউ গাইতে পারে, হিরোর ছাইপাঁশ যাদের অপছন্দ তারা তার ছাইপাঁশ দেখবে না, ব্যস মিটে গেল। কপিরাইট ইস্যু যেখানে, সেখানে তার বিরুদ্ধে মামলা করবে কপিরাইটওয়ালারা। পুলিশের কাজ নয় শাসানো। পুলিশ তো দেখছি মানুষের ব্যক্তি জীবনেও এরপর নাক গলাবে, কে কার সঙ্গে প্রেম করছে, কে কার সঙ্গে শুচ্ছে, কে হিজাব পরছে না, কে দাড়ি রাখছে না, এসব নিয়ে প্রশ্ন করতে যাকে তাকে থানায় ডেকে নেবে। পুলিশের কাজ সমাজের ক্রাইম বন্ধ করা। প্রেম করা, সেক্স করা, হিজাব না পরা, দাড়ি না রাখা কোনও ক্রাইম নয়। হিরো আলমের অজ্ঞতাও কোনও ক্রাইম নয়, তার মূর্খতা, গুণহীনতাও কোনও ক্রাইম নয়।