বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় শিক্ষা ও সহায়তা ট্রাস্ট

আরিফুল ইসলাম
আরিফুল ইসলাম  © ফাইল ছবি

শিক্ষাকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেবার জন্য বাংলাদেশ সরকার নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো- শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট। সুবিধাবঞ্চিত গরিব ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট আইন, ২০১২ প্রণয়ন করা হয়েছে, গঠন করা হয়েছে শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট।

অর্থের অভাবে শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে বৃত্তি প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালের ২০ এপ্রিল একটি ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের লক্ষ্যে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে একটি লিখিত নির্দেশনা প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রণীত প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট আইন, ২০১১ সালের ১২ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভার চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করে। ২০১২ সালের ১১ মার্চ নবম জাতীয় সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট বিল, ২০১২ পাস হয়। 

প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট এর স্থায়ী তহবিল হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সিডমানি হিসেবে এক হাজার কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে যা বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি তফসিলি ব্যাংকে এফ ডি আর হিসেবে রক্ষিত আছে। উক্ত এফ ডি আর থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ দ্বারা ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তি ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে স্নাতক ও সমমান পর্যায়ের শুধুমাত্র নারী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি  প্রদান কার্যক্রম শুরু করা হয়। ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে ছাত্রীদের পাশাপাশি ছাত্রদেরকেও উপবৃত্তি কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষে সকল উপবৃত্তি প্রকল্প প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টে স্থানান্তরিত হবে মর্মে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

আরও পড়ুন: সামাজিক নিরাপত্তায় গৃহহীনদের আবাসন কর্মসূচিঃ শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব

প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী, এতিম, অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান, নদীভাঙ্গন কবলিত পরিবারের সন্তান এবং দুস্থ পরিবারের সন্তানগণ উপবৃত্তি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে। এছাড়াও তৃতীয় লিঙ্গের সকল শিক্ষার্থী উপবৃত্তি প্রাপ্য হবে এবং এদের তালিকা পৃথক ভাবে প্রেরণ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট উপবৃত্তি বিতরণের পাশাপাশি দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি নিশ্চিতকরণে ভর্তি সহায়তা প্রদান করে থাকে। এ লক্ষ্যে দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি  নিশ্চিতকরণে ভর্তি সহায়তা প্রদান নির্দেশিকা, ২০২০ প্রণয়ন করা হয়। বর্তমানে দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি নিশ্চিতকরণে মাধ্যমিক পর্যায়ে ৫,০০০ টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ৮,০০০ টাকা এবং স্নাতক ও সমমান পর্যায়ে ১০,০০০ টাকা হারে ভর্তি সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। 

প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের এককালীন চিকিৎসা অনুদান প্রদান করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এ লক্ষ্যে দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের  এককালীন চিকিৎসা অনুদান প্রদান নির্দেশিকা, ২০২০ প্রণয়ন করা হয়। দুর্ঘটনার কারণে গুরুতর আহত দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের এককালীন চিকিৎসা অনুদান প্রদানের ফলে অর্থাভাবে চিকিৎসা বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষায় ব্যাঘাত ঘটবে না তথা তাদের শিক্ষা কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত হবে। এ নির্দেশিকার আলোকে এককালীন ১০ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা অনুদান হিসেবে প্রদান করা হচ্ছে।

উন্নত সমৃদ্ধ জাতি গঠনে, টেকসই উন্নয়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের উদ্যোগে অনন্য মেধাবী শিক্ষার্থীদের স্বীকৃতি ও উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে দেশের সকল সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বঙ্গবন্ধু স্কলার নামে বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

উচ্চতর গবেষণায় পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের মাধ্যমে উন্নত জ্ঞান আহরণ, উদ্ভাবন এবং প্রয়োগের বিস্তৃতি সাধন করা এবং তা ফলপ্রসুভাবে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল বা পিএইচডি কোর্সে নিবন্ধিত বা গবেষণায় নিয়োজিত গবেষককে শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে ফেলোশিপ ও বৃত্তি প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

লেখক: শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ