সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষক আর মানুষের পর্যায়ে নেই
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা অডিও ফাঁস হয়েছে। সেখানে শুনা যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসির পিএস টেলিফোনে কোন রকম সঙ্কোচ না করে খুব পরিষ্কার করে একজন প্রভাষক পদপ্রার্থীকে বলেছেন ‘‘ম্যাডাম যদি হ্যাঁ বলে, অর্ধেক পেমেন্ট দিয়ে দিতে হবে। বাকিটা এপয়েনমেন্ট লেটার পাবার পর।’’
এরপর এই লোক বলছেন ‘‘ম্যাডাম যদি না বলে, তাহলে প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশেও কাজ হবে হবে না।’’
ওপাশ থেকে প্রভাষক পদপ্রার্থী জিজ্ঞেস করেছেন
-কতো দিতে হবে?
-১৬ লাখ টাকা।
এরপর তিনি বলেন ‘‘গতবার আমি তোমার ভাবির জন্য চেষ্টা করেছি। শুধু টাকা দেই নাই বলে হয় নাই। সোজা কথা যেটা, বাস্তবতা যেটা, সেটাই শুধু বললাম।’’
তো এরপর এই পদের নিয়োগও হয়েছে। কারা নিয়োগ পেয়েছে, সেটা নিশ্চয় পরিষ্কার বুঝতে পারছেন। এই অডিও ফাঁস হওয়ার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ওই নিয়োগ শুনেছি স্থগিত করেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে অন্য নিয়োগগুলোর কি হবে? যেগুলোর অডিও ফাঁস হয়নি?
আরও পড়ুন: চবিতে শিক্ষক হতে লাগবে ১৬ লাখ টাকা!
এভাবেই আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলছে। আমার একদম ফার্স্ট হ্যান্ড অভিজ্ঞতা বরং বলি। এখন থেকে এক যুগ আগের কথা। সুইডেন থেকে মাস্টার্স শেষ করে ঢাকার নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করছি তখন। আমার এক বন্ধু কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক পদে নিয়োগ পেয়েছে। আমি তার সাথে জয়েনিং-এর দিন কুষ্টিয়া গিয়েছি। তো সেখানে অন্য আর যারা প্রভাষক পদে নিয়োগ পেয়েছে; তারা প্রকাশ্যে একজন আরেকজনকে জিজ্ঞেস করছে
-আপনি কতো দিয়েছেন?
-৮ লাখ।
অন্যজন বলেছে
- আমার কাছ থেকে দুই লাখ বেশি রেখেছে তাহলে।
এইসব কথা এরা তখনকার প্রোভিসির সামনে প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছে। আমি নিজে সেখানে ছিলাম। অর্থাৎ এটি কোন ব্যাপারই না এদের কাছে! এইসব দেখে আমার চোখ কপালে উঠার জোগাড় হয়েছিলো।
এই হচ্ছে আমাদের মেধাবী শিক্ষক সমাজ। কারা এই দেশে শিক্ষকতা করছে, বুঝতে আর বাকি থাকার কথা নয়। পুরো দেশটাকে এরা পঙ্গু করে ছাড়ছে।
আমি সপ্তাহ দুয়েক আগে বাংলাদেশের প্রায় সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদেরকে একটা ই-মেইল করেছি। একটা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া আজ অবদি অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমি উত্তর পাইনি। এই বিষয়ে আমি একটা লেখা লিখবো। তাই আজ আর এই নিয়ে বলছি না।
স্রেফ এতটুকু বলি, বাংলাদেশে এখন যারা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ায়; এতের শতভাগ না হলেও বেশিরভাগ শিক্ষক আর মানুষের পর্যায়ে নেই। আর এরাই মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে নিজেদের বলে বেড়ায়! এরা নাকি এই দেশে বুদ্ধিজীবী।
আপনাদের জানিয়ে রাখি এক দশক আগে যারা কুষ্টিয়া ইউনিভার্সিটিতে টাকা দিয়ে প্রভাষক পদে জয়েন করেছিল; তারা এখন সবাই অধ্যাপক হয়ে গিয়েছে! ওই এলাকায় উনাদের অনেক নাম-ডাক! বুদ্ধিজীবী হিসেবে বেশ খ্যাতিও আছে উনাদের!
লেখক: সাবেক শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়