একটি স্কুল এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গল্প

হায়দরাবাদ পাবলিক স্কুল, হায়দরাবাদ
হায়দরাবাদ পাবলিক স্কুল, হায়দরাবাদ  © সংগৃহীত

হায়দরাবাদ পাবলিক স্কুল। ভারতের অন্ধপ্রদেশের রাজধানী হায়দরাবাদের বেগমপেট নামক এলাকায় অবস্থিত এ স্কুলটির সংক্ষিপ্ত নাম এইচপিএস। অন্য আট-দশটি স্কুলের সঙ্গে হায়দরাবাদ পাবলিক স্কুলের বিস্তর ফারাক রয়েছে। ভারতের রাজধানী দিল্লী, প্রযুক্তি শহর বেঙ্গালুরু, এমনকি বলিউড কিং আর পয়সাওয়ালাদের নিরাপদ শহর মুম্বাইও মার খেয়ে গেছে হায়দরাবাদের কাছে। কেননা বর্তমান বিশ্বের প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণই করছে হায়দরাবাদের এই স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থীরা। গ্লোবাল প্রযুক্তি আর হায়দরাবাদ পাবলিক স্কুল যেন পাশাপাশি চলে।

মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সত্য নাদেলা, অ্যাডোবির সিইও শান্তনু নারায়ণ ও মাস্টারকার্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান অজয়পাল সিং বাঙ্গা পড়েছেন এ স্কুলে। সত্য নাদেলার স্ত্রী অনুপম নাদেলাও এ স্কুলের শিক্ষার্থী। কেবল এই তিনজনই নয়, বিশ্বের সেরা প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর শীর্ষ পদে এ স্কুলের অসংখ্য শিক্ষার্থী রয়েছেন। অন্তত কয়েক ডজন রাইজিং প্রযুক্তি কোম্পানির মালিক রয়েছে এইচপিএস এ্যালামনাইরা। যাদেরকে ভাবা হয় আগামীর প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রক।

এইচপিএসের সাবেক প্রিন্সিপাল রমণদ্বীপ কাউর শর্মা দ্য ইকোনমিক টাইমসকে একবার বলেছিলেন, ‘এইচপিএস সেনাপতি তৈরি করে, পদাতিক সৈনিক নয়। আমরা চাই আমাদের শিক্ষার্থীরা নেতৃত্ব দিক, সেটা যে ক্ষেত্রে তাদের ইচ্ছা, ছোট হোক কিংবা বড়, তবে মনপ্রাণ দিয়ে।

গত মাসে টুইটারের সিইও হয়েছেন ভারতীয় পরাগ আগারওয়াল। মাত্র ৩৭ বছর বয়সী পরাগ যখন টুইটারের সিইও হয়েছেন, তখন সংখ্যাটা কেবল জায়ান্ট কোম্পানির ক্ষেত্রেই ১৭ ছাড়িয়ে গেছে। অর্থাৎ মাইক্রোসফট, গুগল, আইবিএম, অ্যাডোব, মাস্টারকার্ড, ভিমিওর মতো ১৭টি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সবাই ভারতীয়।

প্রযুক্তি বাজারের লিডিং প্রতিষ্ঠানগুলোর হেড-কোয়ার্টার যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিতে অবস্থিত। আমেরিকার মোট জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ ভারতীয়। কিন্তু সিলিকন ভ্যালিতে জনশক্তির হিসাবে এ সংখ্যা আবার ৬ শতাংশ। এই ৬ শতাংশের মধ্য থেকেই আবার বড় বড় প্রযুক্তি জায়ান্টের শীর্ষ পদে ভারতীয়দের আধিপত্য। এবং বলতে গেলে এই সংখ্যাটা প্রায় সবই ভারতের হায়দরাবাদ পাবলিক স্কুল এবং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউটস অব টেকনোলজির (আইআইটি) সাবেক শিক্ষার্থী। আইআইটিতে দেশজুড়ে এর ২৩টি শাখায় শিক্ষার্থীরা সরকারি খরচে পড়াশোনা করে। চলতি বছর আইআইটির ১৬ হাজার আসনের বিপরীতে ২২ লাখের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটির চেয়েও ভারতের আইআইটিতে ভর্তি হতে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয় ভর্তিচ্ছুদের।

১৯৮০-এর দশকে আইআইটির শিক্ষার্থীরা উন্নত সুযোগ-সুবিধা পেতে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন শুরু করেন। তাঁরা এখন সেই মার্কিন ভূখণ্ডে সাফল্যের নতুন নতুন রেকর্ড গড়ে চলেছেন। এখনও সেই ধারা অব্যহত আছে। প্রতিবছরই অনেক গ্র্যাজুয়েট ভারতের স্থানীয় প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেয়েছেন। অনেকে নিজেরাই তৈরি করছেন কোম্পানি। যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর জন্যও মেধা খোঁজার অন্যতম ক্ষেত্র আইআইটি কলেজগুলো। সিলিকন ভ্যালির প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলো ভারতের সেরা শিক্ষার্থীদের আকর্ষণীয় বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিয়ে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে চাকরির অফার করে। ফরচুন-৫০০ বা মার্কিন পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত শীর্ষ ৫০০টি কোম্পানির পরিচালনায় ভারতীয়দের ওপর আস্থা দিনদিন বাড়ছে। প্রায় প্রতিটি কোম্পানিতেই শীর্ষদিকের পদে ভারতীয় রয়েছে।

ধনীদের সংখ্যা বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয়। ছাড়িয়ে গেছে চীন-ভারতকে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ওয়েলথ এক্সের উপস্থাপিত তথ্য এটি। কেবল গত এক দশকে দেশে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে এক লাখ ২২ হাজার ৩৫৯ জন। বছরে গড়ে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে ১২ হাজার ২৩৫ জন। খাতা-কলমের বৈধ হিসাব এটি। দেশের পাগলেও বুঝে, কোটিপতিরা টাকার অঙ্কে প্রায় সবাই ফকির। কারণ সরকারের ট্যাক্স ফাঁকি দিতে হবে। অবৈধ টাকার হিসাব দিতে হবে। অবৈধ কোটিপতির সংখ্যা হিসাব করলে সংখ্যাটা কোটিও ছাড়িয়ে যেতে পারে।

এই দেশে একটি হায়দরাবাদ পাবলিক স্কুল হয়নি। হয়নি একটি আইআইটি। বস্তাপঁচা স্কুল হয়েছে, ধনীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। যেখানে পড়তে কাড়ি কাড়ি টাকা ঢালতে হয়। কিন্তু মানুষ তৈরি করা হয় না। স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতারা জনসেবার নামে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নেন। এই বিল, সেই বিলের নামে শিক্ষার্থীদের উপর চাপিয়ে দেন টাকার বোঝা। সেই টাকার টেনশনে কোনো শিক্ষার্থীর আর সুন্দর পিচাই, সত্য নাদেলা হয়ে ওঠেনা।

আরও পড়ুন: কোথাও শোক নেই, অপরাধবোধ নেই

আমার একটি স্বপ্ন আছে, একটা স্কুল করতে চাই। মানুষের স্কুল। যেখানে মানুষ তৈরি হবে, বিলিয়নিয়ার না। যেখানকার শিক্ষার্থীরা দেশকে ধারণ করে বিশ্বকে চ্যালেঞ্জ জানাবে। জানি প্রত্যাশার ঔদ্ধত্য, তবে স্বপ্ন দেখতে দোষ কি !

লেখক: সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence