সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা সবসময় ভাবতে হবে

  © টিডিসি ফটো

সরকারি তিতুমীর কলেজ বাংলাদেশের শিক্ষার্থী সংখ্যার দিক দিয়ে সর্ববৃহৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৫৮ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যায়ন করছেন। গত ২০ ডিসেম্বর কলেজের অনলাইনে ইনকোর্স পরীক্ষার বদলে অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়নের খবরে সকল শিক্ষার্থী আনন্দিত হয়েছেন এবং আতংকমুক্ত হয়েছেন। মাত্র ২ দিনের মধ্যে কলেজ প্রশাসন তাদের সিদ্ধান্ত বদল করবে এটি অবিশ্বাস্য ছিলো। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ একটা দৃষ্টান্ত।

গতকাল থেকে ফেসবুকে, টেক্সটের মাধ্যমে, ফোন করে অনেক শিক্ষার্থী আমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন, কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। এসব শিক্ষার্থীর অনেককে আমি চিনিও না। তাদের এই অনুভূতি ছুঁয়ে গেছে। আমার পরিচিত, আমার ক্লাবের সদস্যরা তারাও বেশ আনন্দিত। বিশেষ করে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে সবাই আমার প্রশংসা করেছেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই ভালোবাসা আমাকে আরও উদ্যোমী হতে প্রেরণা যোগাবে।

গত বুধবার, বৃহস্পতিবার থেকে আমাকে আমার বিতর্ক ক্লাবের সদস্যরা, আমার পরিচিত অনেকে নক দিতে শুরু করে। তাদের কন্ঠে বিভিন্ন উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। শুক্রবার পুরো সকাল বিষয়টি আমাকে ভাবিয়ে তোলে। আমার কাছে সেই শিক্ষার্থীদের কথা বেশি মনে পড়ছে যে ফোন দিয়ে বলে ভাই ইন্টারনেট নেই গত ৮ মাসে ক্লাবে কোন বিতর্ক করতে পারি নাই; সেই আমি অনলাইনে পরীক্ষা দেবো কি করে? আপনাকে ফোন দিয়েছি গ্রাম থেকে ১২ মাইল দূরে একটা বাজার থেকে!

তাদের এই উৎকন্ঠাগুলোই আমার একটি লেখায় ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছি। আমি জানতাম আমাদের মত আধুনিক সুযোগ-সুবিধা যাদের আছে তারা এর ঘোরতর বিরোধিতা করবে তবুও সত্য প্রেক্ষাপট আমাকে তুলে ধরতেই হবে। দুপুরের পর আমি লিখতে শুরু করলাম। সত্যি বলতে খুব বেশি সময় লাগেনি। প্রায় ২০ মিনিটে সম্পূর্ণ হলো লেখাটি। এরপর সেটি আমার টাইমলাইনে পোস্ট করলাম, মুহূর্তের মধ্যে সেটি পজিটিভ রিপ্লাই পেতে শুরু করলো।

দেখুন: অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন

আমি চেয়েছি আমার অভিজ্ঞতা দিয়ে সমস্যাগুলো তুলে ধরতে এবং আমার অভিজ্ঞতা দিয়ে একটি সমাধান দিতে। যাতে কলেজ প্রশাসন একটি ভালো সমাধান দিতে পারেন। পরে দেখলাম এটি বিভিন্নভাবে শেয়ার হতে শুরু করল। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সাংবাদিক ইলিয়াস শান্ত বিষয়টি নিয়ে রিপোর্টও করলেন। ফলে চারদিক থেকে একটা গ্রহণযোগ্যতা তৈরী হয়।

আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রশাসনের সাথে ও বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধান স্যার-ম্যামদের সাথে কথা বলেছি। তাঁরা বিষয়টি নিয়ে বিবেচনা করবেন বলে জানান। এটি যুগান্তকারী একটি সিদ্ধান্ত। সরকারি তিতুমীর কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ স্যার প্রফেসর মো. আশরাফ হোসেন স্যার ও উপাধ্যক্ষ ম্যাম প্রফেসর ড. মোসা. আবেদা সুলতানা ম্যাম দুজনেই ভীষণ শিক্ষার্থী বান্ধব ও ইতিবাচক প্রশাসক।

ওনাদের হাত ধরে তিতুমীর কলেজে প্রায় ১০টি সাংস্কৃতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করার ক্ষেত্রে এই প্রশাসন সবসময় ইতিবাচক। আমি মনে করি সেটি আরও একবার এই সিদ্ধান্ত ব্যস্তবায়নের মধ্যদিয়ে প্রমাণিত হলো। আমি সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সম্মানিত অধ্যক্ষ স্যার ও উপাধ্যক্ষ ম্যামকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা আমাদের সবসময় ভাবতে হবে। আমি মনে করি যারা বিভিন্ন সংগঠনের শীর্ষ পদে আছেন তারাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করবেন। কারণ তাদের সেই সক্ষমতা আছে।

আমার মনে পড়ে ক্যান্সারে আক্রান্ত সাদিয়া চিকিৎসার অর্থ সংগ্রহে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কিভাবে এগিয়ে এসেছিলেন। তখন আমি আমার ক্লাবের সদস্যদের বলেছিলাম বাসা থেকে যে যেটা পার রান্না করে নিয়ে আসতে। ক্যাম্পাসে সেই খাবারগুলো আমরা বিক্রি করবো। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে কেউ বিরিয়ানি, কেউ সামুদ্রিক খাবার আবার কেউ ফিন্নিসহ অসংখ্য খাবার নিয়ে হাজির হলেন। তিতুমীর কলেজে প্রথমবারের মত হোমমেইড খাবারের মেলা বসলো। এরপর আমরা বিভিন্নভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি।

তবে শিক্ষার্থীদের আগামী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে পড়াশোনার প্রতি মনোযোগি হওয়াটাও জরুরী।

লেখক: শিক্ষার্থী, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, সরকারি তিতুমীর কলেজ। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, সরকারি তিতুমীর কলেজ বিতর্ক ক্লাব