এইচএসসি নিয়ে একটি পলায়নপর সিদ্ধান্ত

লেখক কামরুল হাসান মামুন ও ঢাবি লগো
লেখক কামরুল হাসান মামুন ও ঢাবি লগো

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা হবে না। তার বদলে জেএসসি ও এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে একটি প্রাক্কলিত ফল দেওয়া হবে। এটাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মন্ত্রণালয় কি শিক্ষাবিদদের সাথে কথা বলেছিলেন? আসলে কথা বললেও লাভ হতো না। মন্ত্রণালয় গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সিদ্ধান্তকে লোক দেখানো আর বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

করোনা কালের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি করা হয়েছিল। মন্ত্রণালয় কি তাদের কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত মেনেছে। স্বয়ং কমিটির সদস্যরা টক-শোতে এসে তাদের দুঃখের কথা বলে গেছেন। আমি হলে এমন কমিটি থেকে পদত্যাগ করতাম। কিন্তু ঐখানে তাদেরকেই সদস্য বানানো হয় যারা আবার সরকারকে এম্বাররাস করবে না।

মন্ত্রণালয়ের সচিব থেকে শুরু করে কোন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাই শিক্ষায় বিশেষজ্ঞ না। বিশেষজ্ঞের কাজ তাদের না। তারা দেখবে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ পার্ট। নীতিনির্ধারণী কোন কাজ তাদের দিলে লেজেগোবরে জট লাগবেই। এই জিনিসটাই তারা বুঝতে চায় না বা পারে না। সরকারও তাদেরকে এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে ব্যর্থ।

এই যে পরীক্ষা না নেওয়ার একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো এর সুদূরপ্রসারী সুফল-কুফল কি গবেষণা করে ভেবে দেখা হয়েছে? লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রীদের একটা ট্যাগ নিয়ে বড় হতে হবে। সেটা হলো "ও তোমরা ২০২০ ব্যাচ"? পিএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ ৫ প্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা এইচএসসি থেকে অনেক অনেক বেশি। তার মানে প্রাক্কলিত ফলে জিপিএ ৫ প্রাপ্তদের সংখ্যা অনেক হবে যা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা থেকে অনেক অনেক বেশি হবে।

এদের একটি বড় অংশ যে তেমন পড়াশুনা করেনি কিন্তু ভালো নম্বর পেয়ে যাবে যা তাদেরকে অতিরিক্ত আত্মতৃপ্তি দিবে। অনেকে হয়ত আগের দুই পরীক্ষায় তেমন ভালো করেনি কিন্তু এইচএসসিতে ভালো করত তাদেরকেও বঞ্চিত করা হবে।

এইচএসসি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। এইখানে কোন প্রকার ফাঁক ফোকর রাখলে তার ফল সারা জীবন ভুগতে হয়। একটি সমাধান হতে পারতো যে সব পরীক্ষা না নিয়ে দুই তিনটা বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া। এমন হতে পারতো যে বিজ্ঞানের ছাত্ররা পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও গণিতের মধ্যে
যেকোন একটি অথবা দুইটি বিষয়কে বেছে নিয়ে একটি পরীক্ষা দিবে। তাতে প্রতিটি বিষয়ে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমত।

আবার বাংলা ও ইংরেজির মধ্যে যেকোন একটি। এইটা কেবল একটি এক্সট্রিম প্রস্তাব। মূল বক্তব্য হলো পরীক্ষার সংখ্যা ও প্রতিটা বিষয়ে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করা যেত। একদম পরীক্ষা না নেওয়ার চেয়ে কয়েকটা পরীক্ষা নিয়ে এরপর প্রাপ্ত এই নম্বর ও এসএসসি (জেএসসি না) নম্বরকে সমন্বয় করে একটি ফলাফল নিরুপন করা যেত। কোন না কোনভাবে একটি মূল্যায়ন ব্যবস্থা কিন্তু লাগবেই। না হলে এই ছাত্রদের মধ্যে যারা দেশের বাহিরে পড়ার জন্য আবেদন করবে তখন ঝামেলায় পরবে। সেই ঝামেলার দিকটা কি কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখেছে?

পরীক্ষা না নেওয়াটা হলো কর্তৃপক্ষের জন্য সবচেয়ে সহজ একটি রাস্তা। কিন্তু একটি বিকল্প বের করা হলো বুদ্ধিমানের রাস্তা। সেই রাস্তা খুঁজতে কতটুকু চেষ্টা করেছে আমাদের মন্ত্রণালয় আমি জানিনা। [ফেসবুক থেকে]

 

লেখক: অধ্যাপক, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ সংবাদ