গভীর রাতে রিক্সা নিয়ে রাস্তায় ১০ বছরের ছেলে, সঙ্গ দিচ্ছেন মা
- আসাদুজ্জামান নূর
- প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২০, ১১:০৪ AM , আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:৩৩ PM
মিদুল। মায়াবী মুখ। ছোট্ট একটা ছেলে। কতই বয়স হবে? ১০ থেকে ১২ বছর। এই বয়সেই জীবিকার তাগিদে গভীর রাতে রিক্সা নিয়ে রাস্তায়। রাত পৌনে ১২টার দিকে হাসপাতালের বাইরে বের হয়েই দেখলাম যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছে। পাশে একজন মহিলাও ছিলেন। ভালমত দেখিনি। পরে জানলাম মহিলা ওর মা। এত রাতে সন্তানকে একা ছাড়তে হয়তো মনে সায় দেয়নি। তাই নিজেও এসেছেন ছেলের সাথে।
আমার পূর্বের একজনকে আশা নিয়ে আহ্বান করলো, তিনি রিক্সায় উঠলেন না। আমি ইশারায় ডাকলাম। রিক্সায় উঠে জিজ্ঞেস করায় সকল প্রশ্নের উত্তর দিল সাবলীলভাবে। সে জানালো, মা ও নানীকে নিয়ে সংসার। মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় ওর বাবা ওর মাকে ছেড়ে চলে গেছে। ১৫০০ টাকায় একটি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকে। মা মানুষের বাড়িতে কাজ করেন।
মিদুল ২০০ টাকা জমায় রিক্সা চালায়। তখন পর্যন্ত জমার টাকাও আয় করতে পারেনি। লেখাপড়া করে না। অভাবের জন্যই করতে পারে না। রিক্সা থেকে নেমে ভাড়ার চেয়ে ১০ টাকা বেশি দিলাম। তাতেই সে মহা খুশি। ছবিও তুললাম। এসময় ফেসবুকে পোস্ট করার কথা তাকে জানিয়েছি।
মোবাইল নম্বর আদান-প্রদান করেছি। বলেছি, লেখাপড়া করতে চাইলে ব্যবস্থা করবো। এখনও নিজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারিনি, তবে যদি ও ফোন করে তাহলে সাধ্যমত সাহায্য করব।
আমার দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণ, যখনই কোন শিশু শ্রমিক দেখেছি, পারিবারিক বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে বেশ কমন একটা তথ্য পেয়েছি। তাদের প্রত্যেকের বাবা তাদেরকে ছেড়ে নিরুদ্দেশ, অথবা নেশা করে। এমন তথ্যই বেশি পেয়েছি। ফলে তাদের অসহায় মা মানুষের বাড়িতে কাজ করে সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেন। অনেকেই মাকে সাহায্য করতে কায়িক শ্রমের মাধ্যমে উপার্জনের চেষ্টা করে।
এমন ঘটনা দেখলে মর্মাহত হই। প্রচন্ড কষ্ট অনুভব করি। প্রশ্ন জাগে এসকল মানুষ কারা? যারা সন্তানের জন্ম দিয়ে তাদের লালন-পালনের দায়িত্ব নেয় না। তারা বিয়ে করে কিভাবে?
বিভিন্নজনের কাছে হয়তো এই প্রশ্নগুলোর বিভিন্ন উত্তর আছে। তবে বাচ্চাগুলোর ভবিষ্যত কি? তারা কাকে দায়ী করবে? তারা নিজেরাও জানে না কি তাদের ভবিষ্যত। তাদের পৃথিবী খুবই ছোট, তিনবেলা খাবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। একমাত্র সৃষ্টিকর্তা জানেন, এমন দিন কবে আসবে যেদিন একজন শিশুকেও এমনভাবে জীবিকার তাগিদে রাস্তায় নামতে হবে না। আদৌ আসবে কি? (শনিবার, ৬ জুন ২০২০ সাল)
লেখক: রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক