অতি উৎসাহী আচরণ একেবারেই কাম্য নয়
- পলাশ রহমান
- প্রকাশ: ২৭ মার্চ ২০২০, ১১:৩৩ PM , আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৬:১৪ PM
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ। দেশের এমন ক্রান্তিকালে অযথা কেউ বাড়ির বাইরে ঘুরবেন এটা বিশ্বাস করতে চাইনা। যারা রাস্তায় বের হয়েছেন তাদের কাছে আগে বাইরে আসার কারণ জানতে চাওয়া হোক। সঠিক ব্যাখ্যা দিতে না পারলে তাদের চূড়ান্তভাবে সর্তক করে দেওয়া যেতে পারে। তাতেও কাজ না হলে প্রয়োজনে ঘাড় ধরে সোজা বাড়ি পাঠিয়ে দেন। তবু, অতি উৎসাহী আচরণ একেবারেই কাম্য নয়। যদি এমন হয় সম্পূর্ণ অকারণে সংসদ ভবনের সামনে বা উদ্যানে বসে আছে যেমনটা আমরা কয়েকটা ভাইরাল ভিডিওতে দেখেছি, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে কারো কোন আপত্তি থাকার কথা নয়। একটাকে টানতে টানতে কাশিমপুরে আরেকটাকে টানতে টানতে নাজিমুদ্দিন রোডে নিয়ে যান। কিন্তু কাউকে দেখামাত্রই পেটানো সমর্থনযোগ্য নয়।
মানুষকে এলোপাতাড়ি পেটানো শুরু করার পর যখন ওর পকেটে এক পাতা নাপা ট্যাবলেট খুঁজে পাবেন তখন কি নিজেকে ধরে রাখতে পারবেন? যখন জানতে পারবেন ওই ব্যক্তি করোনার মধ্যেও ঝুঁকি নিয়ে তার মায়ের জন্য জরুরি কিছু ঔষধ কিনতে বের হয়েছেন বা সংসারের জন্য দুই কেজি চাল, এক হালি মুরগীর ডিম, দশ টাকার কাচা মরিচ আর বাচ্চার জন্য এক প্যাকেট পটেটো চিপস নিতে বের হয়েছেন তখন আপনার কেমন অবস্থা হবে? অথবা এমনতো হতে পারে নিকটতম কারো মৃত্যুর পর কাফনের কাপড় কিনতে বের হয়েছেন কোন মানুষ! হতে পারে না? এই অবস্থায় এদের গায়ে হাত দিলে ওরা আপনাকে ক্ষমা করলেও আপনি নিজেকে কোনদিন ক্ষমা করতে পারবেন না। আপনার নিজেকেই নিজের কাছে অপরাধী মনে হবে। নিজের প্রতি নিজেরই ঘৃণা হবে। কারন আপনি তো মানুষ। ইউনিফর্ম বা পেশা মানুষকে পুরোপুরি পাল্টে দিতে পারেনা। অনেকেই তো আছেন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিছিলে পুলিশ-আর্মির পিটুনি খেয়েছেন! এখনো দাগ কেটে আছে প্রতিটি আঘাতের জায়গায়! এগুলো মানুষ ভুলতে পারেনা। তাই প্লিজ যা করবেন একটু বিবেচনা করে করুন। কাউকে অকারনে মেরে বাড়ি পাঠালে সারাজীবন সে অাপনাকে ঘৃণা করবে।
এমন তো হতে পারে আপনার কোন সিনিয়র অফিসার গোপনে আপনার কাজ তদারকি করতে সিভিলে সাদাসিধা সাজে বের হয়েছেন। তিনিও কিন্তু আপনার লাঠির বাড়ির আওতায় পড়ে যেতে পারেন! সেনা, পুলিশসহ সব বাহিনীর গোয়েন্দা শাখা আছে। এঁরা সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করেন। অথবা সিভিলে চাকরি করেন অন্য পেশার লোকজন সাংবাদিক, ডাক্তার, ব্যাংকার, শিক্ষকসহ নানা পেশার মানুষ আপনার বাড়াবাড়ির শিকার হতে পারেন। এটা কোন অবস্থায় কাম্য হতে পারে না। সুতরাং, আগে শুনুন, পরিচয় জানুন, পরে বিবেচনাবোধ প্রয়োগ করুন।
স্বাভাবিক সময়ে একজন অপরাধীর সাথেও ভালো আচরণ করা হয়। কিন্তু দেশের এমন পরিস্থিতিতে একজন ভদ্রলোকও হেনস্তার শিকার হতে পারেন। এটা সঠিক ব্যবহার নয়। মানুষকে বুঝিয়ে বাড়ি পাঠালে অাপনাকে ঘিরে তৈরী হওয়া তাদের সারাজীবনের ভুল ধারনা নিমিষেই শেষ হয়ে যেতে পারে। আপনার মাঝে দায়িত্বশীলতা ও মানবিকতা খুঁজে পেলে আপনাকে তাঁরা স্যালুট জানাবেন চিরকাল। আমার ব্যক্তিগত অনুরোধ দয়া করে কেউ অতি উৎসাহী হবেন না। মানুষের প্রতি বিশ্বাস রাখলে মানুষও আপনার ধারনা পাল্টে দেবেন, আপনার ত্যাগের উপযুক্ত মূল্যায়ন করবেন।
আপনার সামান্য অতি উৎসাহী আচরন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের জন্য কাজ করে যাওয়া বাহিনীর অর্জনকে ম্লান করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট!
আর মানুষদের বলবো করোনা ভাইরাস থেকে নিজে বাচুন, পরিবারকে বাঁচান। এজন্য অবশ্যই ঘরে থাকুন। করোনার সামনে সেনাবাহিনী, পুলিশ বা বিজিবির লাঠির বাড়ি কিছুই না! এরচেয়েও করোনা বেশি ব্যথা দেবে আপনাকে।
আসুন সকল অন্ধতা, অজ্ঞতা ও উগ্রতা পরিহার করে সমন্বিতভাবে এই দুর্যোগ মোকাবেলা করি। আবারো বিশ্বাস করতে চাই মানুষ অকারনে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ!
লেখক: সহকারী পুলিশ কমিশনার, ডিএমপি
[ফেসবুক থেকে নেয়া]