মিজানুর রহমান আজহারীকে যেমন দেখেছি

মুহাম্মদ মুহিউদ্দিন মাহি
মুহাম্মদ মুহিউদ্দিন মাহি  © ফেসবুক

২০১৩ সাল। আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মালয়েশিয়াতে মাস্টার্সে আসেন মিজানুর রহমান আজহারী। কৃতিত্বের সাথে মাস্টার্স শেষে পিএইচডিতে এডমিশন নিয়ে গবেষণা শুরু করেন।

দীর্ঘ ৭ বছরের আমাদের একাডেমিক, লিডারশীপ ও বন্ধুত্বের সময়ে মিজানুর রহমান আজহারী ভাইকে পেয়েছি একজন সরল, সাদাসিধে, সামাজিক ও অরাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে। মালয়েশিয়ায় হাজারও শিক্ষার্থী বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শে লিপ্ত আছে কিন্তু অরাজনৈতিক ও দলমত নির্বিশেষে সকল বাংলাদেশীকে আন্তরিকভাবে কাছে রাখেন এমন অনেকেই আছে। মিজানুর রহমান আজহারী ভাই তাদের মধ্যে অন্যতম একজন।

মালয়েশিয়ায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কনফারেন্স, সেমিনার ও লিডারশীপ প্রোগ্রামে কখনও ডেলিগেট হিসেবে কখনও বা বক্তা হিসেবে অংশগ্রহণ করে আসছেন আজহারী ভাই ২০১৩ সাল থেকে। আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মালয়েশিয়ার ছাত্র সংসদ ও ‘অরগানাইজেশান অব ইসলামিক কোঅপারেশন ইয়ুথ ফোরাম’ কর্তৃক আয়োজিত ওআইসি এর ইয়ুথ ফোরামের তৃতীয় আন্তর্জাতিক সামিট হয়েছিল ২০১৩ সালে, তখন আমি ছিলাম সামিটের চেয়ারম্যান। ৭২ টি দেশের প্রতিনিধির অংশগ্রহণে সামিটটি সম্পন্ন হয়েছিল। মিজানুর রহমান আজহারী ভাইয়ের অংশগ্রহণ সবাইর নজর কেটেছিল এ সামিটে। পরবর্তী সকল আন্তর্জাতিক প্রোগ্রামেই তার অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের ইমেজকে সমুন্নত করে চলছে।

দীর্ঘ ৭ বছরে মালয়েশিয়াতে কোন রাজনৈতিক প্লাটফর্মে তাকে আমরা দেখিনি। কোন রাজনৈতিক দলের সদস্যও নন তিনি। বরং অরাজনৈতিক ও নির্দলীয় বিভিন্ন প্রোগ্রামে আলোচক হিসেবে অবদান রেখে যাচ্ছেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীন বরণ অনুষ্ঠান, সামাজিক অনুষ্ঠান, রমজান মাসের প্রোডাক্টিভ প্রোগ্রাম, লিডারশীপ প্রোগ্রাম, জাতীয় অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশী তরুণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ও বিভিন্ন স্তরের বাংলাদেশী প্রবাসীদের মানোন্নয়ন ও দেশপ্রেম বৃদ্ধির মাধ্যমে আদর্শিক নাগরিক তৈরির কাজ করে যাচ্ছেন।

ইতিমধ্যে বাংলাদেশে জনপ্রিয়তার শীর্ষে চলে এসেছেন মিজানুর রহমান আজহারী ভাই। তার কার্যক্রমের বিশেষত্ব সবাই প্রায়ই বুঝেছেন আশা করি। নতুন এক ধারা নিয়ে এসেছেন। তার আলোচনায় স্পষ্ট বুঝা যায় আকর্ষণীয় ভিন্ন এক বিষয়ভিত্তিক আলোচনার ধরন এবং সিস্টেমেটিক ডেলিভারেশন যা হয় তাত্ত্বিক, যৌক্তিক ও কোরআন সুন্নাহর দলীল ভিত্তিক। তা ছাড়া আধুনিক ও টেকনোলজির এ বিশ্বে বৈজ্ঞানিক দালিলিক প্রামাণ্যচিত্রও ফুটে উঠেছে তার আলোচনায়। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও চারিত্রিক উন্নয়নে তরুণ ও যুব সমাজের আবশ্যকীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য তিনি সুস্পষ্টভাবে উপস্থাপন করে চলছেন যা সব সেক্টরে পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগিয়েছে। সুন্দর ও আদর্শিক ব্যক্তি গঠনে তরুণরা পরিবর্তন নিয়ে আসছে যা একটি সুন্দর পরিবার, মার্জিত সমাজ ও উন্নত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ সহায়ক হবে আগামীতে।

রাজনৈতিক ট্যাগ লাগিয়ে একজন অরাজনৈতিক ও নির্দলীয় একনিষ্ঠ সমাজসেবককে কিভাবে অপবাদ দিতে পারে সোনার বাংলার মানুষেরা?

ব্যক্তিগতভাবে তার আলোচনায় কিছু প্রসিদ্ধ মানুষের উদাহরণ স্বরূপ আসতেই পারে। যেমনটি তিনি দৃষ্টান্ত স্বরূপ বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা, জিয়াউর রহমানের কথা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা, আল্লামা শফির কথা ও সাঈদীর কথা। রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব ও আলেমসমাজ নিয়ে কথা আসলে দৃষ্টান্ত আসতেই পারে তার মানে এটা নয় যে তাকে রাজনৈতিক ট্যাগ লাগিয়ে দিব।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বিভিন্ন মন্ত্রীর সফলতার কথাও তার আলোচনায় এসেছে, তাই বলে তিনি আওয়ামীলীগকেও সাপোর্ট করেন তাতো কেউ বলেননি। আবার অনুরূপভাবে হেফাজতের আমীর শ্রদ্ধেয় আল্লামা শফীর ব্যাপারে তিনি বলেছেন ‘ঘরে ঘরে আল্লামা শফী দাও', তাই বলে কেউ তো বলেননি মিজানুর রহমান আজহারী হেফাজতী হয়ে গেছেন! সুতরাং একজন নির্দলীয় সমাজসেবককে এভাবে অপবাদ দেয়া সত্যিই দুঃখজনক ও সমাজের জন্য নেতিবাচক। গুনীর কদর না করেই তো আমরা স্বাধীনতার নেতাসহ অনেক জাতীয় নেতৃবৃন্দকে হারিয়েছি, তাও কিছু দেশদ্রোহী বিশ্বাসঘাতকের ষড়যন্ত্রের কারণে। আমরা কি এখনও বুঝবনা লোভী ও হিংসুকদের অপবাদ ও ষড়যন্ত্রকে? কবে পরিবর্তন আসবে এ সমাজে? সত্যিই অবাক লাগে।

ছোটখাট মতপার্থক্য থাকতেই পারে। এমনকি ইসলামের মাসআলা মাসায়েলের ক্ষেত্রেও মূল ভিত্তি ব্যতিরেকে শাখা প্রশাখায় হুকুম আহকামের ব্যাপারে মতপার্থক্য থাকবেই। সেটির নাম রহমত। তবে মূল ইসলামের সেবা, জাতীয় উন্নয়ন ও দেশের মানোন্নয়নে একযোগে কাজ করাটাই ইসলামের শিক্ষা। বাংলাদেশ সরকার চাইলে মিজানুর রহমান আজহারী সহ বাংলাদেশের অন্যান্য শীর্ষ ওলামাদের নিয়ে কাজ করতে পারে। সমাজ পরিবর্তনে ও সুন্দর সমাজ গঠনে ওলামাদের সহযোগিতা আবশ্যকীয়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মিজানুর রহমান আজহারী সহ শীর্ষ ওলামাদের নিয়ে রাষ্ট্রীয় বোর্ড ফর্ম করতে পারেন যাদের পরামর্শ নিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক কার্যক্রমের সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে। তা হলেই আপামর জনগণ ও তরুণ সমাজ সরকারের সহায়ক হিসেবে আরও উজ্জীবিত হবে।

মিজানুর রহমান আজহারী ভাইয়ের এ নিয়ে কোন সমস্যা নেই আমি নিশ্চিত। তার বিরুদ্ধে এত অপবাদ ও বিরোধীতার পরেও তার কণ্ঠে একতার শ্লোগান পাই। অহিংসা ও সততার কথা খুঁজে পাই। এক যুগে দেশের সেবা, ইসলামের সেবা ও অরাজনৈতিকভাবে সমাজ পরিবর্তনের পদক্ষেপ ও সরকারকে সহযোগিতার কথা শুনি তার কণ্ঠে। যা সুন্দর মননশীলতা ও আদর্শিক মানবীয় গুণাবলী বলতেই পারি আর এটাই কোটি তরুণ সমাজকে উদ্বুদ্ধ করছে, শুনি পরিবর্তনের বাঁশী তাদের সুরে।

পরিশেষে, মহান রবের কাছে দোয়া করি যেন বাংলাদেশের সর্বস্তরের সকলেই যেন রিয়ালিটি ও সত্যের জয়গান বুঝতে পারে। অহেতুক অপবাদ ও হিংসা পরিহার করে সততা ও পারস্পরিক সহযোগিতার হাতকে ঐক্যবদ্ধভাবে শক্তিশালী করেন। সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় সমাজের পরিবর্তনে যে ছোঁয়া লেগেছে তা যাতে কাজে লাগায়। একটি অহিংস, অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসার এখনই উপযুক্ত সময়।

মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে সত্যটা বুঝার তাওফিক দিন। আমীন।

লেখক: সাবেক ভিপি, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মালয়েশিয়া


সর্বশেষ সংবাদ