ভারতের বিজেপি সরকারের পরবর্তী টার্গেট কি তাজমহল?

  © টিডিসি ফটো

ভারতের বিজেপি সরকারের চলছে বসন্তকাল। চরম হিন্দুত্ববাদী নীতি আদর্শ বাস্তবায়নে তারা আপোষহীন। কঠোর হিন্দুত্ববাদীর সমর্থক শিবসেনা ও আরএসএসকে পকেটে রেখে বিজেপি এগিয়ে যাচ্ছে চরম হিন্দুত্ববাদের দিকে। ইতোমধ্যে ভারত তার ধর্মনিরপেক্ষতার চেহারা হারিয়েছে।

বিজেপি সরকার মুসলমানদের তালাক প্রথা নিষিদ্ধ, কাশ্মীরের সাংবিধানিক সুবিধার ৩৭০ ধারা বাতিল ও সর্বশেষ বাবরি মসজিদ রায় নিজেদের পক্ষে নিয়ে ফুরফুরে মেজাজে। ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রকরণের লক্ষ্যে তারা বদ্ধপরিকর।

এ লক্ষ্যে বিজেপিসহ হিন্দুত্ববাদী সংগঠন গুলো এককাট্টা হয়ে ভারতে মুসলমানদের প্রায় সাতশ বছরের শাসনামলের স্মৃতিস্তম্ভ, স্মারক, স্থাপনা, ধর্মীয় ঐতিহ্য ধ্বংসে মরিয়া। এজন্য বিজেপি ও সমমনারা কয়েক বছর আগে থেকে আগ্রার তাজমহলকে টার্গেট বানিয়েছে।

বাবরি মসজিদের ন্যায় তারা তাজমহল ধ্বংসে ধীরগতিতে ধাবমান। স্লো পয়জনিংয়ে যেমন একজন মানুষকে তিলে তিলে নিঃশেষ করে দেওয়া যায় তেমনি ধীরগতি অবলম্বনে বিজেপি ভারতে মুসলিম ইতিহাস ঐতিহ্য ও চিহ্ন নিশ্চিহ্ন করতে উন্মুখ।

যেভাবে বাবরি মসজিদ প্রথমে ভেঙ্গে পরে আদালতের মাধ্যমে নিজেদের পক্ষে রায় নিল। ঠিক তেমনিভাবে ভারতের অন্যান্য মুসলিম স্থাপত্য ভেঙ্গে ফেলতে চায়। এজন্য তাদের সহজ বুলি ঐসব স্থাপনা হিন্দু মন্দির ভেঙে করা হয়েছে। এই গুজবে সেসব ভেঙ্গে মুসলমানদের ভারতীয় ইতিহাস ঐতিহ্য মুছে ফেলা হবে।

আজ তাজমহল বিতর্ক নিয়ে কিছু আলোচনা করবো। তাজমহল এযুগের বিস্ময়, প্রেমের অমর নিদর্শন। ভারতের মোগল সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রীর ভালোবাসায় বুদ হয়ে এ স্থাপনা তৈরি করে ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। আচ্ছা বলনুতো তাজমহল ছেলে না মেয়ে? প্রশ্ন শোনে নিশ্চয়ই ভড়কে গেলেন! ভাবছেন আমার মাথায় গন্ডগোল আছে। তা না। আসুন আসল রহস্য জেনে নিই।

তাজমহল বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের রঙ ধারণ করে। সকালে গোলাপি বর্ণের, বিকালে দুধের মতো সাদা বর্ণের এবং রাতে চাঁদের আলোতে সোনালি বর্ণ ধারণ করে। অনেকের মতে, মেয়েদের মন যেমন ক্ষণে ক্ষণে বদলায় তার ওপর নির্ভর করে তাজমহলের রঙ বদলায়। এটি সম্রাট শাহজাহানের পরিকল্পনায় ছিল। এখন বলেন তো তাজমহল ছেলে না মেয়ে? যাকগে এসব আগে একটা পুরনো জোক বলি।

গার্লফ্রেন্ড তার বয়ফ্রেন্ডকে জিজ্ঞেস করল, তুমি আমাকে কতটুকু ভালোবাসো? বয়ফ্রেন্ড বলল, অনেক বেশি ভালোবাসি। গার্লফ্রেন্ড বলল, তাহলে তুমি কি শাহজাহানের মতো আমার জন্য তাজমহল বানাতে পারবে? বয়ফ্রেন্ড বলল, অবশ্যই পারবো। গার্লফ্রেন্ড, তাহলে বানাও না কেন? বয়ফ্রেন্ড উত্তর দিল আগে তুমি মরো। তারপর বানাবো। এই কৌতুক থেকে জানলাম সম্রাট শাহজাহান তার প্রিয়তমা স্ত্রীর মৃত্যুর পর তাজমহল তৈরি করেছিলেন।

সম্রাজ্ঞী মমতাজ মহলের বিয়ের সময় বয়স ছিল ১৯ বছর এবং শাহজাহানের ২০ বছর। শাহজাহান মমতাজের ১৯ বছরের বিবাহিত জীবনে মমতাজের মোট ১৪ সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছিল।

এরমধ্যে নির্মম সেই দিনটির কথা। দিনটি ছিল ১৬৩১ সালের ১৬ জুন। রাত্রিবেলা। মমতাজের চতুর্দশ সন্তান গওহর বেগমের জন্মের সময় তিনি মৃত্যু শয্যায় শায়িত হন। সেসময় মমতাজের হাত দুটি ধরে পাশে বসে ছিলেন শাহজাহান। মমতাজ প্রিয়তম স্বামীর হাত ধরে মনের শেষ ইচ্ছা প্রকাশ করলেন, ‘প্রিয়তম, আমার সমাধির উপর প্রেমের এক কবিতা সৃষ্টি করো, এবং আমার মৃত্যুর পর আর কোনো স্ত্রী গ্রহণ করো না।’

সম্রাট হাতে হাত রেখে সে ইচ্ছা পূরণের ওয়াদা দিয়েছিলেন। দীর্ঘ ৩০ ঘণ্টার অসহনীয় প্রসব বেদনার পর, মমতাজ মহল অবশেষে কন্যাসন্তান জন্ম দিলেন। কিন্তু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে ধকল সামলাতে না পেরে সম্রাজ্ঞীর শরীর ভঙ্গুর হতে লাগলো।

ধীরে ধীরে মমতাজ মহলের মুখমণ্ডলে প্রশান্তির ছায়া নেমে এলো। লুটে পড়লেন মৃত্যুর মুখে। সেইসময় শোকে মুহ্যমান সম্রাট শাহজাহান নিজেকে সাতদিন আপন কক্ষে রুদ্ধ করে রেখেছিলেন। প্রিয়তমা স্ত্রীর মৃত্যুর পর সাতদিন সাতরাত শাহজাহান কিছু খাননি। ঘর থেকেও বের হননি। সাতদিন পর শাহজাহান বাইরে বের হলেন। তখন তার চুলের রং গোঁফ দাড়ি সফেদ হয়ে গেছে, মুখ ফ্যাকাসে।

তিনি এমন এক স্মৃতিসৌধ বানানোর সিদ্ধান্ত নিলেন, যা বিশ্বের কাছে এক অনন্য নজির হয়ে থাকবে। সেটাই আজকের তাজমহল।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন,

‘শুধু থাক
একবিন্দু নয়নের জল
কালের কপোলতলে শুভ্র সমুজ্জ্বল
এ তাজমহল।’

শাশ্বত প্রেমের অনন্য বহিঃপ্রকাশ তাজমহল। মোঘল স্থাপত্য শৈলীর অপূর্ব নিদর্শন শ্বেত পাথরের সমাধি সৌধ এই তাজমহল। নির্মাণশৈলীতে পারস্য, তুরস্ক, ভারতীয় এবং ইসলামী স্থাপত্যশিল্পের সম্মিলন ঘটানো হয়েছে। মানুষের তৈরি পৃথিবীর অন্যতম এক বিস্ময় এই তাজমহল।

তাজমহল নির্মাণের জন্য পাঞ্জাব থেকে আনা হয় স্বচ্ছ মার্বেল পাথর, চীন থেকে সবুজ পাথর, তিব্বত থেকে স্বচ্ছ নীল পাথর এবং তিব্বত, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা থেকে নীলমণি। ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ২৯ রকমের মূল্যবান পাথর দিয়ে সৃষ্টি করা হয় এই বিস্ময়কর স্থাপত্য।

কাজী নজরুল ইসলাম তাজমহল নিয়ে লেখেন,

‘তাজমহলের পাথর দেখেছ, দেখিয়াছ তার প্রাণ? অন্তরে তার মমতাজ নারী, বাহিরেতে শা-জাহান।’

তাজমহলের প্রধান কারিগর ওস্তাদ ঈশা মোহাম্মদ। তিনি তার স্ত্রীকে উপহার দেওয়ার জন্য একটি ভাস্কর্য বানিয়েছিলেন। পরে সম্রাট শাহজাহানের পছন্দ হওয়ায় সেই ডিজাইনের আদলে বানানো হয় তাজমহল। প্রধান ভাস্কর ছিলেন দিল্লির চিরঞ্জীব লাল। তাজমহলের ডিজাইনার ছিলেন ইরানের বিখ্যাত স্থাপত্য শিল্পী মোহাম্মদ আফেনদি। গম্বুজ গুলির ডিজাইনার ছিলেন ইরানের ইসমাইল আফেনদি। খোদাই শিল্পী ছিলেন ইরানের আমনত খান তাজমহলের এই অসাধারণ কীর্তি শুধু ভারতীয় বিশেষজ্ঞ দ্বারাই নির্মিত হয়। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের বিশেষজ্ঞদেরও আনা হয়েছিল নানা কাজের জন্য।

ভাস্কররা আসেন বুখারা থেকে, হস্তাক্ষর শিল্পীরা আসেন সিরিয়া এবং পারস্য থেকে, রত্নশিল্পীরা আসেন উত্তর ভারত থেকে, মণিকারেরা আসেন বেলুচিস্তান থেকে।

স্বপ্নের সমাধি তাজমহলের নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৬৩১ সালে, শেষ হয় ১৬৫৩ সালে। সেময় একযোগে কাজে নামে প্রায় ২২ হাজার নির্মাণ শ্রমিক।

১৬৪৮ সালে এই স্মৃতিসৌধের প্রাথমিক নির্মাণকাজ শেষ হয়। সে হিসাবে প্রাথমিক কাজেই লাগে ১৭ বছর। সৌন্দর্যের এ সৌধটি নির্মাণে ব্যয় হয় সেই সময়ের প্রায় ৩২ মিলিয়ন রুপি। পুরো তাজমহল ১৮০ ফুট উঁচু যার প্রধান গম্বুজটি ২১৩ ফুট উঁচু এবং ৬০ ফুট চওড়া এবং এর চারপাশে চারটি মিনার আছে যার প্রতিটির উচ্চতা ১৬২.৫ ফুট। পুরো কমপ্লেক্সটির আকার ১৯০২ বাই ১০০২ ফুট। শুধু তাজমহলটি ১৮৬ বাই ১৮৬ ফুট মার্বেল পাথরের ওপর নির্মিত। এর প্রধান প্রবেশদ্বার ১৫১ বাই ১১৭ ফুট চওড়া এবং ১০০ ফুট উঁচু।

জনশ্রুতি আছে, স্ত্রী মমতাজ মহলের সমাধির কাজও শুরু করেছিলেন শাহজাহান নিজেই। কিন্তু ছেলে আওরঙ্গজেব তাকে আগ্রার দুর্গে বন্দী করে রাখায় সেই কাজ আর শেষ করতে পারেননি শাহজাহান। দুর্গের জানালা দিয়ে দূর থেকে তাজমহল দেখতে দেখতে সেখানেই মারা যান শাহজাহান। ১৬৬৬ সালে মৃত্যুর পর শাহজাহানকেও স্ত্রী মমতাজ মহলের সঙ্গে তাজমহলে সমাহিত করা হয়।

আরও জনশ্রুতি আছে, তাজমহলের নির্মাতার চোখ নষ্ট করে দেওয়া হয় যাতে তিনি ভবিষ্যতে নতুন করে আর এরকম ডিজাইন তৈরি করতে না পারেন। যে বিশ হাজার শ্রমিক দিনরাত খেটে এই মহলটি তৈরি করেছিলেন তাদের হাতও কেটে নেওয়া হয়। যদিও ঐতিহাসিকভাবে এই কথাগুলো প্রমাণিত নয়। এসব বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কথা।

ব্রিটিশ রাজদূত এবং পর্যটক এডওয়ার্ড লিয়ার ১৮৭৪ সালে আগ্রার তাজমহল দেখে বলেছিলেন, আজ থেকে বিশ্ববাসীকে দুটি ভাগে বিভক্ত করা হোক। একটা শ্রেণী যারা তাজমহল দেখেছে এবং আরেকটা শ্রেণী যারা তা দেখেনি।

অন্যদিকে আরেক ফার্সি কবি তো তাজমহল দেখে মুগ্ধ হয়ে বলেন,

‘আগার ফেরদাউস চেবর রূয়ে জামিনাস্ত
হামিনাস্ত-ও হামিনাস্ত-ও হামিনাস্ত’।
‘দুনিয়াতে যদি কোন বেহেস্ত থাকে
‘এটাই হবে, এটাই হবে, এটাই হবে’।

১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো তাজমহলকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম তাজমহল। তখন তাজমহলকে বলা হয়েছিল ‘বিশ্ব ঐতিহ্যের সর্বজনীন প্রশংসিত শ্রেষ্ঠকর্ম। আজো তাজমহল দেখার জন্য বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে প্রতিদিন ভিড় জমান হাজারো পর্যটক।

প্রতিবছর তাজমহলে দেখতে ২ থেকে ৩ মিলিয়ন পর্যটক আসেন। যার মধ্যে ২ লাখ পর্যটক বিদেশি। তাজমহল ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র।

২০১৮ সালের ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। তাতে ২০১৭ সালে এক কোটির বেশি বিদেশী পর্যটক ভিসায় ভারত ভ্রমণ করেছে যা আগের বছরের চেয়ে ১৪ শতাংশ বেশি। বিদেশী মুদ্রা বিনিময় থেকে দেশটি আয় করেছে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮৭৪ কোটি রুপি। ২০১৭ সালে যেসব দেশ থেকে বেশি সংখ্যায় পর্যটক ভারতে গেছে তার শীর্ষে আছে বাংলাদেশ।

রিপোর্ট অনুযায়ী, ২১ লাখ ৫৬ হাজার ৫৫৭ জন বাংলাদেশী পর্যটক ভিসায় ভারতে গেছে। আর পর্যটন খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে ২০১৭ সালের আয় ছিলো প্রায় তের বিলিয়ন ডলার যেখানে ২০১৮ সালের প্রথম ছয় মাসেই আয় হয়েছে সাড়ে ১৪ বিলিয়ন ডলার। ভারতের আয়ের অন্যতম উৎস হচ্ছে পর্যটন খাত। মধ্যযুগে ভারতের মুসলিম শাসনামলের ঐতিহাসিক স্থান, অবকাঠামো এখন ভারতের পর্যটন খাতের আয়ের অন্যতম উৎস।

তাজমহল নিয়ে সাম্প্রতিককালে বিতর্ক। বিতর্কের উৎস পি এন ওকের একটি বই Taj Mahal : The True Story by। এই বই এর গল্প অনুসারে ‘তেজো মহালয়া’ নামে ঐ স্থানে একটি শিব মন্দির ছিল যে মন্দিরটি রাজা জয় সিং তৈরি করেছিলেন। রাজা জয় সিং মন্দির হতে শিব লিঙ্গ সরিয়ে নেন এবং অন্যত্র এক নতুন মন্দির নির্মাণ করেন।

রাজা জয় সিং এর নিকট হতে শাহজাহান ঐ স্থান গ্রহণ করেন এবং পরিবর্তে অন্য স্থান তাঁকে দেন। শাজাহান তারপর ওই স্থানে তাজমহল নির্মাণ করেন।

অন্যদিকে তাজমহলের স্থানে শিব মন্দির ছিল, এই যুক্তি-প্রমাণহীন ধারণার বশবর্তী হয়ে লখনৌতি শহরের হরি শঙ্কর জৈন ও অপর পাঁচজন আইনজীবী আগ্রা সিভিল কোর্টে ২০১৫ সালে এক মামলা দায়ের করেন। তাঁদের আবেদন তাজমহলকে হিন্দু শিব মন্দির বলে ঘোষণা করতে হবে, তাজমহলের ভিতরে তাঁদের পুজো করতে দিতে হবে।

আবেদনকারী হিসাবে তাঁরা নিজেদের আগ্রাশ্বর মহাদেবের একনিষ্ঠ ও ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলে উল্লেখ করেছেন এবং আগ্রাশ্বর মহাদেবকে প্রধান আবেদনকারী উল্লেখ করেছেন।

এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ Archaeological Survey of India পরীক্ষা নিরীক্ষার পর পরিষ্কার ভাবে জানিয়েছেন যে, তাজমহলের জায়গায় কোনো কালে কোনো মন্দির ছিল না। পরবর্তী কালে ২০১৫ সালে নভেম্বর মাসে কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্কৃতি বিভাগের মন্ত্রী শ্রী মহেশ শর্মা পার্লামেন্টে জানান যে, তাজমহলের জায়গায় কোনো শিব মন্দির থাকার কোনো প্রমাণ মেলেনি। সুপ্রিমকোর্টে ভবিষ্যতে তাজমহল নিয়ে কোনো উলটা পালটা মামলা ও বিতর্ক সৃষ্টি না করতে নির্দেশনা দিয়েছিল।

কিন্তু তারপরেও তাজমহল নিয়ে ষড়যন্ত্র থেমে নেই। ২০১৭ সালে ভারতীয় এমপি ভিনয় কাটিয়ার দাবি করে তাজমহল ছিল একটি হিন্দু মন্দির। ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির এই এমপি সরকারের কাছে তাজমহলের নাম বদলানোর দাবি জানিয়েছিল।

তিনি বলেছিলেন একজন হিন্দু শাসক তাজমহল তৈরি করেছেন। ভারতের গণমাধ্যমে তার এই দাবি ব্যাপক প্রচার পায়। অনেক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ও গোষ্ঠী তার এই দাবি সমর্থন করে।

তাহলে চরম হিন্দুত্ববাদীদের পরবর্তী টার্গেট কি তাজমহল? সুপ্রিম কোর্টে তাজমহলের উপর অপর আর একটি মামলায় তাজমহলের মালিকানা সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।

সমস্ত তথ্য প্রমাণ ও রেকর্ড যাচাই করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা ও ভারতের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয় যে ভারত সম্রাট শাহজাহান এই সমাধি সৌধ নির্মাণ করেন। তাজমহলের স্থানে কোনো মন্দির থাকার কোনো প্রমাণ নেই। এবং আবেদনকারীদের এই ধরনের আবেদন করার কোনো এখতিয়ার নেই।

এরপরেও আইন আদালত, তথ্য প্রমাণ, ইতিহাস এবং সত্যকে বারবার অগ্রাহ্য করে চরম হিন্দুত্ববাদীরা তাজমহলের উপর শকুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে। বিজেপি ও হিন্দুত্ববাদীরা ভারত জুড়ে এক অনর্থক অরাজকতা সৃষ্টি করতে সদা তৎপর।

ভারতের পর্যটন আয়ের অন্যতম উৎস তাজমহল। আপাতত ভারত তাজমহলের ক্ষতি হয় এমন কিছু করবে না বলেই মনে হয়। কেননা তাজমহল ধ্বংসে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া হবে প্রবল। ভারত কিন্তু জাতে মাতাল তালে ঠিক।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি শ্রী মদন বি লোকপুর ও বিচারপতি শ্রী দীপক গুপ্ত মহাশয়ের ডিভিশন বেঞ্চ সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করেছিলেন, ‘তাজমহল এক বিশ্ব বিখ্যাত সৌধ। আপনারা (সরকার) কি ইহা ধ্বংস করতে চান?’

লেখক: শিক্ষক ও গবেষক


সর্বশেষ সংবাদ