বুয়েটে মাইর খাইনি, এটা ভাবতে অবাক লাগে
- শেখ আসিফ
- প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০১৯, ০৪:৪৯ PM , আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০১:১১ PM
মাঝে মাঝে আমি অবাক হয়ে যাই এটা ভেবে যে বুয়েট থেকে আমি মাইর না খেয়ে বের হয়েছি।কিছুদিন পরপর বুয়েটে চাপা উত্তেজনার খবর পেতাম। ওই হলে অমুক মার খেয়েছে, সেই হলে তমুক। এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আবরারের মত ছেলেদেরই পেটানো হত। যারা ভদ্র, নামাজ পড়ে, ফেসবুকে এক্টিভ্লি লেখালেখি করে। মাঝেমধ্যে ভদ্রতার পাশাপাশি শিবির করার অপরাধও যোগ হত!
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ওই সমস্ত ছেলেদের সাথে আমার পরিচয় থাকত। খবরগুলো কানে চলে আসত। শুভাকাঙ্খীদের থেকে বলা হত হলে না থাকতে। কারণ আমি নাকি ওদের সাসপেক্ট লিস্টে আছি।
সেবার আমার খুব কাছের এক বন্ধু কোনো এক হলের কামরায় নিখোজ ছিল দুইদিন। যখন খুনীরা তাকে অমানুষিক নির্যাতন করেছিল তখন একটু ভয় পেয়েছিলাম কোনো খোঁজ না পেয়ে, এরপর ঘটনা বহুদূর গড়ায়। সেই বন্ধুকে হল ছেড়ে চলে যেতে হয়। আমিও বাইরে ছিলাম কয়েকদিন। তারপর পরিস্থিতি নরমাল হলে আবার ফিরে আসি।
কিন্তু এটাই শেষ নয়। সাসপেক্ট লিস্টে আমি প্রায় প্রতিবারই থাকতাম। আমি বেঁচে গিয়েছি কেন জানি না। আল্লাহ কি আমাকে কম ভালোবেসেন দেখে আবরারদের মত মর্যাদা দেননি নাকি আল্লাহর রহমতেই বেঁচে গিয়েছি তা জানি না। তবে মানসিক কষ্ট কোনো অবস্থাতেই কম ছিল না। শুধুমাত্র হল থেকে বাইরে গিয়ে থাকা খরচ বেশি এবং কষ্টকর বিধায় হল টা ছাড়িনি। আল্লাহর কাছে দোয়া করে রয়ে গিয়েছি পুরোটা সময়ই।
দেখলাম, বুয়েটের জনৈক ছাত্রলীগার কাম সুশীল আবরারের হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ করেছে। সম্প্রতি সে খুব উদ্যোক্তা বনে গিয়েছেও বটে। অথচ এই ছেলে কোনো প্রমান ছাড়াই তাঁর হলে ছড়িয়ে বেড়াতো, ‘বুয়েটে একটা শিবির থাকলে সেটা হচ্ছে শেখ আসিফ’। অর্থাৎ আমাকে কীভাবে মাইর খাওয়ানো যায় এই চিন্তা তার মাথায় ছিল। আর তার বিদ্বেষের কারণ ফেসবুকে আমার লেখালেখি ছাড়া আর কিছুই ছিল না।
তাই এখনকার অনেকের প্রতিবাদের পেছনে লুকিয়ে আছে অতীতের বিষাক্ত ইতিহাস।
এই ঘটনা কে যারা র্যাগিং বলে তাদের কিছুই জানা নেই। র্যাগিং এক জিনিস আর এগুলো ভিন্ন জিনিস। র্যাগিং ও যথেষ্ট খারাপ এবং আমার বুয়েট লাইফের শুরুটা একদম শেষ করে দিয়েছিল বলা যায়। সেগুলো আরেকদিন বলা যাবে। কিন্তু এই ঠান্ডা মাথার খুনগুলো আরেক িজিনিস। এগুলোকে র্যাগিং বললে খারাপ লাগে। আর খারাপ লাগে যখন দেখি অন্তরে চরম বিদ্বেষ পোষণ করা পাপীরা আজ সুন্দর সুন্দর কথা বলছে। যারা একটা শিবির মরলে বা একটা নামাজি ছেলে মরলে বরং খুশিই হবে। তাদের মুখে পরিস্থিতির কারণে আজ মধু। তবে পরিস্থিতি পাল্টালে এদের ভোল পাল্টাতে সময় লাগবে না।
জীবিত আবরারগুলো যেন এদের শাস্তিও দেখে যেতে পারে। (সংগৃহীত)