জাতিসংঘে ইমরান খানের বক্তব্য ও কাশ্মীর প্রসঙ্গ

  © টিডিসি ফটো

জাতিসংঘে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দেয়া বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে। ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ অধিবেশনে তিনি এই বক্তব্য দেন। প্রায় ৫০ মিনিটের দীর্ঘ এই বক্তব্যে চারটি মৌলিক বিষয় নিয়ে কথা বলে ইমরান বিশ্ব নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

গ্লোবাল ওয়ার্মিং, মানি লন্ডারিং, ইসলামোফোবিয়া ও কাশ্মীর- এই চারটি বিষয় নিয়ে কথা বললেও প্রসঙ্গক্রমে আরও অনেক বিষয় উঠে এসেছে।

সবচেয়ে বেশি কথা বলেছেন কাশ্মীর নিয়ে। জাতিসংঘে কাশ্মীরের পক্ষে জোরালো ভূমিকায় ইমরান খানকে বীরোচিত সংবর্ধনা দিয়েছে পাকিস্তানের বিভিন্ন শ্রেণি, পেশার মানুষ। ইমরান খানের বক্তব্যের পরই নতুন করে সাহস পেয়েছেন কাশ্মীরের জনগণ। জাতিসংঘে তার দেয়া সাহসী বক্তব্যের পর কাশ্মীরি জনগণ শ্রীনগরজুড়ে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন।

ইমরান খানের ওই ভাষণের পর রাতেই কাশ্মীরের স্বাধীনতার ডাক দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসেন শত শত কাশ্মীরি। এসময় তারা ইমরান খানের পক্ষে শ্লোগান দেয়।

এখানে বলা প্রয়োজন ১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ বিভক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে স্বাধীন দেশের সৃষ্টি হয়। ভারত স্বাধীনতা আইন (ইন্ডিয়ান ইনডিপেন্ডেন্স এ্যাক্ট) নামে ব্রিটিশরা ভারত বিভক্তির যে পরিকল্পনা তৈরি করেছিল তাতে বলা হয়েছিল, কাশ্মীরসহ দেশীয় রাজ্যগুলো তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী ভারত অথবা পাকিস্তান যেকোন দেশের সঙ্গে যোগ দিতে পারবে।

দেশীয় স্বাধীন রাজ্যগুলোর মধ্যে কাশ্মীরে ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের বাস। কিন্তু কাশ্মীরের তৎকালীন হিন্দু মহারাজা হরি সিং চাইছিলেন স্বাধীন থাকতে অথবা ভারতের সাথে যোগ দিতে। অন্যদিকে পশ্চিম জম্মু এবং গিলগিট-বালতিস্তানের মুসলিমরা চাইছিলেন পাকিস্তানের সাথে যোগ দিতে।

১৯৪৭ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানের পাশতুন উপজাতিরা কাশ্মীর আক্রমণের ফলে ওই আক্রমণের মুখে হরি সিং ভারতে যোগ দেবার চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী তিনি ভারতের সামরিক সহযোগিতা পান। ফলে ১৯৪৭ সালেই শুরু হয় ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে প্রথম যুদ্ধ। যা অব্যাহত ছিল প্রায় দু’বছর ধরে।

ভারত এসময় জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কামনা করলে জাতিসংঘের ৪৭ নম্বর প্রস্তাবে পাকিস্তানের সেনা প্রত্যাহার, কাশ্মীরে গণভোট এবং ভারতের সামরিক উপস্থিতি ন্যূনতা পর্যায়ে কমিয়ে আনতে আহ্বান জানিয়েছিল। কাশ্মীরে যুদ্ধবিরতি বলবৎ হয় ১৯৪৮ সালে, তবে পাকিস্তান সেনা প্রত্যাহার করতে অস্বীকার করে। তখন থেকেই কাশ্মীর কার্যত পাকিস্তান ও ভারত নিয়ন্ত্রিত দুই অংশে ভাগ হয়ে যায়।

অপরদিকে ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে চীন কাশ্মীরের আকসাই-চিন অংশটির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। তারপর ১৯৬২ সাল থেকে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তান, ভারত ও চীন- এই তিন দেশের মধ্যে ভাগ হয়ে আছে। ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫৭ পর্যন্ত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ কাশ্মীর বিরোধ নিরসনে পাঁচবার গণভোটের রেজুলেশন নেয়। কিন্তু ভারতের আপত্তির কারণে তা কার্যকর করা সম্ভবপর হয়নি।

১৯৫৭ সালে জাতিসংঘের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও কাশ্মীরকে ভারত একীভূত করে। কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চারবার বড় আকারের যুদ্ধ হয়েছে। কিন্তু কাশ্মীরীদের লাভের লাভ কিছুই হয়নি।

কাশ্মীরের আয়তন প্রায় ৮৬,০২৪ বর্গমাইল। অধিবাসীর শতকরা ৬০ জন মুসলমান। ভারত সংবিধানের ৩৭০ ধারাটি বাতিল করায় কাশ্মীরের জনগণ নতুন করে সমস্যায় পড়েছেন। সর্বশেষ গত ৫ আগস্ট ভারতের সংসদে ৩৭০ ধারা বাতিল হওয়ায় কাশ্মীরীদের সকল সুযোগ সুবিধা তিরোহিত হলো। এতে করে তাদের আজাদি পাবার আকাঙ্ক্ষা এখন আরো তীব্রতর ও বেগবান হয়। এছাড়া ১৯৮৯ সাল থেকে কাশ্মীরে চলমান আজাদি সংগ্রামে লক্ষাধিক কাশ্মীরী নিহত হয়েছেন।

এবার আসি কাশ্মীর নিয়ে ইমরানের মূল বক্তব্যে। বক্তব্যটি সংবাদ মাধ্যম থেকে সংগৃহীত ও সম্পাদিত।

মি. প্রেসিডেন্ট, এটাই সবচাইতে জটিল বিষয় এবং বিশেষ করে এটার জন্যই আমার এখানে আসা। হ্যাঁ, এটি হচ্ছে কাশ্মীরে যা ঘটছে সে সম্পর্কে। ক্ষমতায় আসার পর আমার প্রথম অগ্রাধিকার ছিল পাকিস্তান হবে এমন দেশ যে শান্তির জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাবে।

সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে যোগ দেয়ার মাধ্যমে পাকিস্তান তার সময়ের সবচেয়ে খারাপ সময় অতিবাহিত করেছে। আমাদের ৭০,০০০ লোক যুদ্ধে মারা গিয়েছে, আমাদের অর্থনীতির ক্ষতির পরিমাণ ১৫০ বিলিয়ন ডলার। ১৯৮০’র দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের স্বাধীনতার পক্ষে পাকিস্তান পশ্চিমাদের সাথে কাজ করে। গেরিলা যোদ্ধা নামে খ্যাত মুজাহিদ বাহিনীকে পশ্চিমারা বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র অর্থায়ন করেছিল এবং প্রশিক্ষণ দিয়েছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী। সোভিয়েত তাদেরকে সন্ত্রাসী বলতো, যেখানে আমেরিকানরা তাদের বলতো মুক্তিযোদ্ধা।

১৯৮৯ সালে সোভিয়েত বাহিনী আফগানিস্তান থেকে পলায়ন করে। আমেরিকা আফগানিস্তান ত্যাগ করে আর পাকিস্তানও মুজাহিদ গ্রুপ ত্যাগ করে।

অতঃপর নাইন ইলেভেন এলো। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সংযুক্ত হলো। কিন্তু আমরা এই যুদ্ধের জড়িত হইনি। কেন? কারণ পশ্চিমারা ও আমরা তাদের বিদেশী দখলদারদের বিরুদ্ধে জিহাদে তথা স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছিলাম। কিন্তু এবার আমেরিকা আফগান দখল করে বসে আর প্রত্যাশা করে, আমরা মুজাহিদদের বলব, তোমারা সন্ত্রাসী, তোমরা স্বাধীনতা সংগ্রামী না। এটা হাস্যকর। তাই পাকিস্তান নিরপেক্ষ থাকতে চেয়েছে, ধ্বংসলীলায় জড়াতে চায়নি।

৭০ হাজার পাকিস্তানী নিহত হলো সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে অথচ নাইন ইলেভেনের ঘটনার সাথে কোনো পাকিস্তানী জড়িত ছিল না। তালেবান, আল কায়েদা আফগানিস্তানে তৈরি হয়েছে, পাকিস্তানে নয়। কিন্তু ৭০ হাজার পাকিস্তানী নিহত হয়েছে!
আমি জানি যে ভারত বলে আসছে আমাদের জঙ্গি সংগঠন আছে কিন্তু আমি জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক দলকে এসে দেখার আমন্ত্রণ জানাই। পাকিস্তানে কোনো জঙ্গি গ্রুপ থাকবে না এটা আমাদের সিদ্ধান্ত।

ভারত প্রসঙ্গে বলি। ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের কথা বলি। উপমহাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেটের সুবাদে ভারতে আমার অনেক ভক্ত অনুরাগী রয়েছে, ভারতে আমার অনেক প্রিয় বন্ধু রয়েছে। আমার ভারত ভ্রমণ করতে সবসময় পছন্দ করি।

সুতরাং আমার দল ক্ষমতায় আসার পর আমার প্রথম উদ্যোগ ছিল ভারতের সঙ্গে। নরেন্দ্র মোদিকে বললাম, আমাদের সমস্যাগুলি একই। আসুন আমরা একসঙ্গে কাজ করি। দরিদ্রতা, জলবায়ুর পরিবর্তনে একসঙ্গে কাজ করি। বিশ্বস্ততার ভিত্তিতে আমরা সম্পর্কন্নোয়নে কাজ করি। কিন্তু তিনি প্রতিউত্তরে বললেন, পাকিস্তান সবসময় আমাদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালায়। আমি বলি, আমাদের সমস্যা একই। ঠিক একইভাবে পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে ভারতীয় গুপ্তচর কুলভূষণ যাদবকে ধরা হয়েছে। সে স্বীকারও করেছে যে, সে ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর হয়ে কাজ করছিল। কিন্তু আসুন আমরা সেসব বিরোধপূর্ণ বিষয় পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাই শান্তির জন্য। এটা আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার হওয়া উচিত জনগণের স্বার্থ। কিন্তু মোদি তা মানল না। তিনি আমাদের সঙ্গে সব সংলাপ বাতিল করলেন।

ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে ২০ বছর বয়সী এক ছেলে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর অনেক সদস্য হত্যা করল। মোদি তাৎক্ষণিকভাবে দোষ চাপালেন পাকিস্তানের উপর। আমি বললাম, আপনি একটা প্রমাণ দেখান যে, পাকিস্তান এর সঙ্গে জড়িত, তাহলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

পুলওয়ামা হামলায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার প্রমাণ দেখানোর পরিবর্তে তারা পাকিস্তানের উপর বিমান হামলা চালালেন। আমরাও বদলা নিলাম এবং আমাদের শক্তি দেখিয়ে দিলাম। আমরা তাদের যুদ্ধ বিমানও ভূপাতিত করেছি এবং তাদের পাইলটকেও জীবিত আটক করেছি, কিন্তু সৌজন্যতা, উদারতার খাতিরে দ্রুত তাকে ভারতে ফেরত পাঠিয়েছি। এটা আমাদের উদারতা, দুর্বলতা নয়।

আর মোদি আপনি বিমান হামলা চালিয়ে আমাদের যথেষ্ট ক্ষতি করেছেন। আপনি আমাদের ১০টি গাছ ধ্বংস করেছেন। আমরা আবহাওয়া জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া নিয়ে কথা বলছি, কাজ করছি, আপনি সেখানে আমাদের ১০টি গাছ বিনা কারণে বিমান থেকে বোমা বর্ষণে ধ্বংস করেছেন। এটা আমাদের একটা বিরাট ক্ষতি!

মোদি নির্বাচনে প্রচারণা চালিয়েছেন যে, তিনি পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষা দিয়েছেন এবং তিনি বলেছেন, এটি ছিল ট্রেইলার, পূর্ণ মুভি পরে আসছে। আমরা ভাবলাম, এটা নির্বাচনে জেতার জন্য দেয়া বক্তৃতা। নির্বাচনের পর আমরা স্বাভাবিক সম্পর্কে ফিরে যাবো। কিন্তু বিষয়টি তা ছিলো না।

নির্বাচনের পর আমরা বুঝতে পারি অর্থনৈতিকভাবে পাকিস্তানকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য ভারত FATF কালো তালিকাভুক্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেয়া সংবিধানের ৩৭০নং আর্টিকেল তারা বাতিল করল। কাশ্মীরে প্রচুর সেনা সমাবেশ করল। এখন কাশ্মীরে মোট সেনার পরিমাণ ৯ লাখের বেশি। এর মাধ্যমে ৮ মিলিয়ন লোকের উপর কারফিউ জারি করা হল।

একজন লোক কিভাবে এটা করতে পারে! এটা বুঝার জন্য আপনাকে জানতে হবে আরএসএস সম্পর্কে। আমি আরএসএস সম্পর্কে ব্যাখ্যা করতে চাই। মি. নরেন্দ্র মোদি আরএসএসের আজীবন সদস্য। আরএসএস এমন একটি সংগঠন যেটি জার্মানির এডলফ হিটলার এবং ইতালির মুসোলিনীর হিংস্র আদর্শে অনুপ্রাণিত। নাৎসিরা যে পদ্ধতিতে অন্য সকল জাতি হতে নিজেদের সেরা ভাবতো একই ভাবে আরএসএসও নিজেদের সবার চেয়ে সেরা মনে করে।

আরএসএস ভারত থেকে মুসলমানদের জাতিগত নিধনে বিশ্বাসী। এটা সবাই জানে, আরএসএস হিন্দুত্ববাদের জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাসী। তারা মুসলিম ও খৃস্টানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ায়। তারা বিশ্বাস করে মুসলিম শাসনের ফলে হিন্দুত্ববাদের সোনালী যুগের অবসান ঘটেছে। এটা সবাই জানে। গুগলে সার্চ দিয়ে আপনি জানতে পারবেন আরএসএসের প্রতিষ্ঠাতা গোলকওয়ার। এই ঘৃণার আদর্শের কারণে ১৯৪৮ সালে হত্যা করেছে ভারতের অবিসংবাদিত নেতা মহাত্মা গান্ধীকে।

এই ঘৃণার আদর্শ আরএসএসের গুন্ডাদেরকে মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে ২০০০ মুসলিমকে জবাই করতে প্রেরণা দিয়েছিল। মোদির নির্দেশে গেরুয়া পাঞ্জাবী পরে ৩ দিন ধরে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল আরএসএস সন্ত্রাসীরা। তাদের তান্ডবে ২০০০ মুসলিম নিহত হয় এবং গৃহহীন হয় ১৫০,০০০ মুসলিম।

কংগ্রেস পার্টি বিবৃতি দিয়েছিল আরএসএসের ক্যাম্পসমূহে সন্ত্রাসীরা রয়েছে। মোদি তখন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে আমেরিকা ভ্রমণ করতে পারেন নি। ৮ মিলিয়ন লোককে বন্দী করে রাখা হয়েছে! এটা কেমন মানসিকতা! সেখানে নারী শিশু অসুস্থ মানুষ রয়েছে। পশ্চিমা বিশ্ব কী ভাবছে? ৮ মিলিয়ন পশু বন্দী? তারা মানব সন্তান।

জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের উগ্র চিন্তাধারা নরেন্দ্র মোদি এবং বিজেপিকে অন্ধ করে দিয়েছে। যখন কারফিউ উঠে যাবে তখন কী ঘটবে তারা চিন্তা করছে? গত ৩০ বছরে কাশ্মীরে ১ লাখ নাগরিক নিহত হয়েছে, ১১ হাজার নারী ধর্ষিতা হয়েছে। এটা জাতিসংঘের রিপোর্ট। কিন্তু বিশ্ববাসী কিছু করছে না। কারণ তারা দেখছে ভারত তাদের জন্য ১.২ বিলিয়ন জনসংখ্যার বিশাল বাজার। বস্তুগত স্বার্থের কাছে বলি হচ্ছে মানবতা।

মোদি বলছে এটা কাশ্মীরের উন্নয়নের জন্য। কিন্তু যখন ৮ মিলিয়ন কাশ্মীরি বন্দিত্ব ভেঙ্গে ৯ লাখ সেনার মোকাবেলা করবে তখন কী ঘটবে? আমি আশঙ্কা করছি রক্তগঙ্গা বইবে।

কাশ্মীরিদেরকে খাঁচাবন্দী পশুর মতো বাড়িতে বন্দী করে রাখা হয়েছে। রাজনৈতিক নেতাদেরকে এমনকি প্রো‌-ইন্ডিয়ানদেরও গ্রেফতার করা হয়। ১৩ হাজার যুবককে ধরে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। যুবকদের ছড়রা গুলি দিয়ে অন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। এতে আরো চরমপন্থা বাড়বে।

আমরা আশঙ্কা করছি আরেকটি পুলওয়ামা ঘটনার। এবং যথারীতি ভারত এর জন্য দায়ী করবে পাকিস্তানকে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেছেন, সীমান্তে ৫০০ সন্ত্রাসী অপেক্ষা করছে। ৯ লাখ সৈন্যের বিরুদ্ধে ৫০০ সন্ত্রাসী কী করবে! ইসলামিক টেররিজম টার্ম ব্যবহার করে ভারত মানবাধিকার লঙ্ঘন করে এবং কাশ্মীরীদের উপর নির্যাতন বৃদ্ধি করে।

কেন তারা শান্তি প্রক্রিয়া বিঘ্নিত করছে? কারণ ভারতের হাতে বিকল্প নেই। কাশ্মীরে তাদের নিষ্ঠুরতার প্রতিক্রিয়ায় আরেকটি পুলাওয়ামার মতো ঘটনা ঘটবে এবং তারা আমাদের দায়ী করে আবার পাকিস্তানে বোমা মারার চেষ্টা করবে। আপনারা কি মনে করেন না যে, কাশ্মীরে ৮ মিলিয়ন লোকের দুর্দশা ভারতের ১৮০ মিলিয়ন মুসলমানকেও চরমপন্থার দিকে ঠেলে দিতে পারে?
ইহুদী কমিউনিটির প্রতিক্রিয়া কী হবে যখন মাত্র ৮ হাজার ইহুদিকে বন্দী করা হবে? ইউরোপীয়ানরা কী প্রতিক্রিয়া জানাবে? যেকোনো মানব সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া কী হবে?

সময় এখন খুবই জটিল। কিছু ঘটলে পাকিস্তানকে দায়ী করা হবে। ইতিমধ্যে পরমাণু শক্তিধর দেশ দুটি ফেব্রুয়ারিতে মুখোমুখি হয়েছিল। এজন্য জাতিসংঘের দায়িত্ব রয়েছে। ১৯৪৫ সালে এজন্যই প্রতিষ্ঠিত হয় জাতিসংঘ।

যদি আমরা পেছনে তাকাই, ১৯৩৯ সালে যখন মিউনিখ দখল করেছিল চেকোশ্লোভাকিয়া। বিশ্ব সম্প্রদায় ১.২ বিলিয়ন লোকের সমস্যা প্রশমনের জন্য কিছু করেছে? ন্যায়বিচার ও মানবতার পক্ষে দাঁড়িয়েছে? পারমাণবিক শক্তিধর দুটি দেশ প্রচলিত যুদ্ধে মুখোমুখি হলে যেকোনো কিছু ঘটতে পারে। এর পরিণতি হবে মারাত্মক।

একটি দেশ যে তার প্রতিবেশীর চেয়ে আয়তনে ৭ গুণ ছোট, এমন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হলো যে, সে আত্মসমর্পণ করবে নাকি শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ করবে? আমি নিজেকে এই প্রশ্ন করি। আমি বিশ্বাস করি আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাবো।

আমি পরমাণু যুদ্ধের হুমকি দিচ্ছি না। এটি একটি আশঙ্কা। এটি জাতিসংঘের জন্য একটি পরীক্ষা। জাতিসংঘই কাশ্মীরের জনগণের নিজেদের পছন্দ বেছে নেয়ার অধিকারের গ্যারান্টি দিয়েছিল। ১৯৩৯ সালের মতো এটা কি সঠিক সময় নয়?
এটাই সময়, পদক্ষেপ নেয়ার এটাই সঠিক সময়। এবং প্রথম একশন হবে ভারতকে অবশ্যই কাশ্মীরে হিউম্যান কারফিউ তুলে নিতে বাধ্য করা হবে যেটি গত ৫৫ দিন ধরে চলমান। ১৩ হাজার কাশ্মীরী বালককে মুক্ত করতে হবে।

কাশ্মীরের জনগণের আত্মঅধিকার প্রতিষ্ঠা করার এটাই উপযুক্ত সময় জাতিসংঘের জন্য। ধন্যবাদ।

লেখক: শিক্ষক ও গবেষক


সর্বশেষ সংবাদ