আজ আমার সকালটা অন্যরকম ছিল
- ফাতেমা তুজ জিনিয়া
- প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০১৯, ০৩:৪৪ PM , আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:৫৬ PM
আজকের ভোরটা আমার কাছে অন্যরকম ছিল। দীর্ঘ কুড়ি দিনের লড়াই শেষে আজ অন্যরকম একটি সূর্য আমার জীবনে এসেছে। আমার এই ছোট জীবনে আমি কখনোই ভাবিনি এই রকম একটি যুদ্ধের মুখোমুখি আমাকে হতে হবে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী? প্রশ্নটি আমার ফেসবুকে মন্তব্য কেন্দ্রিক হলেও এই প্রশ্নটির উত্তর আমি হাতে কলমে শিখছি। আলো থেকে অন্ধকারের পথগুলো পেরিয়ে শিখতে পেরেছি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ, একটি বিবেককে জাগিয়ে তোলা।
শিক্ষা ও গবেষণার বাহিরে যে একটি বিশ্ববিদ্যালয় ধুকে ধুকে মরতে বসেছিল, তা ওই একটি প্রশ্ন সকল অন্যায়কে ভষ্ম করে সত্যের ও ন্যায়ের দ্বার উন্মোচন করেছে। আমি কখনোই ভাবিনি, কয়েকটি শব্দের একটি বাক্য এইভাবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিটারজেন্ট হিসেবে কাজ করবে। আমার লড়াইটা ছিল স্রেফ আমার বিবেকের। চোখের সামনে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ আমার দীর্ঘদিনের অভ্যাস। আর সেই অভ্যাসের কারণে, হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছোট বহিস্কারদেশকে বড় কিছু মনে করতে পারিনি।
আমার বিশ্বাস ছিল, যদি কোথাও সত্যের জয় না হয়, তবে বিবেকের কাছে আমি জয়ী। আমার এই লড়াইয়ে প্রথমেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি সেই সকল ভাইবোনদের প্রতি যারা রাত-দিন, ঝড়-বৃষ্টি এমনকি সন্ত্রাসী হামলা উপেক্ষা করে অত্যন্ত অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি, সেইসব শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের,যারা এই ঘুনে ধরা সমাজে মেরুদন্ড সোজা করে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। একজন সংবাদকর্মী হিসেবে হয়তো পেশাদারিত্বের বাধ্যবাধকতায় আন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারিনি, তবে আমার আত্মা সব সময় আন্দোলনকারীদের সাথেই ছিল।
স্লোগানের ভাষায় সংবাদগুলো ছিল আমার প্রতিবাদের ভাষা। আমি অভিভূত, যাদের সাথে আমার কোনদিন পরিচয় হয়নি, তারা আমাকে যেভাবে আপন করে নিয়েছেন, আমি সত্যি ভাগ্যবান। দেশের বাহিরে থেকে যারা আমাকে শক্তি যুগিয়েছেন তাদের প্রতি রইলো কৃতজ্ঞতা। আপনাদের সমর্থন না পেলে হয়তো আমাদের দাবি আাদায়ে আরো অনেক বেশি প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হতো।
সর্বোপরি কৃতজ্ঞ সকল গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি যারা সমগ্র দেশের নিকট এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির বিষয়টি পৌঁছে দিয়েছেন। গণমাধ্যমকে যদি আমরা কাছে না পেতাম তাহলে হয়তো অসংখ্য জিনিয়াকে এই বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে হতো অন্যায় অপবাদ নিয়ে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আজ বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় কলঙ্কমুক্ত হলো। আশা করি, জাতির জনকের এই জন্মভূমিতে অন্যায়কারীরা আর আবাসন তৈরি করার কোন সাহস দেখাবে না। সবার সু-স্বাস্থ্য ও মঙ্গল কামনা করছি।
লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস প্রতিনিধি