পুরস্কার কি কৃতিত্ব দেখে দেওয়া হয়?
- মো. আবু রায়হান
- প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৯:৪২ PM , আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:৫৮ PM
পুরস্কার দেওয়া হয় কাজের কৃতিত্বের স্বীকৃতি হিসেবে। ভবিষ্যতে আরো বেশি উদ্যমে কাজ করতে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করার জন্য। পুরস্কার চেয়ে নেওয়ার জিনিস নয়। যদিও আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নোবেল চেয়েছেন, নিজেকে যোগ্য মনে করেন বলে।
বাংলাদেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুরস্কার দেওয়া হয় কৃতিত্বের চেয়ে রাজনৈতিক আনুগত্য,নৈকট্য, তৈল মর্দন ও তোষামোদে শীর্ষস্থান অর্জনের উপর। এ দৌড়ে যারা এগিয়ে তারাই পুরস্কার প্রাপ্তহন। এদেশে মেধা ও প্রতিভা অনেক ক্ষেত্রে গৌণ বিষয়। রাজনৈতিক যোগাযোগ লবিং তদবির পুরস্কারের জন্য বেশি উপযোগী। যে মানুষটি জীবদ্দশায় অনাহার দিন কাটান, তাঁর কৃতিত্বের স্বীকৃতি দেওয়া হয় মৃত্যুর পর মরণোত্তর পুরস্কার প্রদান করে ।
দুর্নীতি-অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) উপাচার্য অধ্যাপক নূর-উন-নবীর স্থলে ২০১৭ সালে ১৪ জুন উপাচার্য হিসেবে প্রফেসর ডক্টর মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।তিনি ভিসি হবার পর ঘটে কিছু অদ্ভুত ঘটনা। সে বিষয়ে আলোচনায় পরে আসছি। সবসময় ক্যাম্পাসে থাকার শর্তে নিয়োগ পেয়েছিলেন রংপুরে অবস্থিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। এ শর্ত অনুযায়ী স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ঢাকা থেকে রংপুরেও আসেন, ওঠেন সপরিবারে উপাচার্য ভবনে। কিন্তু কয়েকদিন যেতে না যেতেই আবার ঢাকায় সপরিবারে ফিরে যান তিনি।
উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাবার পর প্রথম ১১ মাস অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ প্রায় ৩৪০ দিনের কার্যকালে তিনি কর্মস্থলে উপস্থিত ছিলেন মাত্র ৯০ দিন। ৩৪০ দিনের চাকরিতে ২৫০ দিনই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন। এরমধ্যে কিছুদিন হয়তো ছুটিতেও ছিলেন। তিনি ঢাকায় থাকতেন। মাঝেমধ্যে সভা-সেমিনারে যোগ দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতেন বলে অভিযোগ ছিল। কখনো কখনো ঢাকা থেকে সকালের ফ্লাইটে সৈয়দপুরে নেমে সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে আবার ওই দিন বিকেলের ফ্লাইটে ঢাকায় ফিরতেন। কখনো সপ্তাহে দু-একদিন ক্যাম্পাসে থেকে আবার ঢাকায় চলে যেতেন।
২০১৭ সালের জুনে নিয়োগের পর উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ মাত্র ৯০ দিন ক্যাম্পাসে এসেছিলেন, যার মধ্যে ৩০ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে তাঁকে সার্বক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থাকার কথা। কেননা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উপাচার্যের বাসভবন করে দিয়েছে সরকার। এমনকি তার অনুপস্থিতিতে তিনি কাউকে দায়িত্বও দিতেন না। ফলে প্রশাসনিক কাজে স্থবিরতা দেখা দেয়।
২০০৯ সালে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের চার বছরের অনার্স শেষ হতে লাগে প্রায় পাঁচ বছর।অপূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের বেহাল দশা, শিক্ষক সংকট, অপর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ এমনকি পরিবহনের অব্যবস্থাপনাতে নাকাল সেখানকার শিক্ষার্থীরা। প্রতিষ্ঠার পর দশ পেরিয়ে বারো বছরে পা দিলেও নানা সমস্যা আর সংকটের মধ্য দিয়ে শিক্ষাজীবন পার করছে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের গৃহীত পরিকল্পনা অনুযায়ী ধাপে ধাপে অবকাঠামোর উন্নয়ন করার কথা থাকলেও বিভিন্ন উপাচার্যের আমলে অবহেলার দরুণ অনেকটাই পিছিয়ে আছে উত্তরাঞ্চলের এই বিশ্ববিদ্যালয়টি।
বর্তমান উপাচার্য নানা ঘটনা ঘটিয়ে ইতোমধ্যে সৃষ্টি করেছেন কৌতুহল ও হাসির খোরাক।গত বছরে রাত ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাস নিয়েছিলেন উপাচার্য। ক্লাসের শেষে মেসে ফেরার পথে এক শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে আহত করেছিল ছিনতাইকারীরা।এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা শুরু হয়েছিল। পরে দুই হল থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নেমে এসে বিক্ষোভ মিছিল বের করেছিল। শেষ পর্যন্ত তাঁর নৈশকালীন ক্লাস বন্ধ হয়েছিল।নৈশকালীন ক্লাসে সেইসময় ছাত্রীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিল। তাঁর খামখেয়ালিপনা ও দায়িত্বে অবহেলার জন্য তিনি ব্যাপকভাবে সমালোচিত ও আলোড়িত।
সেই উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ শিক্ষা ও গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য শেখ হাসিনা সম্মাননা-২০১৯ পদক পেয়েছেন । তার সঙ্গে যৌথভাবে এ পুরস্কার পেয়েছেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. হারুন-উর-রশিদ আসকারী।"পুরস্কার অনেকটা প্রেমের মতো; দু-একবার পাওয়া খুবই দরকার, এর বেশি পাওয়া লাম্পট্য।"(হুমায়ুন আজাদ)।কিন্তু কৃতিত্বের চেয়ে যার সমালোচনা বেশি তার পুরস্কার প্রাপ্তি নিয়ে কি বলবেন সমালোচকেরা?তবে বিশ্ববিদ্যালয় স্থিতিশীল ও রাজনৈতিক হানাহানি মুক্ত রাখার কৃতিত্ব হিসেবে তিনি বুঝি এ পুরস্কার পেতেই পারেন! যেখানে বাংলাদেশের অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরাজ করছে চরম অস্থিরতা।