ইসলামে জুমার দিন নির্ধারণের আদ্যপান্ত

প্রার্থনারত এক মুসলিম
প্রার্থনারত এক মুসলিম  © সংগৃহীত

শনিবার পালন তো শুধু তাদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল, যারা এ ব্যাপারে মতানৈক্য করেছিল। যে বিষয়ে তারা মতভেদ করত, তোমার প্রতিপালক অবশ্যই কিয়ামতের দিন সে বিষয়ে বিচার-মীমাংসা করবেন। (সুরা : নাহল, আয়াত : ১২৪)

ব্যাখ্যা:- আগের আয়াতে মহানবী (সা.)-কে ইব্রাহিম (আ.)-এর আদর্শ অনুসরণ করতে বলা হয়েছিল। মহানবী (সা.) মৌলিক বিষয়ে ইব্রাহিম (আ.)-এর শরিয়তের অনুসরণ করতেন। ইসলাম ধর্মে যখন শুক্রবার বা জুমার দিন ইবাদতের দিন হিসেবে নির্ধারিত হয়, তখন ইহুদিরা আপত্তি করে যে এটা তো ইব্রাহিমি ধর্মের পরিপন্থী। কেননা ইব্রাহিমি ধর্ম অনুযায়ী শনিবারকে ইবাদতের দিন হিসেবে পালন করা উচিত। এর জবাবে মহান আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন যে শনিবারকে বিশেষ দিন আখ্যায়িত করা হয়েছিল ইবরাহিম (আ.)-এর উপর। তাই মুসলমানদের জন্য ওই দিনের সম্মান প্রদর্শন জরুরি নয়।

ইব্রাহিম (আ.)-এর শরিয়তে উপাসনার জন্য শনিবার পালনের বিধান ছিল না। বনি ইসরাইল মুসা (আ.)-এর বিরোধিতা করে তাদের জন্য এটা নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু এতেও তারা সীমা লঙ্ঘন করেছে।

শুক্রবারকে ইবাদতের দিবস হিসেবে পালন করা ইব্রাহিম (আ.) প্রবর্তিত প্রথা। ইমাম ফখরুদ্দিন রাজি (রহ.) লিখেছেন, ‘ইব্রাহিম (আ.)-এর শরিয়ত অনুযায়ী জুমার দিন ইবাদতের জন্য নির্ধারণ করা উচিত, যেমনটা মহানবী (সা.) নির্ধারণ করেছেন। কেননা এটি ষষ্ঠতম দিন, যেদিন মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিকর্ম সমাপ্ত করেছেন ও মানুষের ওপর তাঁর অনুগ্রহ পরিপূর্ণ করেছেন। কিন্তু ইহুদিরা বিশেষ প্রার্থনার জন্য শনিবারকে বেছে নেয়। সেদিন আল্লাহ কিছুই সৃষ্টি করেননি। পরে সেটা তাওরাত কিতাবের বিধান হিসেবে বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হয়। শনিবারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ইহুদিদের জন্য ফরজ ছিল, যারা মুসা (আ.)-এর মর্যাদার ব্যাপারে মতভেদ করেছিল। কেননা তিনি তাদের জুমার দিন বেছে নিতে বলেছেন, কিন্তু তারা শনিবারকে গ্রহণ করে। ’ (তাফসিরুর রাজি : ২০/১৩৭)

আল্লামা ওহবা জুহাইলি (রহ.) লিখেছেন, ‘আল্লাহ তা'য়ালা ইবাদতের জন্য বিশেষ কোনো দিন নির্ধারণ করেননি। তিনি সপ্তাহের যেকোনো একটি দিনকে সম্মান প্রদর্শন করতে বলেছেন। ইহুদিরা এর জন্য শনিবারকে বেছে নেয়। কেননা এ দিন আল্লাহ তা'য়ালা সৃষ্টিকর্ম থেকে অবসর নিয়েছেন। আর খ্রিস্টানরা রবিবারকে বেছে নেয়, কেননা মহান আল্লাহ এ দিন সৃষ্টিকর্মের সূচনা করেন। পরে তাদের জন্য ওই দিনের সম্মান প্রদর্শন করাকে বিধান বানিয়ে দেওয়া হয়। আর আল্লাহ তা'য়ালা মুসলমানদের জন্য জুমার দিন নির্ধারণ করে দেন।

যা এখন পর্যন্ত মুসলিমরা পালন করে আসছেন এবং তারা কিয়ামত পর্যন্ত পালন করবেন।


সর্বশেষ সংবাদ