বাংলাদেশি সংস্কৃতির বিকাশে জিয়াউর রহমানের অবদান

  © সংগৃহীত

শহীদ জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন সুরুচিসম্পন্ন ইসলামী এবং বাংলাদেশি সংস্কৃতিকে ধারণ এবং লালনকারী রাষ্ট্রপ্রধান। সংস্কৃতি হলো মানুষের জ্ঞান, আচার-আচরণ, বিশ্বাস, রীতিনীতি, নীতিবোধ, চিরাচরিত প্রথা, সমষ্টিগত মনোভাব, সামাজিক প্রতিষ্ঠান এবং অর্জিত সুকুমার বৃত্তি ও কীর্তিকর্মের সমষ্টি। জিয়াউর রহমান উপলব্ধি করেন সংস্কৃতির মাধ্যমে একটি জাতির মনন ও রুচির বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ক সর্ববৃহৎ গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি পরিচালনার জন্য ১৯৭৮ সালের ৬ জুন জিয়াউর রহমান ‘দি বাংলা একাডেমি অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৮’ অধ্যাদেশ জারি করেন যা এখনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। জিয়াউর রহমান প্রথম শিক্ষা ও সংস্কৃতিসহ জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ‘একুশে পদক’ ও ‘স্বাধীনতা পদক’ প্রবর্তন করেন।
আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। শিশুদের বাংলাদেশি সাংস্কৃতিক-মানসিক ও সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশ এবং যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য জিয়াউর রহমান ১৯৭৬ সালে একটি অধ্যাদেশ বলে ‘বাংলাদেশ শিশু একাডেমি’ প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশি সংস্কৃতিকে শিশুদের আগ্রহ এবং উদ্দীপনা তৈরি করতে তিনি ১৯৭৮ সালে চালু করেন  ‘জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতা’। শিশুদের বিনোদনের জন্য জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালে ঢাকার প্রাণকেন্দ্র শাহবাগে শহীদ জিয়া শিশুপার্ক প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর সময়ে শিশু-কিশোরদের প্রতিভা ও মানসিক বিকাশের জন্য বাংলাদেশ টেলিভিশনে চালু করেছিলেন ‘নতুন কুঁড়ি’ নামক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা।

বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা জিয়াউর রহমান ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ-সংস্কৃতি নির্বিশেষে সব নাগরিকের ঐক্য ও সংহতিকে প্রাধান্য দিতেন। শহীদ জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার-প্রসারের লক্ষ্যে রাঙামাটিতে ‘উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট’ (বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানের নাম ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট’) এবং নেত্রকোনার দুর্গাপুরের বিরিশিরিতে ‘উপজাতীয় কালচারাল অ্যাকাডেমি’ প্রতিষ্ঠা করেন।
বাংলাদেশে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’ চালু করেন শহীদ জিয়াউর রহমান। দেশে চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশের জন্য রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সৃজনশীল ও উন্নতমানের চলচ্চিত্র নির্মাণ জিয়াউর রহমানের সময় চালু হয়। তিনি গাজীপুরে একটি চলচ্চিত্র নগরী, ফিল্ম ইনস্টিটিউট ও আর্কাইভ প্রতিষ্ঠা করেন।

শিল্পীদের মূল্যায়ন করতে জিয়াউর রহমানের সময় মরণোত্তর সম্মাননা প্রদান করা হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি বিখ্যাত ঔপন্যাসিক এবং চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান গুম হলেও জিয়াউর রহমান ১৯৭৬ সালের প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে মরণোত্তর শাখায় পদক এবং ১৯৭৭ সালে একুশে পদক দিয়ে তাঁকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান জানান। বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান নাট্যকার মুনির চৌধুরী ১৯৭১ সালে নিখোঁজ হলেও ১৯৮০ সালের স্বাধীনতা পদক দিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্মান ও স্বীকৃতি দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।

লেখক: সাবেক গণসংযোগ সম্পাদক, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ। এম.ফিল গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ সংবাদ