বঙ্গবন্ধুর জীবনের লক্ষ্যই ছিলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা

ইমরান সিদ্দিকী প্রান্তর
ইমরান সিদ্দিকী প্রান্তর  © টিডিসি ফটো

‘এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন।’ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এ ঘোষণায় সত্যিই আজ আমরা স্বাধীন। এই স্বাধীনতা বাঙালি জাতির বহু প্রতীক্ষিত ও লালিত স্বপ্ন।

স্বাধীনতার বীজ বোনা হয়েছিলো ৫২-এর ভাষা আন্দোলনে বাঙালি জাতীয়তাবাদের হাত ধরে। দীর্ঘকাল শোষণ ও নিপীড়ন সহ্য করা ছোট্ট সেই চারাগাছটি একটু একটু করে বড় হয়েছে ৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে, ৬৬-এর ছয়দফা, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচনে।

প্রত্যেকটি গল্পেরই বীর নায়ক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমান। জাতির পিতার জীবনাচরণ পর্যালোচনা করলেই এটা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, তার জীবনের প্রধান লক্ষ্য ছিলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

২০০ বছর ব্রিটিশ শাসনের পর আপাত স্বাধীনতা কামনা করলেও বাংলায় আসেনি স্বাধীনতা। বরং, পাকিস্তানিদের শোষণ নিপীড়নে অসহায় হয়ে পড়ে ভূখণ্ডটি। ঠিক তখনই বাংলার নৌকায় হাল ধরেন জাতির পিতা।

তার স্বপ্ন ছিলো শুধু স্বাধীনতা অর্জন নয় বরং ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, টেকসই সোনার বাংলা বিনির্মাণ। বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার হাত ধরে সেদিকেই হাঁটছি আমরা।

শুধুমাত্র একটা পরিসংখ্যান দিই। ২০০৬ সালে দারিদ্র্যের হার যেখানে ছিলো ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২৪ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে। যার মধ্যে চরম দারিদ্র্য ৫ দশমিক ৬ শতাংশ (তথ্যসূত্রঃ বিবিএস)। প্রেক্ষিত পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৪১ সালে দারিদ্র্য নামবে শূণ্যের কোটায়।

পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পরে বাংলাদেশের জিডিপিতে দক্ষিণাঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বঙ্গবন্ধু টানেলে আনোয়ারাকে যোগ করে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের চেহারা পাল্টে গেছে। মেট্রোরেলের জনপ্রিয়তা চোখে দেখার মত। বাঁচছে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ কর্মঘণ্টা।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের সক্ষমতা প্রমাণের আরেক বিস্ময়। হেনরি কিসিঞ্জারের চোখে তলাবিহীন ঝুড়ি আজ নিউক্লিয়ার ক্লাবের গর্বিত সদস্য। বাংলাদেশে জয় করেছে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইলের বিশাল সমুদ্রসীমা, সমাধান করেছে ছিটমহলসহ নানাবিধ কূটনৈতিক সমস্যা।

বৈশ্বিক মন্দা স্বত্বেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে রেডিমেড গার্মেন্টস ও প্রবাসী আয়ে বাংলাদেশ মাইলফলক অর্জন করে শক্ত পায়ে দাঁড়িয়ে আছে। বঙ্গবন্ধু কন্যার সবচেয়ে বড় অর্জন আশ্রায়ণ প্রকল্প (একটিও মানুষ গৃহহীন থাকবে না)।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয়ে আমরা সোনার বাংলার পথে আরও একধাপ এগিয়ে গিয়েছি।

কিন্তু মনে রাখতে হবে, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে, স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলে গেছেন, ‘এ স্বাধীনতা আমার ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি আমার বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না খায়। এই স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পায়। এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি এ দেশের মানুষ যারা আমার যুবক শ্রেণি আছে তারা চাকরি না পায় বা কাজ না পায়।’

বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষার পবিত্র দায়িত্বে দেশি-বিদেশি সমস্ত ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্ব বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তার বিশ্বস্ত ভ্যানগার্ড হয়ে এগিয়ে নেবে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশ হবে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা।

সেই অগ্রযাত্রার পথে বঙ্গবন্ধু আদর্শের সৈনিক হয়ে দেশরত্ন শেখ হাসিনা আপার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে চাই।

পরিশেষে মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতির পিতার স্মরণে কবিতার ছন্দে বলতে চাই,

‘যতদূর যাও পাখি দেখা হবে ফের
স্বাধীন ঐ আকাশটা শেখ মুজিবের।’

লেখক: সহ সভাপতি, বাকৃবি ছাত্রলীগ।


সর্বশেষ সংবাদ