প্রোফাইল পিকচার এমন এক মিথ্যা, যা আমরা সবাই বলি
- খাদিজাতুল কোবরা সনিয়া
- প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:৫৪ PM , আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:৫৯ PM
তুমি প্রোফাইল পিকচারে যাকে দেখো, সে আমি নই। খেয়াল করে দেখো, ওই ছবিতে খুঁত নেই কোথাও। ওই ছবিটা সুন্দর! দশটা ছবি তোলার পরে সবচেয়ে সেরাটা যায় প্রোফাইলে। ওটাতে চোখের নিচের অর্ধ ডজন ভাঁজ নেই, নেই দেড় ইঞ্চি জুড়ে থাকা ডার্ক সার্কেল, কিংবা মুখের এখানে সেখানে থাকা ব্রণের দাগ। তুমি বলো, ওসব ছাড়া মানুষ হয় নাকি?
প্রোফাইলে টাঙানো ছবিটা চুলে শ্যাম্পু করার পর তোলা। বাস্তবে প্রতিদিন চুলে শ্যাম্পু করা থাকে না। বাস্তবে বেশিরভাগ সময় মাথায় কাকের বাসা হয়। মজা করে বলছি না, এরকম অপরিপাটি চুল নিয়ে কোথাও কিছুক্ষণ ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলে কাক এসে ডিম পেড়ে যেতেও পারে!
ঠোঁটের কোণের চিলতে হাসি বাস্তবে সবসময় থাকে না। কপালে বিরক্তির ভাঁজ থাকে। চোখে-মুখে বিতৃষ্ণার ছাপ থাকে। ঠোঁটে ফেটে যাওয়া দাগ থাকে। হাতেপায়ে রুক্ষতার ছাঁট থাকে। গায়ে ঘামে ভেজা কাপড় থাকে। গর্তে ঢুকে যাওয়া চোখে নানান কাজের চাপ থাকে; থাকে সেই অপ্রাপ্তির গল্পটা যেটা তুমি প্রোফাইল পিকচারে ধরতে পারো না।
বিশ্বাস করো, প্রোফাইলের হাসিখুশি মানুষটাকে বাস্তবে দেখলে তুমি ভয়ও পেয়ে যেতে পারো। মনে হতে পারে যুদ্ধ কবলিত কোনো এলাকা থেকে আগত কেউ একজন। মনে হতে পারে দুর্ভিক্ষ কবলিত এলাকায় জীবন মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়ানো কেউ একজন। মনে হতে পারে যাকে তুমি দেখেছ এ সে নয়; অন্য কেউ।
প্রোফাইল পিকচার এমন এক মিথ্যা কথা যা আমরা সবাই বলি। কেন বলি? নিজের জন্য বলি। জীবনের যাঁতাকলে পিষ্ট প্রত্যেকটা মানুষ অল্প সময়ের জন্য হলেও নিজেকে সুখী-সুন্দর দেখতে চায়। সুখী-সুন্দর মুখ দেখতে সবার ভালো লাগে।
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, সুন্দর জামা-কাপড় পরে থাকলে, মানুষের আত্মবিশ্বাস বাড়ে, মন ভালো থাকে। আমরা সবাই নিজেদের মন ভালো রাখতে চাই। মিথ্যা করে হলেও চাই। নির্দিষ্ট কাউকে ঠকানোর উদ্দেশ্য না থাকলে এই চাওয়াতে দোষ দেখি না।
তুমি যেন আবার ওই ছবি দেখে আমাকে বিচার করো না! ওই ছবিতে আমাকে যতটা সুন্দর দেখায়, বাস্তবে আমি তার ধারে কাছেও নই। ওই ছবি দেখে ক্রাশ পর্যন্ত ঠিক আছে। ভুলেও ওই ছবি দেখে আমাকে আবার ভালোবেসে ফেলো না। ফেঁসে যাবে, একদম ফেঁসে যাবে!
লেখক: শিক্ষার্থী, জার্মানির ইউনিভার্সিটি অব গেটিংজেন