পোস্টমর্টেম যেভাবে হয়, মানুষ জানলে সুইসাইডের কথা ভাবত না
মানুষ যদি কখনো অটোপসি (পোস্টমর্টেম) কীভাবে করা হয় তা দেখতো, তাহলে কখনই হয়তো সুইসাইডের কথা চিন্তাও করতো না। আমি সেকেন্ড ইয়ার মেডিকেল স্টুডেন্ট। যদিও থার্ড ইয়ার থেকে অটোপসি দেখার নিয়ম। তাও এসবে আমার অনেক ঝোঁক। আজকে দ্বিতীয়বার অটোপসি দেখার সুযোগ হয়েছে। অনেক এক্সাইমেন্ট নিয়ে দেখতে গিয়েছিলাম।
তিনটা লাশ (কেস) ছিলো তখন। একজন ২৩ বছর বয়সি মেয়ের ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যার কেস। আরেকজন ৩০ বছর বয়সি মহিলার বিষ খেয়ে আত্মহত্যার কেস। আরেকজন ৩০-৩২ বছর বয়সি পুরুষকে দা দিয়ে কুপিয়ে মার্ডার কেস।
প্রথমেই ডোম মামা গায়ের সব জামা কাপর কেটে খুলে ফেলে ২৩ বছর বয়সি মেয়েটার। আহা...! আজ সেই পর্দা, লজ্জা, সম্ভ্রম সবই যেন অসহায়! তারপরেই গলা থেকে নাভির নিচ পর্যন্ত একটানে দুইভাগ করে দেয়। হয়তো আমরা কোরবানির সময়ও গরুকে অনেক কেয়ার করে কাটি। কিন্তু এখানে দুইপাশে টেনে চামড়া ছিলে ফেলল।
পাজরের কার্টিলেজটা নাইফের একটানে কেটে ভেতরের সব অর্গান দেখা হলো। পেটে বাচ্চা ছিলো কিনা চেক করলো। মাথার পেছনে একটা ইনসিশন দিয়ে নারিকেলের ছোবড়া ছোলার মত টেনে মাথার চামড়াটা কপাল পর্যন্ত ছোলে খুলিটা কুপিয়ে ভাঙছিলো। এমন দৃষ্ট দেখে কেমন যেনো গরুর হাড্ডি কোপানোর কথা মনে পরে যাচ্ছিলো।
আরও পড়ুন: লাশের পোস্টমর্টেম না করার শর্ত লিখে ছাত্রীর আত্মহত্যা
পয়সনিং-এর মহিলাটারও এভাবেই কেটে স্টমাক, লিভার, কিডনি, ব্রেন বের করে ফরেনসিকের জন্য পাঠিয়ে দিলো। মার্ডার কেসটা তো চোখের দেখাতেই মার্ডার কেস। তাও কাটাকাটি করতেই হলো। সব শেষে আবার বস্তা সেলাইয়ের এর মত নিচ থেকে উপরে সেলাই করে লাশ খালাস।
বাথরুমে নাকি আরেকটা নতুন লাশ আসছে। সেটাকে আনতে চলে গেলো মামারা। কোথায় গেলো এত সম্ভ্রম, এত দাম্ভিকতা? বারবার একটা কথাই মনে হচ্ছিলো... মরে গেলে শরীরটার যেন আর একপয়সার ও দাম নেই। বেচে থাকতে হয়তো ওই দুইটা মহিলার দিকে কেউ তাকানোর সাহস ও পেত না। বাট এখন মরার পরে নিথর দেহ পড়ে আছে। বিবস্ত্র অবস্থায় লাশ ঘরে ধারালো ছুড়ি আর কড়াত দিয়ে মাথার খুলি আলাধা হওয়ার অপেক্ষায়।
আত্মহত্যার পরে তার শরীরটার সাথে কি করা হয় যদি কেউ কখনও দেখতো; তাহলে হয়তো দেশে আত্মহত্যার পরিমাণ অনেকটা কমে যেতো। অবশ্য মানুষের বডির মূল্য আর কত?! মারা গেলে পশুরাও খায় না। এখন মনে হচ্ছে ‘‘আখেরাতটাই আসল’’। এই দুনিয়ায় আমরা শুধু ব্যাটারি লাগানো একটা শরীর। আত্মা ছাড়া শরীরের কোনো দাম নাই। আর বাপদাদার টাকা না থাকলে ডেডবডিটার ও কোনো সম্মান নাই।
লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ