কয়েকটি ছবি-ভিডিও দেখেই নিজকে অসুখী ভাবতে লজ্জা হয় না?
ভারতীয় এক অভিনেত্রী মারা গেছেন। মৃত্যুর আগে সৌভাগ্যক্রমে তিনি একজন যত্নশীল প্রেমিক পেয়েছিলেন। এ পর্যন্ত সব ঠিকঠাক। এরপর ফেসবুকে ঢুকতে পারছি না অসংখ্য মেয়ের আহাজারিময় পোস্টের চাপে, তাদের কেন এমন একজন যত্নশীল স্বামী বা প্রেমিক নাই! তাদের পোস্ট পড়ে যতটুকু বুঝলাম, তাদের প্রত্যেকেরই স্বামী বা প্রেমিক খারাপ/উদাসীন/মন্দ মানুষ, পৃথিবীতে একমাত্র যত্নশীল পুরুষ হলো ওই অভিনেত্রীর প্রেমিক!
একটি জুটির ফেসবুকে কয়েকটি ছবি-ভিডিও দেখে নিজেদের যে চরম অসুখী ভেবে দুঃখের সাগরে গা ভাসাচ্ছেন, সেজন্য লজ্জা হয় না? আপনার স্বামী হয়তো ঐন্দ্রিলার বয়ফ্রেন্ডের মতো তুনুমুনু করে জড়িয়ে ধরতে বা আগলে রাখতে পারে না, কিন্তু এই যে সারাদিন পরিশ্রম শেষে ক্লান্ত-শ্রান্ত মুখে ঘরে ফেরে, আপনাকে ও আপনার সন্তানদের ভালো রাখার জন্য, একটি সুনিশ্চিত ভবিষ্যৎ দেওয়ার জন্য, এসবই কি একেবারেই মূল্যহীন?
দুজন মানুষ প্রায় সারাজীবন একসঙ্গে থাকতে গেলে যে প্রতিদিনই ‘আই লাভ ইউ’ বলতে হবে, মুখে তুলে খাইয়ে দিতে হবে, বুকে নিয়ে ঘুম পাড়াতে হবে, কোলে নিয়ে বেড়াতে যেতে হবে এমনও কিন্তু নয়। এরকমটা হলে ক্ষতি নেই, না হলেও ক্ষতি নেই। আমি আবারও বলছি, না হলেও ক্ষতি নেই। আবেগহীন রোবটের সঙ্গে যেমন সংসার চালিয়ে যাওয়া মুশকিল, তেমনই মুশকিল আবেগের জোয়ারে ভেসে ভেসে সংসার করাও।
আরও পড়ুন: শেষ রক্ষা হল না, লড়াইয়ে হেরে না ফেরার দেশে ঐন্দ্রিলা
সংসার একটি কঠিন রণক্ষেত্রর থেকে কম কিছু নয়। অসংখ্য হিসাব-নিকাশ ঠাণ্ডা মাথায় কষতে জানলেই একটি সংসার টিকে থাকে। তাই কোনো সেলিব্রেটি বা কোনো ফেমাস কাপলের দুটি মুহূর্তের চারটি ছবি দেখেই নিজেকে জনমদুখী ঘোষণা দেওয়ার কোনো অর্থ নেই।
একজন পুরুষের সঙ্গে বছরের পর বছর ঘর করছেন, তার উপার্জনে একটি নিশ্চিন্ত জীবন যাপন করছেন, তার দেওয়া টাকায় ফোন আর ইন্টারনেট কিনে তাকেই মন্দ মানুষ বলে ফেসবুকের মতো পাবলিক প্লেসে ঘোষণা দিতে একবারও লজ্জা হয় না? একবারও কি হাতটা কেঁপে ওঠে না? অনেক উত্থান-পতন সামলে নিয়ে একটি সম্পর্ক এগিয়ে যায়।
যাদের ভালো থাকা দেখে প্রতিদিন দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন, তাদের সেই ভালোথাকার পেছনেও থাকতে পারে অনেক ত্যাগ অনেক মানিয়ে নেওয়ার গল্প। যা আপনাদের অকৃতজ্ঞ মস্তিষ্ক কোনোদিনও বুঝে উঠতে পারবে না।
আমি অনেকটাই অসুস্থ। যা বলতে চাই গুছিয়ে লিখতে পারিনি। কিছুটা হয়তো লিখতে পেরেছি। সবশেষে একটি কথা বলতে চাই, অন্যের ভালো কিছু দেখলেই নিজের তা নেই দেখে কান্নাকাটি শুরু করবেন না দয়া করে। অন্যের স্বামী বা প্রেমিক ভালো দেখলেই নিজের স্বামীর খারাপ দিকগুলো বর্ণনা করে কান্নার বন্য বইয়ে দেবেন না।
প্রথমত, অন্যের ভালো দেখলে নিজেরও ভালোলাগাতে শিখুন। দ্বিতীয়ত, কৃতজ্ঞ থাকতে শিখুন। যারা কৃতজ্ঞ থাকতে চায়, সেজন্য তাদের খুব বেশি কারণের দরকার পড়ে না। তৃতীয়ত, ক্যাটরিনার স্বামী কেন ভিকি কৌশল হলো তা ভেবে দুঃখে নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার আগে আয়নার সামনে দাঁড়ান, আপনিও কোনো ক্যাটরিনা কাইফ নন। [ফেসবুক থেকে সংগৃহীত]
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী