‘ঈদ সালামি’ সংস্কৃতির একাল সেকাল

‘ঈদ সালামি’ সংস্কৃতির একাল সেকাল
‘ঈদ সালামি’ সংস্কৃতির একাল সেকাল  © সংগৃহীত

মুসলিমদের সবচেয়ে বড় দুই ধর্মীয় উৎসবের একটি হলো ঈদুল ফিতর। ঈদের মৌলিক আচার-অনুষ্ঠান ও ঐতিহ্য একই হলেও প্রতিটি দেশ ও সংস্কৃতির নিজস্ব অনন্য রীতিনীতি রয়েছে। ঈদ সালামি বর্তমানে ঈদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষই মেতে ওঠে সালামি সংগ্রহে।

একে অপরকে সালামি প্রদান ও গ্রহণের মাধ্যমে যেন ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করা হয়। প্রযুক্তির উন্নতির ফলে অনলাইন টাকা লেনদেনের সুবিধার মাধ্যমে এখন আর সালামি নিতে সশরীরে উপস্থিত হতে হয় না। মুহূর্তেই দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে কিংবা বিদেশ থেকে দেশে সালামি পাঠানো সম্ভব হচ্ছে। তবে ঈদ সালামির প্রচলন কীভাবে শুরু হয়েছিল? চলুন জেনে নেওয়া যাক এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট।

ঈদ সালামির ইতিহাস
ঐতিহাসিকদের মতে, ঈদ সালামির প্রচলন নিয়ে ভিন্ন মত রয়েছে। ধারণা করা হয়, মধ্যযুগের শুরুর দিকে ‘ঈদ সালামি’ প্রদানের প্রথা শুরু হয়। ফাতিমীয় খিলাফতের আমলে সমাজের শিশু-কিশোর ও বয়স্কদের অর্থ, মিষ্টান্ন জাতীয় খাবার কিংবা পোশাক উপহার দেওয়ার রেওয়াজ চালু হয়। পরে মামলুক সাম্রাজ্যের সময় আনুষ্ঠানিকভাবে ঈদের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ নগদ অর্থ প্রদানের প্রচলন গড়ে ওঠে, যা ব্যক্তি বিশেষের সামাজিক মর্যাদা অনুযায়ী নির্ধারিত হতো।

পরবর্তীতে উসমানীয় সাম্রাজ্যের শেষ দিকে এসে এই প্রথা পারিবারিক পরিসরে ব্যাপকভাবে গৃহীত হয় এবং পরিবারের ছোট সদস্যদের সালামির প্রচলন জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

উপমহাদেশে ঈদ সালামির প্রচলন
ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের আগমন ঘটে অষ্টম শতকে, তবে মুসলিম শাসন শুরু হয় ত্রয়োদশ শতকে। বাংলা অঞ্চলে ঈদের আমেজ প্রথমদিকে সীমিত ছিল নবাব-বাদশাহদের মধ্যে, যা জনসাধারণের নাগালের বাইরে ছিল। তবে উনিশ শতকের ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলনের ফলে ঈদ উৎসবের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে।

বিশ শতকের চতুর্থ দশকে শহরাঞ্চলে ঈদ উদ্‌যাপন জনপ্রিয় হতে শুরু করে। সে সময় ঢাকা ও কলকাতায় ঈদ উপলক্ষে নাচ, গান ও মিছিলের প্রচলন দেখা গেলেও গ্রামবাংলার তথ্য পাওয়া যায় কম। তবে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর, বিশেষ করে আশির দশক থেকে ঈদ সালামি দেওয়ার রেওয়াজ সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে প্রসার লাভ করে।

আধুনিক যুগে ঈদ সালামি
প্রথাগতভাবে শিশু-কিশোররা বড়দের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে সালামি নিত। তবে প্রযুক্তির উন্নতির ফলে এখন ঈদ সালামির লেনদেন অনলাইনেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মোবাইল ফাইন্যান্সিং সার্ভিস ও ডিজিটাল পেমেন্ট পদ্ধতির মাধ্যমে দেশ-বিদেশ থেকে মুহূর্তেই সালামি পাঠানো যাচ্ছে।

বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসগুলো ঈদ সালামিকে কেন্দ্র করে নানা অফার দিচ্ছে, যা এই ঐতিহ্যকে আরও আধুনিক ও সহজলভ্য করে তুলেছে। অনলাইনে সালামির লেনদেন ঈদ উদ্‌যাপনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে এবং প্রথাগত রীতির সঙ্গে প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ