৩০ আগস্ট ২০২২, ১৮:১৫

কেন জিপিএ বাতিল ও ক্যারিঅন বহাল চান মেডিকেল শিক্ষার্থীরা?

বগুড়ায় আন্দোলনরত মেডিকেল শিক্ষার্থীরা  © টিডিসি ফটো

দেশের মেডিকেল কলেজগুলোতে গ্রেডিং পদ্ধতিতে ফলাফল প্রকাশের তীব্র বিরোধিতা করে এই পদ্ধতি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন এমবিবিএসে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা। একই সাথে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ক্যারিঅন পদ্ধতি বহালের দাবিও জানিয়েছেন তারা।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, মেডিকেল কলেজগুলোতে চারটি প্রফেশনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই পরীক্ষার কোন একটিতে ফেল করলে শিক্ষার্থীরা নিজের ব্যাচের সাথেই ক্লাস করার সুযোগ পান। পরবর্তীতে যে বিষয়ে ফেল করেছেন সেই বিষয়ের সাপ্লিমেন্টারি দেওয়ার সুযোগ থাকে।

তবে ক্যারিঅন পদ্ধতি বাতিল করা হলে শিক্ষার্থীদের জুনিয়রদের সাথে ক্লাস করতে হবে। এছাড়া নিজের ব্যাচের সাথে ক্লাসের সুযোগ হারাতে হবে। এমবিবিএসের প্রতিটি প্রফেশনাল পরীক্ষায় ৬০ শতাংশ নম্বর না পেলে ফেল ধরা হয়। এই ৬০ শতাংশ নম্বর তোলা কতটা কষ্টকর সেটা কেবলমাত্র একজন মেডিকেল শিক্ষার্থীই জানে। ক্যারিঅন পদ্ধতি বাতিল করা হলে ​শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম মানসিক বিপর্যয় নেমে আসবে। তাই তারা ক্যারিঅন পদ্ধতির বহাল চাচ্ছেন।

গ্রেডিং পদ্ধতি নিয়ে শিক্ষার্থীরা বলছেন, এটি আরেকটি বৈষম্যমূলক পদ্ধতি। এর ফলে শিক্ষার্থীদের ‘এ’ ‘বি’ এবং ‘সি’ গ্রেডে ভাগ করা হবে। যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি অসম প্রতিযোগিতা তৈরি করবে। এমবিবিএসে অধ্যয়নরতরা এমনিতেই পড়ালেখা নিয়ে প্রচণ্ড চাপের মধ্যে থাকেন। এই অবস্থায় ফলাফলে গ্রেডিং পদ্ধতি চান না তারা।

আরও পড়ুন: বেসরকারি মেডিকেলে শিক্ষক দরকার ৯ হাজার, আছে সাড়ে ৪ হাজার

এদিকে মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) জিপিএ বাতিল ও ক্যারিঅন বহালের দাবিতে দেশের বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন। দাবি মেনে না নিলে পরবর্তীতে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেবেন তারা।

বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের ৩১ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. হিমেল দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মেডিকেল শিক্ষার্থীদের জিপিএ’র মাধ্যমে মূল্যায়ন করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। চিকিৎসক মানে চিকিৎসকই। এখানে কে জিপিএ-৪ পেল আর কে জিপিএ-৩ পেল সেটি মূখ্য বিষয় না।

তিনি জানান, জিপিএ পদ্ধতিতে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করার সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী। এতে এমবিবিএস পাস করার পর একজন চিকিৎসক তার নামের পাসে সিজিপিএ লিখবে। আমার জানামতে মেডিকেলের কোনো শিক্ষার্থীই জিপিএ পদ্ধতিতে ফল মূল্যায়ন চায় না। তাই দ্রুত এই সিদ্ধান্ত বাতিল করার দাবি জানাচ্ছি।

আরও পড়ুন: দুপুরে ভর্তি হাসপাতালে, বিকেলে মারা গেলেন মেডিকেলছাত্রী মেহজাবিন

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের ১১ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. খালিদ হোসাইন জানান, গ্রেডিং পদ্ধতি বাতিল এবং ক্যারিঅন বহালের দাবিতে, বগুড়া, দিনাজপুর, বরিশাল, ময়মনসিংসহ দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন। এই দুটি পদ্ধতি এমবিবিএসে অধ্যয়নরতদের জন্য বিষফোঁড়ার মতো।

তিনি আরও বলেন, ১৯৯০ দশকের কিছু চিকিৎসক রয়েছেন যারা ক্যারিঅন পদ্ধতি বাতিল চাচ্ছেন। কেননা তারা এই পদ্ধতি পাননি। তবে এই পদ্ধতি এমবিবিএস শিক্ষার্থীদের জন্য কতটা জরুরি সেটা যারা পড়ছেন কেবল তারাই অনুধাবন করতে পারেন।

এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, মেডিকেলের পড়ালেখা অনকে কঠিন। এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক কম একবারেই ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে। যারা বিভিন্ন প্রফেশনাল পরীক্ষায় ফে র করে তারা নিজের ব্যাচের সাথেই কন্টিনিউ করতে পারে। তবে তার সাপ্লিমেন্টারি দেওয়ার সুযোগ ছিল। তবে এই পদ্ধতি বাতিল করা হলে শিক্ষার্থীদের উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি হবে। অনেকেই লজ্জায় আত্মহত্যার মতো পদক্ষেপ নিতে পারে। সবকিছু বিবেচনায় এই পদ্ধতি বাহল রাখা জরুরি।