সরকারি মেডিকেল কলেজ 

অধ্যক্ষদের নিয়ে কক্সবাজার যাচ্ছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর  © টিডিসি ফটো

দেশের সব সরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষদের নিয়ে কক্সবাজার যাচ্ছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। ভালো শিক্ষক হওয়ার প্রশিক্ষণ, বার্ষিক কর্মসম্পাদনা পর্যালোচনা এবং গবেষণা কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা করতে এই আয়োজন করা হচ্ছে। তিন দিনব্যাপী এই আয়োজনের অর্থ নিজ নিজ দপ্তর ব্যয় করবে বলে দাবি করেছে অধিদপ্তর।

বার্ষিক কর্মসম্পাদনা, উদ্ভাবনীমূলক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ, ভালো শিক্ষক হওয়ার প্রশিক্ষণের মতো আয়োজন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়মিত কাজ। প্রতিষ্ঠানটি গত জানুয়ারি থেকে এ ধরনের কর্মশালা চালিয়ে যাচ্ছে। এই আয়োজনের মাধ্যমে ইতোমধ্যে প্রায় ১৩ শতাধিক চিকিৎসককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড এর আগে ঢাকায় আয়োজন করা সম্ভব হলেও এবার সেটি কক্সবাজার করা হচ্ছে।

দেশে করোনা পরবর্তী আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার সব দপ্তর ও সংস্থানে আর্থিক ব্যয় কমানোর ওপর জোর দিয়েছে। সরকারি সব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বন্ধ ঘোষণা করা হলেও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর এই ধরনের আয়োজন করতে যাচ্ছে। চলতি অর্থ বছরের বাজেটকে সামনে রেখে এবার কক্সবাজারে এই ধরনের আয়োজন করা হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। ফলে বিষয়টি নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে।

দেশের এই আর্থিক সংকটাপন্ন মুহূর্তে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের এমন আয়োজনকে বিলাসিতা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, কর্মশালার নামে অর্থের অপচয়ের আয়োজন করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সরকারের একটি প্রতিষ্ঠানের রুটিন এই কাজের জন্য কক্সবাজারে এমন আয়োজনের কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারে না বলে অভিমত তাদের।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘‘প্রশিক্ষণের নামে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর ও সরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষদের কক্সবাজারে যাওয়ার বিষয়টি নৈতিক স্খলনের মধ্যে পরে। এটি কোনো ভাবেই কাম্য নয়। প্রশিক্ষণের নামে এই ধরনের সুবিধা ভোগ করা ক্ষমতার অপব্যবহার করা।’’

আরও পড়ুন: উপাচার্যদের নিয়ে কক্সবাজার ভ্রমণে যাচ্ছে ইউজিসি, বরাদ্দ ১৫ লাখ

তিনি আরও বলেন, ‘‘এই ধরনের আয়োজনের নামে যে ব্যয় হচ্ছে সেটি রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই যেখানে ব্যয় সংকোচের ঘোষণা দিয়েছেন। সেখানে এ ধরনের আয়োজনের সরকারি অনুমোদন দেওয়া উচিত নয়। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ধরনের আয়োজন বাতিল করা দরকার বলে আমি মনে করি।’’

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারে যাতায়াতসহ তিনদিন থাকা-খাওয়ার যাবতীয় খরচ নিজ নিজ দপ্তর/প্রতিষ্ঠান বহন করবে। এজন্য এই কর্মশালায় স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে আলাদা কোনো বাজেট দেওয়া হয়নি। আলাদা বাজেট না হলেও তিনদিনের এই আয়োজনে প্রায় ৩০-৩৫ লাখ টাকার মতো ব্যয় হবে। যা সরকারকেই বহন করতে হবে। কেননা অধিদপ্তর এবং প্রতিষ্ঠান তাদের কাজকর্ম পরিচালনার জন্য প্রতিবছর একটা বরাদ্দ পায়। এই ব্যয় সেই বরাদ্দ থেকেই করা হবে। এই ধরনের আয়োজন ঢাকায় করা হলে পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা ব্যয় হত। ফলে অর্থের অপচয় রোধ হত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এ ধরনের কর্মশালা ঢাকায় আয়োজন করা সম্ভব। অন্যান্য সময় এটি ঢাকাতেই হয়েছে। তবে এবার ঠিক কি কারণে এই কর্মশালা কক্সবাজারে আয়োজন করা হচ্ছে সেটি আমার জানা নেই। আয়োজকরাই ভালো বলতে পারবেন। এ ধরনের কর্মশালা ঢাকায় করা হলে সরকারের আর্থিক ব্যয় কমতো বলেও জানান ওই কর্মকর্তা। 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অনুষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অধিদপ্তরের সিএমই শাখার পরিচালক অধ্যাপক সাহিনা সুবহান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আগামী ১১-১৩ জুন এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। কর্মশালায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সাইফুল হাসান বাদলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এছাড়া ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, অতিরিক্ত মহাপরিচালক, বিভিন্ন উইংয়ের পরিচালক, দুইজন ফোকাল পয়েন্ট অংশগ্রহণ করবেন। 

আয়োজনটি কোথায় করা হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কক্সবাজারের সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানে এই কর্মশালা করা হবে। মহাপরিচালক, অধ্যক্ষসহ সকলেই সরকারি বাসভবনে থাকবেন। তবে একসঙ্গে এত কর্মকর্তা কোন বাসভবনে থাকবেন কিংবা সরকারি কোন প্রতিষ্ঠানে এই কর্মশালার আয়োজন করা হবে তার নাম জানাতে পারেননি তিনি।

আয়োজনের বাজেট সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, আয়োজনের জন্য কত টাকা বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে সেটি স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানাতে পারবেন। পুরো অনুষ্ঠানটি তার তত্ত্বাবধানেই হচ্ছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, কক্সবাজারে আমরা অধ্যক্ষদের একটি প্রশিক্ষণে নিয়ে যাচ্ছি। এই প্রশিক্ষণ দুইদিন দেওয়া হবে। পরবর্তীতে তারা নিজ নিজ কর্মস্থলে গিয়ে অন্য চিকিৎসকদের এই প্রশিক্ষণ দেবে। আমরা তখন ভার্চুয়ালি সেটি পর্যবেক্ষণ করবো।

কর্মশালার বাজেট সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, এই কর্মশালার জন্য কোনো বাজেট নেই। নিজ নিজ দপ্তর এবং প্রতিষ্ঠান তাদের নিজেদের অর্থ দিয়ে সবকিছু করবেন। ফলে এখানে সরকারের আর্থিক ব্যয়ের যে কথাটি বলা হচ্ছে সেটি প্রযোজ্য হচ্ছে না।


সর্বশেষ সংবাদ