শিক্ষার্থীদের অত্যধিক ইন্টারনেট আসক্তিতে ফল খারাপ হচ্ছে
চট্টগ্রামের ছয়টি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পারফরম্যান্সের ওপর ইন্টারনেট আসক্তির প্রভাব নিয়ে গবেষণায় করেছেন চট্টগ্রামের একদল গবেষক। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে শুরু করা হয় গবেষণার কাজ। শেষ হয়েছে কয়েকদিন আগে।
গবেষণায় শিক্ষার্থীদের ফলাফলের সঙ্গে ইন্টারনেট আসক্তির উল্লেখযোগ্যভাবে সম্পর্ক থাকার প্রমাণ মিলেছে। অত্যধিক ইন্টারনেট ব্যবহার শিক্ষার্থীদের খারাপ ফলাফলের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। দেখা গেছে, যেসব শিক্ষার্থী তাদের বেশিরভাগ পরীক্ষায় নিয়মিতভাবে পাস করেছেন; তাদের ইন্টারনেটের প্রতি আসক্তির হার উল্লেখযোগ্যভাবে কম। তাদের তুলনায় যারা বেশিরভাগ পরীক্ষায় দ্বিতীয় বারে পাস করেছেন তাদের আসক্তির হার অনেক বেশি। শিক্ষার্থীদের এমন আসক্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা।
আরও পড়ুন: ভিসি-ট্রেজারার নেই ৬৬ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে, ৮৫টিতে নেই প্রো-ভিসি
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক), চমেক ডেন্টাল ইউনিট, চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ডেন্টাল কলেজ, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজ এবং আর্মি মেডিকেল কলেজের ৬১১ জন স্নাতক পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীর ওপর গবেষণা কাজটি পরিচালনা করা হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, ৯৫ দশমিক ১ শতাংশ শিক্ষার্থী তাদের মূল্যবান সময় ব্যয় করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। দশজনে আটজন বা ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে ক্লাসে মনোযোগ হারান। একই কারণে ৭২ দশমিক এক শতাংশ শিক্ষার্থী দৈনন্দিন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়েন। আর ৭০ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষার্থীর প্রাতিষ্ঠানিক ফলাফলের ওপর প্রভাব ফেলে ইন্টারনেট।
আরও পড়ুন: ২৩তম প্রধান বিচারপতি হচ্ছেন হাসান ফয়েজ
চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের চিকিৎসা শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আফরোজা হক এতে নেতৃত্ব দেন। গবেষণাটিতে আরও যুক্ত ছিলেন চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মেহরুন্নিসা খানম, কলেজের ফার্মাকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফাতিহা তাসমিন জিনিয়া, বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহেদা আহমেদ, মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. এএসএম রেদওয়ান, ফিজিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শারমিন জাহান, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটের সহকারী অধ্যাপক ডা. আবুরুশদ মো. মশরুর এবং কভিড-১৯ ঝুঁকি যোগাযোগ প্রকল্পের ইউএনএফপিএ ডা. শমরিতা বড়ূয়া।
গবেষণা দলের প্রধান ডা. আফরোজা হক জানান, অত্যধিক ইন্টারনেট ব্যবহার তাদের দৈনন্দিন প্রাতিষ্ঠানিক কাজ থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহার কমাতে পারলে তাদের জ্ঞানীয় দক্ষতা অনেক বেশি উন্নত হবে। তারা তাদের একাডেমিক পারফরম্যান্সকে উচ্চতর করতে সক্ষম হবে।
আরও পড়ুন: পাঠক্রম অনুযায়ী ঢাবির ভর্তি পরীক্ষা: উপাচার্য
গবেষকদের মতে, ইন্টারনেটের আসক্তি থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করতে, অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের অবসর যাপনের বিষয়ে আরও অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক ওয়াইফাই প্রোগ্রামিংয়ে নন-একাডেমিক উদ্দেশ্যে ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের কঠোর ফিল্টারিং প্রক্রিয়া আরোপ করতে হবে। পাশাপাশি তারা সুপারিশ করেছেন শিক্ষার্থীদের জ্ঞানীয় ক্ষমতার উন্নতির জন্য একাডেমিক সেশনে গ্রুপ ওয়ার্ক, উপস্থাপনা, অ্যাসাইনমেন্ট ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করার।