বেসরকারি মেডিকেলে শিক্ষার্থী সংকটে অটোমেশনকে দায়ী করলো বিপিএমসিএ
দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজে প্রথমবারের মতো অটোমেশন প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। এর ফলে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টিকে বেসরকারি মেডিকেলে শিক্ষার্থী সংকটের প্রধান কারণ বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ)।
তারা বলছে, বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছে। এরই ধারাবহিকতায় ভর্তি প্রক্রিয়া অটোমেশন করা হয়েছে। কিন্তু এ পদ্ধতি হিতে বিপরীত হয়েছে। কারণ বাংলাদেশের বাস্তবতায় এর পরিবর্তন ও পরিবর্ধন প্রয়োজন।
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে শনিবার (২৫ মে) `বেসরকারি স্বাস্থ্য শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং ভর্তি প্রক্রিয়ায় চলমান শিক্ষার্থী সংকটের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলা হয়েছে।
সভায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিপিএমসিএ সভাপতি এম এ মুবিন খান। এতে তিনি বলেন, এ প্রক্রিয়ায় মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী ঝরে যাচ্ছে। অনেকের ইচ্ছার বিপরীতে বিভিন্ন জায়গায় ভর্তি করায় ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের মনোযোগ হারিয়ে পড়াশুনো থেকে ঝরে যাচ্ছে। ভর্তি প্রক্রিয়া ডিজিটাল করতে গিয়ে অনেক জটিল প্রক্রিয়ার অবতারনা করা হচ্ছে, যার বলি হচ্ছে স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যবস্থা।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রতি বছর এমবিসিএস কোর্সে ১১ হাজার ৫৮৮টি আসনে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হচ্ছে। এর মধ্যে ৩৮টি সরকারি মেডিকেল কলেজে সিট সংখ্যা ৫ হাজার ৩৮০টি। ৬৭টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে আসন সংখ্যা ৬ হাজার ২০৮ টি। এর মধ্যে দেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ৩ হাজার ৬৫৭টি আসন বরাদ্দ আছে। বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য আসন বরাদ্দ আছে ২ হাজার ৫৫১ টি। বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশের প্রায় ৬০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হন।
বেসরকারি স্বাস্থ্যখাতে ৭০ হাজার চিকিৎসকসহ ১০ লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থান রয়েছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১২ লাখ লোক বেসরকারি স্বাস্থ্যখাতে নিয়োজিত আছে। দেশে বেসরকারি স্বাস্থ্যখাতের বিনিয়োগ ৩ হাজার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার। এছাড়া স্বাস্থ্যখাতের মোট আর্থিক সংশ্লেষ্ট হচ্ছে ৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ৬৭ টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে প্রায় ১২ হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী এমবিবিএস পড়ছে। ফলে দেশে ২ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আসছে।বেসরকারি পর্যায়ের স্টেক হোল্ডারদের যৌক্তিক সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে একবিংশ শতাব্দির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে বলে মত তাদের।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, অটোমেশনের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের পছন্দ অনুযায়ী বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারে না। এভাবে ছাত্র-ছাত্রীরা ঝরে যাচ্ছে। অটোমেশন চালুর দু’বছরে বেসরকারি কলেজে আবেদন পড়ে মোট সিটের সমপরিমান বা তার কিছু বেশি। এমনিতে বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তি ইচ্ছুক ছাত্র-ছাত্রীর আবেদনের সংখ্যা কম, তাহলে অটোমেশনের যৌক্তিকতা কি? বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তির কোটা ৫০ শতাংশে উন্নীত করা গেলে ২০০ কোটি টাকার অধিক রেমিটেন্স আসবে বলে দাবি তাদের।
সভাপতি এম এ মুবিন খান বলেন, বাংলাদেশে প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য মাত্র ৭ দশমিক ২৬ জন ডাক্তার আছেন। যা দক্ষিন পূর্ব এশিয়ায় নিচের দিক থেকে দ্বিতীয়। এ স্বল্প সংখ্যক ডাক্তার তৈরিতে বেসরকারি খাতের বড় অবদান রয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি পদ্ধতিগত ভুলের কারণে বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তিতে চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে।
অটোমেশনের নামে প্রাইভেট মেডিক্যাল সেক্টর ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র চলছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, চলতি বছর বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ১ হাজার ২০০ সিট খালি রয়েছে। গত দু’বছরে ২০ শতাংশের ওপরে সিট খালি। এমনকি গরিব মেধাবী কোটায়ও ছাত্র-ছাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। অটোমেশনের কারণে শিক্ষার্থীরা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।
আরো পড়ুন: শিক্ষার্থী ভর্তিতে কোনো কোচিং পরিচালনা করে না নটর ডেম কলেজ
এ সময় কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছে বিপিএমসিএ। বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার গুণমান মূল্যায়নে নিয়মিত মনিটরিং ও মূল্যায়ন পদ্ধতি নিশ্চিত করা এবং ঘাটতিগুলি সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। অবকাঠামো উন্নত করতে, আধুনিক শিক্ষাদান প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ এবং যোগ্য অনুষদ সদস্যদের নিয়োগের জন্য বেসরকারি আর্থিক সহায়তা প্রদান করুন।
প্রণোদনামূলক স্কিম প্রবর্তনের পাশাপাশি চিকিৎসা শিক্ষার সামগ্রিক গুণমান উন্নত করার জন্য জ্ঞান আদান-প্রদান, ফ্যাকাল্টি এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম এবং যৌথ গবেষণা প্রকল্পের জন্য বেসরকারি ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতায় উৎসাহিত করার আহবান জানান তারা।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজের অনুষদের সদস্যদের জন্য অবিরত শিক্ষা কার্যক্রম অফার করতে উৎসাহিত করার কথাও বলেছেন তারা। বিপিএমসিএ বলছে, সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষার মানোন্নয়নে বিএমডিসিকে শক্তিশালী করতে হবে। বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূর করে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মানোন্নয়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার কথাও বলা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে অটোমেশন প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থী ভর্তি প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা বলেন, এটা পাকিস্তান আমলেও ছিল। এ পদ্ধতির কারণে অনেকে ভর্তিতে সমস্যা বোধ করছে। আমি নিজেও এটা শিকার। এই অটোমেশনের কারণে আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারিনি।
প্রাক্তন পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ. কে. আব্দুল মোমেন বলে, আমাদের হাসপাতালের ডাক্তারদের কোয়ালিটি ভালো। হাসপাতালের উপর মানুষের আস্থা আনতে হবে, কম্পিটিশন বাড়াতে হবে।চিকিৎসা ক্ষেত্রে কোয়ালিটি বাড়লে মানুষ এমনি প্রতিদান দিবে।
এছাড়া অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং বেসরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও বিশেষজ্ঞগণ উপস্থিত ছিলেন।