নিয়োগ বাণিজ্যের জেরে বিএসএমএমইউতে উত্তেজনা, ভিসির সমর্থকদের মারধর
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য শরফুদ্দিন আহমেদের মেয়াদ প্রায় শেষের দিকে। এমন সময় নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ তুলেছেন চিকিৎসকরা। এরই জের ধরে কিছু দিন থেকে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে ক্যাম্পাস জুড়ে। সর্বশেষ, ভিসির ব্যক্তিগত সহকারীসহ কয়েকজনকে মারধর করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, শনিবার (২৩ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য শরফুদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে তার কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন আওয়ামী লীগপন্থি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) সংগঠনের শিক্ষকরা। এতে অংশ নেন কর্মকর্তা-কার্মচারীরাও। একপর্যায়ে উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী ডাক্তার রাসেল আহমেদকে চড়-থাপ্পড় দিয়ে উপাচার্যের কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয়। বিএসএমএমইউর সুপার স্পেশালাইজড শাখাতেও একজনকে মারধর করা হয়েছে বলে জানা যায়।
বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছেন জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য শরফুদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেছেন “তারা কয়েকজনকে মারধর করেছে, আমি বিষয়টা শুনেছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলব।”
এদিকে, উপাচার্য শরফুদ্দিনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৮ মার্চ। এরই মধ্যে গত ১১ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক দীন মো. নূরুল হককে বিএসএমএমইউয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
মেয়াদ শেষের আগে উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাচিপ সংগঠনের নেতারা। তাদের অভিযোগ, ভিসি শরফুদ্দিনের নিয়ম বহির্ভূতভাবে ‘শতাধিক’ শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারী অ্যাডহকের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এর আগের নিয়োগগুলোতে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে বলেও দাবি তাদের।
আরও পড়ুন: শেষ কর্মদিবসে ৩৭ নিয়োগ, নতুন বিতর্ক নিয়ে বিদায় চবি ভিসি শিরীণের
স্বাচিপের বিএসএমএমইউ শাখার সদস্য সচিব অধ্যাপক মো. আরিফুল ইসলাম জোয়ারদার টিটো বলেন, ‘সাধারণত উপাচার্য নিয়োগ পাওয়ার পর আগের উপাচার্য শুধু মাত্র দৈনন্দিন রুটিন কাজ করেন। কিন্তু বর্তমান উপাচার্য শতাধিক ডাক্তার, কর্মচারী ও প্রায় ৩০ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন। অনেকের ধারণা, এর পেছনে অর্থেরও লেনদেন রয়েছে।’
স্বাচিপের চিকিৎসক, শিক্ষক, বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই ধরনের অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দিতে বাধা দিয়ে আসছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এখানকার ইট-পাথরও জানে, টাকা-পয়সা ছাড়া এখানে চাকরি হয় না, তিনি বিএসএমএমইউকে একটা ব্যবসা কেন্দ্র বানিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতিষ্ঠানে কোনো দুর্নীতি করতে দেওয়া হবে না। আমরা কোনোক্রমেই সিন্ডিকেট বসতে দিব না, যার কারণে সমবেত হয়ে আমরা প্রতিবাদ করছি।’
ভিসি শরফুদ্দিনের অর্থের বিনিময়ে নিয়োগের স্বাধীন বিচার বিভাগীয় তদন্ত করার আহ্বান জানান তিনি। স্বাচিপের এই নেতা বলেন, ‘বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসি গত তিন বছর ধরে ব্যাপক অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে নিয়োগ দিয়েছেন, যা গণমাধ্যমে উঠে এসেছে।আমরা তার তিন বছরে দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি।
তবে নিয়োগ বাণিজ্যের এসব অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য শরফুদ্দিন আহমেদ সবকিছু স্বচ্ছতার ভিত্তিতেই হয়েছে বলে দাবি করেন।