২০ জুন ২০২৩, ১৮:৪৪

মেধাবী ও অসচ্ছল কোটায় পূর্বের নিয়ম বহাল চান শিক্ষার্থীরা

মেডিকেল শিক্ষার্থী  © প্রতীকী ছবি

দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ভর্তিতে ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে মেধাবী ও অসচ্ছল কোটায় প্রার্থী নির্বাচনে চলতি নিয়ম বাতিল চেয়েছেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (২০ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান ভর্তিচ্ছুরা। একই সাথে তারা বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ভর্তিতে মেধাবী ও অসচ্ছল কোটায় প্রার্থী নির্বাচনে পূর্বের নিয়ম বহাল চেয়েছেন। দেশের চিকিৎসা শিক্ষার তদারক সংস্থা স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি এ আহবান জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এ বছর দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীদের মেধাবী ও অসচ্ছল কোটায় প্রার্থী নির্বাচনে গতানুগতিক নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলো। একজন শিক্ষার্থীর যথোপযুক্ত মেধাক্রম এবং শর্তের আওতাভুক্ত হয়েও প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। বর্তমান সময়ে এসেও এভাবে আমাদের স্বপ্নভঙ্গ হচ্ছে যা সত্যিই অমানবিক ও দুঃখজনক।

১ লক্ষ ৩৯ হাজার ২১৭ জন প্রতিযোগীর মধ্যে ৪৫০৫ তম মেধাক্রমের থেকেও মৌখিক পরীক্ষার জন্য মনোনীত না হওয়ায় হতাশার কথা জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী ৯৩০ জন শিক্ষার্থীকে মনোনীত করার নিয়ম থাকলেও অনেক দূরের মেধাক্রমের (১৯,৩৩১ ও ৪৪,০১১) শিক্ষার্থীকে মনোনীত করে সর্বমোট ৩২৫ জনকে মৌখিক পরীক্ষার (ভাইবা) জন্য মনোনীত করা হয়েছে। যা স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক প্রকাশিত সার্কুলারের ২১ নং নীতিমালা বহির্ভূত।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক প্রকাশিত ভর্তি সার্কুলারের ২১ নং নীতিমালার স্বপক্ষে দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলছেন, সার্কুলারে স্পষ্ট ভাষায় বলা আছে, মেধাবী ও অসচ্ছল কোটায় আবেদনকারীদের মধ্য হতে মেধা ও স্কোরের ভিত্তিতে মেধাবী-অসচ্ছল কোটায় মোট আসনের ৩ গুণ শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর কেন্দ্রীয়-ভাবে মনোনয়ন প্রদান করে কলেজগুলোর মধ্যে বণ্টন করবে। মেধাবী ও অসচ্ছল কোটায় মোট আসন (৬২০৭) এর ৫ শতাংশ অর্থাৎ ৩১০ জন। সুতরাং সার্কুলার অনুযায়ী মৌখিক পরীক্ষার জন্য (৩১০x৩)= ৯৩০ জনকে মনোনীত করার কথা। তবে গত ১৬ জুন মাত্র ৩২৫ শিক্ষার্থীকে মৌখিক পরীক্ষার সুযোগ দিয়ে মুঠোফোনে খুদে বার্তা প্রদান করা হয়। যা ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের মাঝে যথেষ্ট হতাশার সৃষ্টি করেছে।

আরও পড়ুন: বেসরকারি মেডিকেলে কোটায় মনোনীতদের তথ্য যাচাই করবে কর্তৃপক্ষ

এতে মেধা ও স্কোরের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীকে মৌখিক পরীক্ষার ডাকার কথা থাকলেও এক্ষেত্রে নিয়ম ভঙ্গ করা হয়েছে। একই সাথে ৪২৯৬, ৪২৯৮, ৪৫০৫, ৫০১৯, ৫৬০৯, ৫৬৩৩, ৫৭৯৯, ৯১৫৭ মেধাক্রমের শিক্ষার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার অংশগ্রহণের প্রাপ্য অধিকার না দিয়ে ৪৪,০১১ মেধাক্রমের শিক্ষার্থীকে সুযোগ দেওয়া এবং মেধাও অসচ্ছল কোটার রেজাল্ট প্রকাশের ২ দিন পর প্রকৃত মেধাবীদের  অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকার মেসেজ পাঠানো সত্যিই প্রহসনের নামান্তর—উল্লেখ করা হয় একই বিবৃতিতে।

৪৪,০১১ মেধাক্রমধারী শিক্ষার্থীদের সাথে আমাদের কাটমার্কের পার্থক্য ১৮-২০ নম্বর, যেখানে ০.২৫ নম্বরের এর ব্যবধানে একজন শিক্ষার্থীর সরকারি মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন ভেঙ্গে খানখান হয়ে যায়। শিক্ষার্থীদের প্রতি যেন কোনো অন্যায় বা অবিচার না করা হয় সেজন্য কর্তৃপক্ষকে দ্রুত বিধি মোতাবেক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রকৃত মেধাবীদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে

সার্কুলার অনুযায়ী মেধাবী ও অসচ্ছল কোটায় মেধা ও স্কোরকে প্রাধান্য দেয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু শুধু দারিদ্র্যকে প্রাধান্য দেয়ার কারণে আমরা বৈষম্যের শিকার হয়েছি। ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে নতুন পদ্ধতি অটোমেশন চালু করা হয়। এই অটোমেশন পদ্ধতির মাধ্যমে ৪,০০০-৭,০০০ মেধাক্রমে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীকে অপেক্ষমাণ তালিকায় রেখে ৪৪,০১১ মেধাক্রমের শিক্ষার্থীকে ‘মেধাবী ও অসচ্ছল কোটায়’ মনোনীত করা হয়। যেখানে সাধারণ কোটায় এই মেধা-ধারীদের ভর্তির সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ বা নেই বললেই যৌক্তিক। সেখানে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ মেধা কোটায় মনোনীত হলেন যা সম্পূর্ণ নীতিমালা বহির্ভূত এবং এহেন কর্ম মেধাবীদের সাথে অন্যায়—বলা হয়েছে একই বিবৃতিতে।

বিগত বছর যেখানে ১০,০০০তম মেধাক্রমের বাইরের কেউ এই কোটায় মনোনীত হয়নি। তবে, কিসের বার্তা দিচ্ছে এই অটোমেশন পদ্ধতি? আদৌ কি অটোমেশনের (সয়ংক্রিয়) মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীরা তাদের ন্যায্য সুযোগ পাবে না—এমন প্রশ্ন জানিয়ে তারা বলেছেন, মেধার এই অবমূল্যায়ন মেনে নিতে আমাদের কষ্ট হচ্ছে। আমরা মানসিকভাবে অত্যন্ত বিপর্যস্ত। আমাদের স্বপ্নভঙ্গের দায়ভার কার? আমাদের যেকোনো পরিস্থিতি তথা দুর্ঘটনার দায়ভার নিতে কর্তৃপক্ষ কি প্রস্তুত? আমরা নিজেদের যোগ্য প্রমাণ করে এই অবস্থানে এসেছি বলেও জানান শিক্ষার্থীরা।

চিকিৎসক নামক মহান মানবিক পেশায় নিয়োজিত থেকে সুন্দর সমাজ গড়ার স্বপ্ন বুকে লালন করি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলছেন, সার্কুলারে উল্লেখিত ২১নং নীতিমালা অনুযায়ী মেধাকে প্রাধান্য দিয়ে ফলাফল পুনরায় নির্ধারণ করে মেধাক্রমে এগিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

প্রসঙ্গত, এবার দেশের বেসরকারি মেডিকেল ভর্তিতে দরিদ্র ও মেধাবী কোটায় শিক্ষার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে অটোমেশন (স্বয়ংক্রিয়) পদ্ধতি অনুসরণ করে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এছাড়াও এবার শিক্ষার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে পছন্দক্রম, মেধা, আর্থিক অবস্থাসহ সামগ্রিক বিষয় মূল্যায়ন করে প্রতিষ্ঠানটি। এতে মেধা তালিকায় প্রথমে থেকেও বাদ পড়েন শিক্ষার্থীরা; বিপরীতে শর্ত এবং নতুন নীতিমালার কারণে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাক পান মেধা তালিকার শেষের দিকের শিক্ষার্থীরও। এতে মেধা তালিকায় প্রথমে থেকেও মৌখিক পরীক্ষা তথা ভর্তির জন্য মনোনীতি হতে না পারায় ক্ষোভ ও হতাশা জানান শিক্ষার্থীরা।