বেসরকারি মেডিকেলে মেধাবী ও দরিদ্র কোটায় ভর্তি নিয়ে অসন্তোষ
- ইরফান এইচ সায়েম
- প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৩, ০৩:২০ PM , আপডেট: ২৫ জুন ২০২৩, ০৩:৪৯ PM
ময়মনসিংহের মেয়ে ইশরাত জাহান মিতু। বাবা বেঁচে নেই, শিক্ষক মাকে নিয়েই তার বসবাস। স্বপ্ন ছিল মেডিকেলে পড়ে মায়ের কষ্ট দূর করার পাশাপাশি দরিদ্রদের সেবা করবেন। সেই স্বপ্ন পূরণের দৌঁড়ে অনেকটা এগিয়েও গিয়েছিলেন মিতু। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। তবে আসন সীমিত হওয়ায় সরকারি মেডিকেলে পড়ার সুযোগ হয়নি। সরকারিতে না হলেও বেসরকারিতে দরিদ্র কোটায় ভর্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মিতুর সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। মেধাতালিকায় এগিয়ে থাকলেও বেসরকারি মেডিকেলে প্রথম দফায় ভর্তির এসএমএস পাননি তিনি। অথচ মিতুর চেয়ে কম নম্বর পেয়ে প্রথম দফায় মৌখিক পরীক্ষার মেসেজ পেয়েছেন অনেকে।
মিতু দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, মেধাতালিকায় এগিয়ে থাকলেও তাকে মৌখিক পরীক্ষার এসএমএস পাঠানো হয়নি। অথচ দরিদ্র কোটায় তার চেয়ে পেছনে থাকা অনেককে মৌখিক পরীক্ষার মেসেজ পাঠানো হয়েছে। শিক্ষক মা এবং নিজের স্বপ্ন পূরণে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরে কর্মকর্তাদের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
শিক্ষার্থীদের আবেদন এবং মেধাক্রমের ভিত্তিতে ভর্তিযোগ্য শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত করা হয়েছে। দরিদ্র কোটার ক্ষেত্রে নানা বিষয় পর্যালোচনা করে সুপারিশ করা হয়েছে। এবার ভর্তি প্রক্রিয়া অটোমেটিক পদ্ধতিতে করা হয়েছে। এখানে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম--স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর
শুধু মিতু নয়; মেধাক্রমে এগিয়ে থেকেও বেসরকারি মেডিকেলে মেধাবী ও দরিদ্র কোটায় ভর্তির মেসেজ পাননি অনেকেই। এই অবস্থায় বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তির অটোমেশন প্রক্রিয়া নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকরা। অবিলম্বে মেধাবী ও দরিদ্র কোটায় ভর্তির ফল পুনঃমূল্যায়নের দাবি জানিয়েছেন তারা। গত শুক্রবার মেধাবী ও দরিদ্র কোটায় ভর্তির সুযোগপ্রাপ্তদের এসএমএস পাঠানো হয়।
যদিও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর বলছে, শিক্ষার্থীদের আবেদন এবং মেধাক্রমের ভিত্তিতে ভর্তিযোগ্য শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত করা হয়েছে। দরিদ্র কোটার ক্ষেত্রে নানা বিষয় পর্যালোচনা করে সুপারিশ করা হয়েছে। এবার ভর্তি প্রক্রিয়া অটোমেটিক পদ্ধতিতে করা হয়েছে। এখানে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম।
প্রার্থীদের এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) ডা. মুজতাহিদ মুহাম্মদ হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, এবার বেশ কিছু বিষয় বিবেচনা করে আমরা নির্বাচিতদের মেসেজ পাঠিয়েছি। এ নিয়ে কোনো প্রার্থীর আপত্তি থাকলে আমাদের কাছে অভিযোগ জানাতে পারেন। অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধাতালিকায় ৪ হাজার ১০৮তম অবস্থান করেছেন বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের শিক্ষার্থী আহমেদ ইলিয়াস। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, জেলা কোটার কারণে আমি সরকারিতে ভর্তি হতে পারিনি। তাই বেসরকারি মেডিকেলে মেধাবী কোটায় আবেদন করি। তবে আমি ভর্তির জন্য মেসেজ পাইনি। অথচ মেধাতালিকায় আমার চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে এমন অনেকেই ভর্তির জন্য মেসেজ পেয়েছেন। মেধাবী কোটায় মেধাবীদের ভর্তির সুযোগ না দিলে এই কোটা বাদ দেওয়া দরকার।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আমাদের অনেকের মেধাক্রম ৫ থেকে ৭ হাজারের মধ্যে। তারা মেধাবী কোটায় আবেদন করলেও মৌখিক পরীক্ষার মেসেজ পাননি। অথচ অনেকের মেধাক্রম ৩৫ থেকে ৪০ হাজারের মধ্যে থাকলেও তারা ভর্তির এসএমএস পেয়েছেন।
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধাক্রমে ৯ হাজার ১৫৭তম অবস্থানে রয়েছেন নাটোরের গুরুদাসপুরের মেয়ে আসমাউল হুসনা। বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মেধাবী কোটায় ভর্তির আবেদন করলেও তিনি নির্বাচিত হননি। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে আসমাউল হুসনা বলেন, হাসান মাহমুদ নামে এক শিক্ষার্থী মেধাক্রম ৪৪ হাজার ১১। সে ভর্তির জন্য এসএমএস পেয়েছে। ইন্টারভিউ দিয়ে সে প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ মেডিকেল কলেজে ভর্তির সিলেক্টেড হয়েছে। এত পেছনে থেকেও সে ভর্তি হতে পারলে আমি কেন পারবো না।
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধাতালিকায় ৪ হাজার ১০৮তম অবস্থান করেছেন বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের শিক্ষার্থী আহমেদ ইলিয়াস। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, জেলা কোটার কারণে আমি সরকারিতে ভর্তি হতে পারিনি। তাই বেসরকারি মেডিকেলে মেধাবী কোটায় আবেদন করি। তবে আমি ভর্তির জন্য মেসেজ পাইনি। অথচ মেধাতালিকায় আমার চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে এমন অনেকেই ভর্তির জন্য মেসেজ পেয়েছেন। মেধাবী কোটায় মেধাবীদের ভর্তির সুযোগ না দিলে এই কোটা বাদ দেওয়া দরকার।
সার্বিক বিষয়ে জানতে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো: টিটো মিঞা এবং অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো: জামালের মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে সেগুলো বন্ধ পাওয়া যায়।