চার বছরে ১২ বার সংঘর্ষ চমেক ছাত্রলীগে, নেপথ্যে হলের ‘নিয়ন্ত্রণ’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) বিগত চার বছরে অন্তত ১২ বার সংঘর্ষে জড়িয়েছে ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ। দুই পক্ষের সংঘাতের কারণে ক্যাম্পাসে মিছিল-মিটিং, সভা-সমাবেশসহ সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়। বর্তমানে ছাত্রলীগের কমিটি নেই। কলেজ ছাত্রসংসদও নেই। তবুও ছাত্রলীগের সংঘাত-হামলা থামছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুটি পক্ষের সংঘর্ষের মূল কারণ প্রধান ছাত্রাবাসের ‘নিয়ন্ত্রণ’ নিয়ে। কমিটি না থাকলেও চমেক ছাত্রলীগে এখন দুটি পক্ষ সক্রিয়। এতে এক পক্ষ নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের ও অপর পক্ষ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেন।
এর মধ্যে ছাত্রাবাসে ৭৫ শতাংশ আসন নাছিরপন্থীরা নিয়ন্ত্রণ করেন বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। এখন মহিবুলপন্থীরাও ছাত্রাবাসে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে চান। ফলে সংঘাত হচ্ছে। আগে নিজেদের মধ্যে মারামারি হলেও সর্বশেষ এবার শিকার হয়েছেন চার সাধারণ ছাত্র। রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয় এমন ছাত্রদের নির্যাতনকে মূলত কক্ষ ‘দখলের’ তৎপরতা হিসেবে দেখছেন সাধারণ ছাত্ররা।
আরও পড়ুন: আকিব থেকে সাকিব: চমেকে দুর্ধর্ষ ছাত্রলীগ
চমেকে এখন তিনটি ছাত্রাবাস। এর মধ্যে বেশি আসনেরটি হচ্ছে চট্টগ্রাম নগরের চটেশ্বরী সড়কের প্রধান ছাত্রাবাস। ৫০০ আসনের এই ছাত্রাবাসে কক্ষ রয়েছে অন্তত ১৪০টি। এতে আসন পান দ্বিতীয় বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষের ছাত্ররা। বাকি দুটি নাছিরাবাদ এলাকায় অবস্থিত লুৎফুস সালাম ও হাফিজুল্লাহ বশির ছাত্রাবাস। দুটি ছাত্রাবাসে ৪০টি কক্ষের মধ্যে ৮০টি আসন বরাদ্দ পান প্রথম বর্ষের ছাত্ররা।
দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দেখা গেছে, ২০২০ সালেই সাতবার সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষ। এর মধ্যে ১২ জুলাই দুই পক্ষের মারামারিতে ১৩ জন আহত হন। ২০২১ সালের ২৯ অক্টোবর ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মারামারির ঘটনায় মাহাদি জে আকিব নামে মহিবুলপন্থীর এক কর্মী গুরুতর আহত হন। তার মাথার খুলির হাড় ভেঙে গিয়েছিল।
আরও পড়ুন: ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নে ঢাবি রেখে চমেকে ভর্তি হন আকিব
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চমেক ক্যাম্পাস বন্ধ ছিল ২৭ দিন। পরে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। এই ঘটনার আগেও ২০২১ সালের শুরুর দিকে দুই দফা সংঘর্ষে জড়িয়ে ছিল পক্ষ দুটি। চলতি বছরের গত ১ ফেব্রুয়ারি দুই পক্ষের হাতাহাতি ও ভাঙচুরের পর নগরের নাছিরাবাদে অবস্থিত চমেক প্রথম বর্ষের দুটি ছাত্রাবাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এটি এখনো বন্ধ।
সর্বশেষ গত বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) চতুর্থ বর্ষের চার ছাত্র সাকিব হোসেন, জাহিদ হোসেন, আবু রাইয়াত ও মোবাশ্বির হোসেনকে প্রধান ছাত্রাবাসের একটি কক্ষে নিয়ে পেটানো হয়। তাদের মধ্যে দুজনই চমেক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা নিয়েছেন। আইসিইউর চিকিৎসা শেষে তাদের সাধারণ বেডে স্থানান্তর করা হয়।
চমেক ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডা. আল আমিন ইসলাম শিমুল বলেন, একসময় আমরা ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড নিয়ে গর্ববোধ করতাম। কিন্তু এরই মধ্যে যেসব ঘটনা ঘটছে তা লজ্জাজনক। এর দায়ভার নীতিনির্ধারকরা এড়াতে পারেন না। ক্যাম্পাসের পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। ছাত্রলীগের নামে যারা অপরাধ করছে তাদের লাগাম টেনে ধরা দরকার।
আরও পড়ুন: ছাত্রলীগের নির্যাতনে আইসিইউতে থাকা সাকিবের টিউশনির টাকায় চলত পরিবার
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সাহেনা আক্তার বলেন, কলেজ শান্ত ছিল। হঠাৎ করে ওই ঘটনার (চার ছাত্রকে নির্যাতন) পর কলেজের অভিযোগ নিষ্পত্তি কমিটি বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়ে তদন্ত করছে। প্রায় দুই বছর আগের এক ছাত্রের ওপর হামলার ঘটনাসহ তার আগেরও একাধিক ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। কিন্তু এরপর আবার কেন এই ঘটনা ঘটল তা আমরা তদন্ত করছি।