হাইকোর্টে রিট করবে এসএসসি-১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা
দেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির আবেদন আগামী রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হবে। বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের একটি সূত্র দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে এসব তথ্য জানিয়েছে। এদিকে, হাইকোর্টে রিট করার প্রস্তুতি নিচ্ছে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ হারানো এসএসসি-১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। আগামী সপ্তাহে তারা রিট করতে পারে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মেডিকেল কলেজে ভর্তিতে এবার নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করেছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। গত ৩১ জানুয়ারি প্রকাশিত ওই নীতিমালার কারণে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না ২০১৮ সালে এসএসসি পাশ করা শিক্ষার্থীরা।
নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, আবেদনকারীকে ২০২২ অথবা ২০২১ সালে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে এবং এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পূর্ববর্তী দুই শিক্ষাবর্ষের মধ্যে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। এই নীতিমালা বাতিলের দাবি জানিয়ে ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে এসএসসি-১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় উচ্চ আদালতে রিট করার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।
আরও পড়ুন : মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ চান এসএসসি-১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা
শিক্ষার্থীরা জানায়, পূর্বে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার তিন শিক্ষাবর্ষ আগে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় আবেদন করা যেত। এ কারণে তারা দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুতি নিয়ে আসছে। গত ৩১ জানুয়ারি স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর নতুন নীতিমালা করায় তারা মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।
এ বিষয়ে মেডিকেল কলেজে ভর্তিচ্ছু ২০১৮ সালে এসএসসি পাশ করা ইশরাত জাহান বলেন, গত ৩১ জানুয়ারি স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর নতুন নীতিমালা প্রকাশের মাধ্যমে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে। এই নীতিমালা বাতিলের দাবিতে গত সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) আমরা স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর স্মারকলিপি জমা দিয়েছি। কিন্তু স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে আমরা এখন পর্যন্ত কোনো সদুত্তর পাইনি। আমাদের দাবি উপেক্ষা করে এরইমধ্যে মেডিকেল ভর্তি আবেদনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।
মাঝহারুল ইসলাম নামের এসএসসি-১৮ ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী বলেন,আমরা ২০১৮ সালে এসএসসি এবং ২০২১ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছি। কোভিড-১৯ এর মহামারীতে যথাযথ প্রস্তুতির অভাবে ও বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যার কারণে অনেকেই মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে ব্যর্থ হই। তাছাড়া ২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে অটোপাস দেওয়া হয়। সাবজেক্ট ম্যাপিং এর কারণে অনেকের ফলাফল খারাপ হয়। পরবর্তীতে ২০২১ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পাই। একই বছরে আমরা ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি।
কিন্তু প্রথমবার আমরা সরকারি মেডিকেল কলেজে চান্স পেতে ব্যর্থ হই। গত বছরের নীতিমালা (এইচএসসি এর পূর্ববর্তী শিক্ষাবর্ষের মধ্যে এসএসসি) অনুযায়ী ২য় বার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়া যাবে এই নীতিমালাকে লক্ষ্য রেখে আমরা দ্বিতীয়বারের জন্য মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করি এবং অনেকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তিযোগ্য হয়েও ভর্তি হয়নি যেহেতু ২য় বার (বিগত নীতিমালা অনুসারে) ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ আছে। এমনকি আমরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোথাও ভর্তি হইনি। এবছর মেডিকেলে ভর্তি হতে না পারলে আমরা উচ্চ শিক্ষার জন্য আর কোনো মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাব না।
আরও পড়ুন: মেডিকেলে ভর্তির আবেদন শুরু রোববার
অনামিকা নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, গতবছর প্রকাশিত নীতিমালায় যেহেতু কোথাও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি যে এই নিয়ম শুধু গত বছরের জন্যই প্রযোজ্য, তাই আমরা অন্য কোথাও ভর্তি না হয়ে নিশ্চিন্তে দ্বিতীয়বার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকি। পরীক্ষার ঠিক আগ মুহূর্তে জানতে পারলাম এসএসসি-২০১৮ এবং এইচএসসি-২০২১ ব্যাচকে ২য় বার পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হবে না। এখবর শুনে আমার মতো হাজারো শিক্ষার্থীর মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। আমাদের অভিভাবকেরা চরম দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এমতাবস্থায় যদি দ্বিতীয়বার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ না দেওয়া হয়, তাহলে আমাদের দীর্ঘ ১২ বছরের পরিশ্রম ও চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা নতুন নীতিমালা বাতিলপূর্বক আমাদের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগদানের জন্য স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর স্মারকলিপি জমা দিয়েছি। এরপর সংশ্লিষ্ট আরও অনেকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। কিন্তু তারা কেউই আমাদের দাবি মানেননি। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামী কয়েকদিনের মধ্যে হাইকোর্টে রিট করব। ইতোমধ্যে আইনজীবীর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো: জামাল বলেন, শিক্ষার্থীদের এতো অস্থির হওয়ার কিছু নাই। আগামী শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বা শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। সেখানে স্পষ্টভাবে সাল উল্লেখ করে বলা হবে কারা ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে আর কারা পাবে না।