মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ, সামিয়া খুশি হলেও আনন্দ নেই পরিবারের

সামিয়া আক্তার ও তার পরিবার
সামিয়া আক্তার ও তার পরিবার  © সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেলেন এক প্রতিবন্ধী হকারের মেয়ে সামিয়া আক্তার। দরিদ্র ঘরে জন্ম নিয়েও অদম্য আগ্রহ ও স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের সহযোগিতায় এ পর্যন্ত পড়াশোনা করে মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। কিন্তু এবার স্বপ্ন পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তার অভাব ও দারিদ্রতা।

জানা যায়, উপজেলার মনকাশাইর গ্রামে ছোট্ট একটি দোচালা টিনের ঘরে সামিয়াদের বসবাস। বাকপ্রতিবন্ধী বাবা সেলিম মিয়া পেশায় একজন হকার। গ্রামের স্কুলমাঠে বাচ্চাদের খেলনা বিক্রি করেন। সেলিমের এক ছেলে ও এক মেয়ে। সামান্য আয় দিয়েই কোনো রকমে চলে সংসার। দারিদ্রতায় জর্জরিত সেলিম ছেলেকেও হাফেজ বানিয়েছেন। মেয়ের পড়াশোনায় আগ্রহ দেখে শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় মেয়েকে শতকষ্টে খেয়ে না খেয়ে কোনো রকমে খরচ চালিয়েছেন। সেই মেয়ে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে, যদি কোনো হৃদয়বান সামর্থ্যবান এগিয়ে আসেন তার সহায়তায়।

সামিয়া পিএসসি, জেসএসসিতে বৃত্তি ও এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত। মেধাবী হওয়ায় শিক্ষকরা তাকে বিনামূল্যে প্রাইভেট পড়াতেন। পরে কসবা মহিলা ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসিতেও ভালো ফলাফল করায় কলেজ শিক্ষকরা তাকে মেডিকেলে আবেদনের পরামর্শ দেন। প্রথমে অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকলেও গত ১৫ সেপ্টেম্বর নীলফামারী মেডিকেল কলেজ থেকে ভর্তির সুযোগ দিয়ে সামিয়াকে মেসেজ পাঠায় কর্তৃপক্ষ। মেসেজ পেয়ে সামিয়া খুশি হলেও দারিদ্রতার কারণে আনন্দ নেই পরিবারে।

সামিয়া বলেন, নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগ নেওয়ার পর সহপাঠী ও গ্রামের অনেকের তিরস্কার সইতে হয়েছে আমাকে। নীরবে কেঁদেছি। তবু আত্মবিশ্বাস ছিল আমি পারব। পেরেছি। কিন্তু এখন দরিদ্র মা-বাবার পক্ষে আমাকে ভর্তি করানো সম্ভব নয় । আমি আমার এলাকার সংসদ সদস্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মহোদয়ের সহযোগিতা চাই। আমি একজন ডাক্তার হয়ে আমার পরিবার ও মানুষের সেবা করতে চাই।র্

আরও পড়ুন: মেয়ে ফুটবল খেলুক না চাওয়া বাবা আজ গর্বিত

স্থানীয় বাবুল মিয়া, নাজমুল হোসেন, শওকত আহমেদ ও শাহআলম বলেন, আমাদের গ্রামে এই প্রথম কোনো মেয়ে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এটা আমাদের জন্য গর্বের। আমরা গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে আইনমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করছি, তিনি যেন দরিদ্র পরিবারের এই মেয়েটির মেডিকেলে ভর্তিসহ যাবতীয় ব্যবস্থা করে দেন।

স্থানীয় মনকাশাইর-ধর্মপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা লুৎফা বেগম বলেন, এই স্কুলে পড়ার সময়ও মেয়েটি অসম্ভব মেধাবী ছিল। পরিবারের দারিদ্রতা তাকে দমাতে পারেনি। মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে শুনে আমরা খুব খুশি। আমরা তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি।

সামিয়ার মা সেলিনা আক্তার বলেন, শিক্ষকদের সহায়তায় এই পর্যন্ত মেয়েকে পড়াতে পেরেছি।  আমার মেয়টির স্বপ্ন পূরণে আইনমন্ত্রীসহ সবার সহযোগিতা চাই। বাকপ্রতিবন্ধী বাবা সেলিম মিয়া কথা বলতে না পারলেও চোখের পানিতে একমাত্র মেয়ের স্বপ্ন পূরণে সবার সহযোগিতা কামনা করছেন, সেটা বোঝা যাচ্ছে দেখে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদ উল আলম বলেন, শুনে অবাক হয়েছি। অভাব অনটনের মধ্যেও মেয়েটির অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকায় সে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সামিয়ার ভর্তির বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস  দিয়েছেন ইউএনও। একইসঙ্গে বিষয়টি এলাকার সংসদ সদস্য আইনমন্ত্রীকে বিষয়টি অবহিত করার আশ্বাস দেন তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ